মার্কিন এবং ন্যাটো জোট যেভাবে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাতে একা ইউক্রেনে হামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। সেই সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার তিনি মন্ত্রীদের নিয়ে ক্রেমলিনের ভবনে বৈঠক ডেকেছিলেন। বৈঠকে বেশিরভাগ মন্ত্রীই যুদ্ধের বদলে ইউক্রেনের বিদ্রোহীদের স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
যার মাধ্যমে দোনেত্স্ককে কেন্দ্র করে রাশিয়া যে এক 'বাফার স্টেট' তৈরির সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে, তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর, নিজেরা সরাসরি হামলা না-চালিয়ে, এই বাফার স্টেট-কে ব্যবহার করে ইউক্রেনে অশান্তি জিইয়ে রাখতে চায় মস্কো। রুশ প্রেসিডেন্টের বৈঠকে বেশিরভাগ মন্ত্রীদের বক্তব্যের ভিত্তিতে এমনটাই ধারণা আন্তর্জাতিক মহলের।
রাশিয়ার মন্ত্রীদের অবশ্য দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এমন সিদ্ধান্তই চাইছে। কারণ, সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার সময়ে হওয়া বিভিন্ন চুক্তি এবং আশ্বাসের উলটোপথে হেঁটে ইউক্রেনকে ন্য়াটোভুক্ত করতে চাইছে মার্কিন এবং ন্য়াটোর জোট। তাতে রাশিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এই অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালত থেকে বিভিন্নস্তরে বিষয়টি তুলে ধরারও প্রস্তাব বৈঠকে দিয়েছেন মন্ত্রীরা। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন, বৈঠকে যতটা বলেছেন, তার চেয়ে বেশি মন্ত্রীদের কথা শুনেছেন। তিনি এই সব প্রস্তাবের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে বৈঠকে জানান।
এর আগে সোমবার সকালের দিকে আলোচনার যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ করে বিশ্বযুদ্ধের পথে আরও এক পা বাড়ানোর দিকে এগিয়েছিল রাশিয়া। সোমবার রুশ নিরাপত্তা বাহিনী (এফএসবি) জানিয়েছে, ইউক্রেন তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। রসটভ এলাকায় তাদের সীমান্ত ছাউনি ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেন থেকে উড়ে আসা গোলা। তবে, এই হামলায় কেউ হতাহত হয়নি।
যদিও, হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে ইউক্রেন জানিয়েছে, এটা সম্পূর্ণই মিথ্যে অভিযোগ। রাশিয়া আসলে হামলার কারণ খুঁজছে। সেই কারণেই মিথ্যে অভিযোগ করছে। এই ধরনের মিথ্যে অভিযোগ তোলা অবশ্য মস্কোর কাছে নতুন না। কারণ, সীমান্ত থেকে সেনা না-সরিয়েই ক্রেমলিন বাকি বিশ্বের কাছে দাবি করেছে যে তারা সেনা সরাচ্ছে। এই মিথ্যে অভিযোগের পাশাপাশি, সীমান্তে সেনার সংখ্যা বাড়িয়ে মস্কো আসলে পুরোদস্তুর যুদ্ধের পথে যেতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেছে কিয়েভ।
তবে এখনও বিষয়টিকে কূটনৈতিকস্তরেই রাখতে চায় আমেরিকা। ইউক্রেনে হামলা না-চালালে রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে অসুবিধা নেই। যুদ্ধভূমি থেকে রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে এমনই শর্ত দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈঠক করতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। তবে, শর্ত একটাই- ইউক্রেনকে আক্রমণ করা যাবে না। শুধু তাই না। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক করতে পারেন মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিনকেন। তবে, এই বৈঠকেরও শর্ত একই। ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারবে না রাশিয়া।
ইউক্রেনের তিন সীমান্তে রাশিয়ার বিপুল সৈন্য মোতায়েন শুধু ইউরোপই না, গোটা বিশ্বকেই বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায় ফেলেছে। দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক অচলাবস্থার মুখে। যে অচলাবস্থা ভাঙতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ বড় ভূমিকা নিতে চেষ্টা করছেন। তিনিই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বৈঠকে রাজি করিয়েছেন। আবার পুতিনের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। আপাতত যুদ্ধ না-করার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্টকে।
হোয়াইট হাউসের বার্তা সচিব জেন পিসাকি জানিয়েছেন, মার্কিন প্রশাসন একটা ব্যাপার খুব স্পষ্ট করে দিয়েছে। তা হল, যতক্ষণ না-হামলা হচ্ছে, ততক্ষণ আমেরিকা কূটনৈতিক প্রক্রিয়াই অনুসরণ করবে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাই বলুক, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে নাগরিকদের রাখতে নারাজ ভারত। বিদেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দেশে ফিরে আসতে বলেছে। তার পাশাপাশি, পূর্ব ইউরোপের এই দেশ থেকে ভারতীয় পড়ুয়াদেরও অবিলম্বে ফিরে আসার অনুরোধ করেছে।
আরও পড়ুন- আনিস খান-ইস্যুতে ক্ষোভপ্রকাশ পরমব্রত, কৌশিক, অরিন্দমদের
কিয়েভের ভারতীয় দূতাবাস, বিদেশ মন্ত্রকের এই নির্দেশ ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের ভারতীয় নাগরিকদের জানিয়েও দিয়েছে। এই নিয়ে সাত দিনের মধ্যে একই নির্দেশ দু'বার দিল বিদেশ মন্ত্রক। তবে, পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে, দ্বিতীয়বারে এই নির্দেশটা বেশ তত্পরতার সঙ্গে পালন করতে বলেছে বিদেশ মন্ত্রক। সাউথ ব্লক যে খুব একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নয়। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা চাইলেও ক্রেমলিনে পুতিনের মুখপাত্র পেসকভ বোঝাতে চেয়েছেন, রাশিয়া এখনও বৈঠক নিয়ে ধন্দে আছে। তাঁর কথা অনুযায়ী, আলোচনার ব্যাপারটা এখনও একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।
Read story in English