যুদ্ধের বোধ নেই। ছেলে, বুড়ো, মহিলা, অসহায়- কোনও বাছবিচার নেই। ইউক্রেনবাসী এখন জীবনের যন্ত্রণা দিয়ে তা পদে পদে উপলব্ধি করছেন। এই যেমন রবিবার বহু মানুষের চোখের সামনে এক শিল্পকলার স্কুলে আছড়ে পড়ল রাশিয়ার গোলা। গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাশিয়া ইউক্রেনে লাগাতার হামলা চালাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে ইউক্রেনের বিভিন্ন লোকালয়ে। তার জেরে বহু বাড়ি আর বসবাসের উপযুক্ত নয়। তাই গোলাবর্ষণ থেকে বাঁচতে এই স্কুলবাড়িতে ঘরহারা স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বাড়িটা বেশ শক্তপোক্ত। এতদিন গোলাবর্ষণের মধ্যেও অক্ষত ছিল। বাসিন্দাদের ভরসা ছিল, স্কুলে অন্তত হামলা চালাবে না রাশিয়ার সেনাবাহিনী। কিন্তু, সেই ভুল রবিবার ভাঙিয়ে দিল। তীব্র গতিতে বিকট শব্দে এই স্কুল বাড়িতেই আছড়ে পড়ল রাশিয়ার সেনাবাহিনীর ছোড়া গোলা। এতই সেই গোলার ক্ষমতা যে গোটা স্কুলবাড়িটাই ধসে গেছে। যাঁরা সেখানে বাঁচার জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই ঘর হারানো মানুষজন চাপা পড়েছেন ধ্বংসস্তূপের নীচে। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত তাঁদের উদ্ধার করা যায়নি।
যুদ্ধ যেন মানুষের বিবেকও নষ্ট করে দেয়। সেখানে কোনও আলাদা কণ্ঠস্বর চলে না। রাশিয়া আগেই, ঠিক যুদ্ধ শুরুর পরপরই তাদের দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোকে সরকারের হাতের পুতুল হতে বাধ্য করেছে। এবার বাকি ছিল ইউক্রেন। সেখানেও এবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কায়দায় গণমাধ্যমের জন্য 'মার্শাল ল' বা সামরিক আইন জারি করলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। যার ফলে এবার থেকে ইউক্রেনের বেসরকারি সংবাদমাধ্যমগুলোও কার্যত সরকারি সংবাদমাধ্যম হয়েই কাজ করা শুরু করেছে। সরকারি সংবাদমাধ্যম যা দেখাচ্ছে, তারাও তাই দেখাচ্ছে।
ইউক্রেনের যে সব অঞ্চল যুদ্ধবিধ্বস্ত, সেখানে তো টেলিভিশনের প্রশ্ন নেই। যে সব অঞ্চলে দিন থেকে রাত, গোলাবারুদ আছড়ে পড়ছে না, স্বভাবত সেই সব অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এই নির্দেশ জারি করা হয়েছে। যাতে বাকি ইউক্রেনবাসীর কাছে জেলেনস্কির লড়াইয়ের পক্ষেই বার্তা পৌঁছয়। যা বুঝিয়ে দিল, প্রতিটি দিন আসছে, আর আরও বেশি করে স্বাধীনতা হারাচ্ছেন ইউক্রেনবাসী। রাশিয়া দখল করতে পারুক ছাই না-পারুক, ইউক্রেনে শিকলের ফাঁস আরও কঠোর হচ্ছে।
Read story in English