রুশ হামলা ইউক্রেনের শহরে বহুতলগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ নিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে পালাতে বাধ্য করেছে। তবে কিছু সামরিক বিশ্লেষকের দাবি, পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ হতে পারত। কিন্তু, পুতিন সংযম দেখানোয় সেই অতি খারাপটা ঘটেনি। কী কী করতে পারতেন পুতিন, যেটা তিনি করেননি? ইউরোপ এবং আমেরিকার অস্ত্রপ্রবাহ আটকাতে আক্রমণাত্মকভাবে ইউক্রেনের রেলপথ, রাস্তা এবং সেতুর দখল করতে পারতেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নেতাদের কিয়েভে আসা আটকাতে কিয়েভের আশপাশে বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা চালাতে পারতেন। সাইবার আক্রমণ ঘটাতে পারতেন। নাশকতা ঘটাতে পারতেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জ্বালানি রফতানি বন্ধ করে দিয়ে সেখানকার যন্ত্রণা আরও কয়েকগুণ বাড়িতে তুলতে পারতেন।
এর কারণ কী! সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, এর অন্যতম কারণ হতে পারে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অযোগ্যতা। হামলার পরবর্তী সপ্তাহগুলোয় প্রমাণিত হয়েছে, যতটা মনে করা হচ্ছিল, রাশিয়ার বাহিনী ততটা পারদর্শী নয়। তবে, আমেরিকা ও ইউরোপের সেনাকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, পরবর্তী সময়ে ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থান দেখে মনে হয়েছে, তিনি বেশ রক্ষণাত্মক। আর, সেই কারণেই সতর্কতামূলক অবস্থান নিচ্ছেন। দেখা গিয়েছে, পূর্ব ইউরোপে পুতিনের সৈন্যরা ধীর গতিতে আক্রমণ চালাচ্ছেন। ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময়ও দেখা গিয়েছে, পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গী যথেষ্ট সংযত। ন্যাটোর সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ানোর ব্যাপারেও তিনি সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। এমনটাই মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
আরও পড়ুন- আপাত শান্তির ভরসায় যুদ্ধের চিহ্ন নিয়েই ছন্দে ফেরার চেষ্টায় কিয়েভ
সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুতিনের এই সংযম রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও ধরা পড়েছে। সেখানে রাশিয়ার লড়াইকে ন্যাটোর বিরুদ্ধে অস্তিত্বের লড়াই বলে দাবি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা হয়েছে। সবকিছুর মূলে প্রশ্ন হল, যুদ্ধ যত বাড়বে পুতিন যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করবেন কি না, অথবা যুদ্ধকে আরও তীব্র করবেন কি না। এক্ষেত্রে সামরিক বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন, ৯ মে পুতিনের ভাষণের ওপর। ওই দিন রাশিয়ার বিজয় দিবস। ওই দিন ঐতিহ্য মেনেই পুতিন নাৎসি জার্মানির ওপর সোভিয়েতের বিজয় নিয়ে বক্তৃতা দেবেন। একটি কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণ করবেন।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস গত সপ্তাহে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে পুতিন তাঁর এই ভাষণটি যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং রাশিয়ান জনগণকে গণসংহতির জন্য উদ্বুদ্ধ করতে ব্যবহার করবেন। তবে, এখনও পর্যন্ত পুতিনের কাজকর্মে তেমন কিছু চোখে পড়ছে না সামরিক বিশেষজ্ঞদের। কারণ, পুতিন ইউক্রেনের দিকে আরও সৈন্য পাঠানোয় এখনও পর্যন্ত জোর দেননি। ফলে, পুতিন বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকটা সংযত বলেই মনে করছেন ইউরোপ এবং আমেরিকার সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
Read story in English