বৃহস্পতিবারই দু'দিনের সফরে ভারতে আসছে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফে বুধবার এই ঘোষণা করা হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে পুতিনের মন্ত্রীর দিল্লিতে আসার বিষয়টি ভূরাজনীতির প্রেক্ষাপটে বেশ তাৎপর্যবাহী।
এ দিনই চিনে গিয়েছেন লাভরভ। আগামিকাল বেজিং থেকে সরাসরি দিল্লিতে আসবেন তিনি। দিন কয়েক আগেই ভারত সফরে এসেছিলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। তাঁর সেই সফরের পর লাভরভের ভারত সফর নিঃসন্দেহে কৌতুহল বাড়াচ্ছে।
এদিকে ৩০ ও ৩১ মার্চই ভারত সফরে রয়েছেন ব্রিটিশ বিদেশ সচিব লিজ ট্রাস। এ দিনই দিল্লিতে আসার কথা জার্মান বিদেশ ও নিরাপত্তা নীতি উপদেষ্টা জেনস প্লটনারের। এই দুই দেশই ইুক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে মস্কোর বিরুদ্ধে।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে দুনিয়া আজ দু'ভাগে বিভক্ত। যদিও ভূ-রাজনীতিতে দিল্লি জোয় নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে তৎপর। তবে বিশেজ্ঞদের মতে, নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে গেলে ভারতের পক্ষে সরাসরি রাশিয়ার বিরোধ করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে, ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই গোটা বিশ্বে কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ। যদিও চিন, উত্তর কোরিয়া, পাকিস্তানের মতো দেশগুলি তার পাশে রয়েছে। যাদের সঙ্গে বাকি বিশ্বের সম্পর্ক আবার মোটেও মধুর নয়।
তাই রাশিয়াকে চটাতে না চাইলেও সরাসরি রাশিয়ার বন্ধু হিসেবে চিন, পাকিস্তান কিংবা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এক পঙক্তিতে নিজেকে দেখতে চাইবে না ভারত। এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়াকে নিয়ে রাষ্ট্রসংঘে বেশ কিছু প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। সেই সব ক্ষেত্রে ভোটাভুটি এড়িয়ে নিরপেক্ষ থাকার বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। যা আবার আমেরিকা ও সহযোগীরা খুব একটা ভালোভাবে নেয়নি। এই ঘটনাক্রমের মধ্যেই প্রথম চিনের বিদেশ মন্ত্রী এবং তারপর রাশিয়ার বিদেশ ভারত সফরে এলে, আন্তর্জাতিক মহলে তার একটা প্রভাব পড়বেই বলে মত কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের।
ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ভারতের উপর এখনই কোনও বিধিনিষেধ চাপানোর কথা ভাবছেন না তাঁরা। তবে, ভারত এখনও পর্যন্ত খোলাখুলিভাবে রাশিয়ার বিরোধ করেনি। ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়াকে নিয়ে ভারতের অবস্থানে নজদর রেখেছে গোটা বিশ্ব।
অন্যদিকে, আমেরিকা যখন রাশিয়ার সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাতিলের পক্ষে, ঠিক তখনই মস্কোর কাছ থেকে কম জ্বালানি কেনার প্রস্তাব লুফে নিয়ে নয়াদিল্লি। দিল্লির এই পদক্ষেপে মোটেই খুশি নয় ওয়াশিংটন। অন্যদিকে ভারতের বার্তা, দেশের স্বার্থ সবার আগে। তার জন্য প্রয়োজনে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করতেও আপত্তি নেই নয়াদিল্লির। আর এক্ষেত্রে ভারত যে আমেরিকার দাদাগিরি মানবে না সেটাও ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছে।
Read in English