যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেন (Ukraine)। রুশ কামান আর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তছনছ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ(Kiev)। কিয়েভের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র হামলা ও বিস্ফোরণের খবর প্রতিনিয়ত উঠে আসছে। কিয়েভের পাশাপাশি দক্ষিণ, পূর্ব এবং উত্তরের প্রধান ইউক্রেনীয় শহরগুলিতেও চলছে যুদ্ধ।
ইউক্রেন দাবি করেছে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা যুদ্ধে সেদেশের ২৮ জন শিশু নিহত হয়েছে এবং ৮৪০ জন শিশু আহত হয়েছে। এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিবৃতি দিয়েছে ইউক্রেন সরকার। সেই সঙ্গে দাবি করা হয়েছে কিয়েভে প্রায় ৩০ লক্ষ সাধারণ মানুষ যুদ্ধে আতঙ্কের পরিবেশে বাস করছেন। চলমান সামরিক অভিযানে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি। এদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রুশ আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেন। একের পর এক হামলায় তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়েছে বহুতল। হামলা চালানো হয়েছে টিভি টাওয়ারে ফলে দেশ জুড়ে বির্পযস্ত টেলিভিশন পরিষেবাও।
এদিকে রুশ হামলা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে খোদ রাশিয়ার অভ্যন্তরেও। ইউক্রেনে হামলা নিয়ে সংবাদ সম্প্রচারের জেরে ঝাঁপ বন্ধ করতে বাধ্য হল এক রুশ সংবাদমাধ্যম। এটাই পুতিন সরকারের সাম্প্রতিকতম নিষেধাজ্ঞা। এর আগে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম থেকে হামলা, যুদ্ধ-র মতো বিভিন্ন শব্দ গত কয়েকদিন আগে পুরোপুরি উঠে গেছে।
টুইটার, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মও রাশিয়ায় নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার বন্ধ হল ‘ইকো মস্কভি’ বা মস্কোর প্রতিধ্বনি নামে ওই রেডিও স্টেশন। সোভিয়েত পরবর্তী অধ্যায়ে তৈরি হওয়া এই সংবাদমাধ্যম মস্কোর স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এবার তাদের এই স্বাধীনতা এবং একইসঙ্গে চলার অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল ইউক্রেন নিয়ে সংবাদ সম্প্রচারের জেরে।
এর আগেই রুশ সংবাদমাধ্যমকে কেবলমাত্র মস্কোর সদর দফতর ক্রেমলিনের আধিকারিকদের দেওয়া তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তারপরও ‘ইকো মস্কভি’র যা হাল হল, তা দেখে রীতিমতো শঙ্কিত রাশিয়ার অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো। কবে, তাদেরও ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায়, এখন তারা সেই শঙ্কায় ভুগছে।
সেই সঙ্গে রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে পড়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন। যা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান মাত্র সাতদিনের। ২০২০ সালের শেষে ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৪০ লক্ষ। রাষ্ট্র সংঘের ভবিষ্যৎবাণী এইরকম অবস্থা চলতে থাকলে ৪০ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ ইউক্রেন ছাড়তে পারেন।রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি টুইটারে লিখেছেন “মাত্র সাত দিনে ইউক্রেন থেকে প্রতিবেশী দেশগুলিতে এক মিলিয়ন শরণার্থীর প্রস্থান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।”
সব মিলিয়ে গত তিন দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার হামলার সংখ্যা বেড়েছে। ইউক্রেনের খারকিভ, চেরনিহিভ এবং মারিউপোল এখনও ইউক্রেনের হাতেই আছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এমনটাই দাবি করেছে ব্রিটেন। যুদ্ধে রাশিয়ারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে, এতদিন একথা স্বীকার করেনি মস্কো। কিন্তু, গত সপ্তাহে তারা জানিয়েছে, হামলা চালাতে গিয়ে প্রায় ৫০০ রুশ জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ১,৬০০ রুশ সেনা।
কিন্তু, ইউক্রেনের কতটা ক্ষতি এই যুদ্ধে হয়েছে? মানে, কতজন ইউক্রেন সেনার প্রাণ গিয়েছে? তা নিয়ে মুখ না-খুললেও ইউক্রেনের দাবি, তাদের অন্তত ২,০০০ সাধারণ নাগরিক রাশিয়ার হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।