Advertisment

"সব শেষ! ধুলোয় মিশে গেল আমার অফিস", গাজায় বহুতল ধ্বংসের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সাংবাদিকের

মার্কিন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এপি এবং কাতারের আল-জাজিরা সংবাদসংস্থার অফিসে হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

শনিবারই হামাসের ঘাঁটি সন্দেহে গাজা শহরে ওই বহুতলটি গুঁড়িয়ে দেয় ইজরায়েলি সেনা। সেই বহুতলে এপি এবং আল-জাজিরা সংবাদসংস্থার অফিস ছিল।

শনিবার ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১.৫৫। গাজা শহরে তখন অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের অফিসে ঘুমে ঢুলছিলেন সাংবাদিক। ২০০৬ সাল থেকে আল জারা বহুতলে দুটি তলা নিয়ে ছিল এপি-র অফিস। এই মাসের শুরুতে ইজরায়েল-হামাসের সংঘর্ষ শুরু পর থেকে দুপুরের এই সময়টা নিউজ ব্যুরোর অফিসে ঘুমান তিনি। তারপর সারারাত ধরে কাজ করেন তিনি। রাতের দিকেই দুই পক্ষের সংঘর্ষ তীব্র হয়। তখন খবর দ্রুত আপডেট করতে হয়।

Advertisment

"হঠাৎ আমার সহকর্মী আমাকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে বলল, পালাও পালাও, বিল্ডিংয়ে হামলা হবে। দেখলাম, মাথায় হেলমেট পরে ছুটে পালিয়ে গেল সে। কিছু বুঝতে পারছিলাম না। পরে জানলাম, ইজরায়েলি সেনা আমাদের বহুতলে হামলা চালাবে। তাই আগে আগে অফিসকে সতর্ক করেছে। অফিস খালি করার নির্দেশ দিয়েছে। মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে আমার ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন নিয়ে দ্রুত বেরোতে গিয়ে নিজের কাজের জায়গাটা একবার দেখলাম। কত বছর ধরে এখানে বসে কাজ করেছি। সামনে রয়েছে পরিবারের ছবি। আমার মেয়ের দেওয়া কফি মাগ, অফিসে ৫ বছর কাজ করার সার্টিফিকেট। এসব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে! আমার দ্বিতীয় বাড়ি। ঘড়িতে তখন দুটো বাজে। এতদিনের পরিশ্রমের, ভাল লাগার জায়গা ছেড়ে, পালিয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ এয়ার স্ট্রাইকে গুঁড়িয়ে গেল সেই বিল্ডিং। চোখের সামনে তখন শুধু ধ্বংসস্তূপ। সব শেষ! ধুলোয় মিশে গেল আমার অফিস।"

শনিবারই হামাসের ঘাঁটি সন্দেহে গাজা শহরে ওই বহুতলটি গুঁড়িয়ে দেয় ইজরায়েলি সেনা। সেই বহুতলে এপি এবং আল-জাজিরা সংবাদসংস্থার অফিস ছিল। গতকালের সেই ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন এপি-র সাংবাদিক। তিনি বলেছেন, গত শুক্রবার উত্তর গাজায় তাঁর পরিবারের খামার নষ্ট করে দিয়েছে ইজরায়েলি সেনা। আর এবার তাঁর অফিসও ধ্বংস হয়ে গেল। সোমবার থেকে এই সংঘর্ষে ১৪৫ জন প্যালেস্তানীয় নিহত হয়েছেন। হামাস যখন পাল্টা ইজরায়েল লক্ষ্য করে রকেট ছুঁড়তে শুরু করল তারপর থেকে অবিরাম লড়াই চলছে। ইজরায়েলে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।

ওই সাংবাদিক বলছেন, তাঁর মতো আরও অনেক সাংবাদিক দৌড়ে বহুতলের নিচে এসে পড়েন। তারপর ইজরায়েলি বায়ুসেনার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে পরপর তিনটি মিসাইল ছুটে আসে বিল্ডিংয়ের দিকে। তার আগে ড্রোন থেকে এয়ারস্ট্রাইক করা হয়। আট মিনিটের মধ্যে বিমান হানার পর দেখলেন, তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল ১১ তলা বিল্ডিং। তারপর গোটা এলাকা ধুলোয় ঢেকে যায়। আশে পাশের মানুষদের ঘরও ধুলোয় ঢেকে যায়। চোখের পলকে এতদিনের কর্মক্ষেত্রকে ধ্বংস হতে দেখে হতবাক হয়ে পড়েন তিনি।

এদিকে, রবিবার সকালে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, "সংঘর্ষ শুরুর জন্য দায়ী হামাস। যদি ওরা হামলা করতে থাকে, তাহলে ইজরায়েলেও অপারেশন চালিয়ে যাবে।" একটি টেলিভিশন বার্তায় তাঁর সাফ কথা, "আমরা এখনও একটা অপারেশনের মধ্যে রয়েছি। এটা এখনও শেষ হয়নি। যতদিন প্রয়োজন হবে এই অপারেশন চলবে।" অন্যদিকে, মার্কিন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এপি এবং কাতারের আল-জাজিরা সংবাদসংস্থার অফিসে হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। দুই সংবাদসংস্থাও নিন্দা জানিয়েছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ইজরায়েল বার্তা দেওয়া হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তায় নজর রাখা প্রাথমিক দায়িত্ব। সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতানিয়াহু এবং প্যালেস্তাইনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলে শান্তি স্থাপনের বার্তা দেন।

AP Al Jazeera Palestine Israel Gaza Attack
Advertisment