ব্যাপক অর্থ সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। বিশ্ববাজারে ঋণের বোঝা বেড়েছে। ভাড়াতে তেলের অভাবে দেশজুড়ে দৈনিক প্রায় ১৩ ঘন্টা আলো নিভিয়ে রাখতে হচ্ছে। চরম খাদ্য সংকটেও ভুগছে ভারতের প্রতিবেশী এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। এই অবস্থায় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে সেদেশের মানুষের। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান কয়েক হাজার মানুষ।
রাষ্ট্রপতি গোটাবায়ার পদত্যাগ দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। স্লোগান ওঠে, 'গো হোম, গোটাবায়াগো হোম'। বিক্ষোভের দরুন পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। জনতা-পুলিশ ধস্তাধস্তি হয়। আন্দোলনকারীদের ছত্ররভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়, জলকামান ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু তাতেও অবস্থা আয়ত্তে আনা যায়নি। দফায় দফায় বিক্ষোভ ছড়াতে থাকে। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা সেনার গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছে, বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এমনকী দগ্ধ বাসকে অন্যত্র সরাতে দিতেও বাধা দেয়। এরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। কলম্বো ও সংলগ্ন এলাকায় কার্ফু জারি করে প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট্রে বাড়ির সামনে বিক্ষোভের আঁচ কমলেও মানুষের অন্তোষ চড়ছে।
শুক্রবার সকালেও পরিস্থিতি থমথমে। শুক্রবার সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট নিহাল থালডুয়া সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন যে, 'অশান্তির জন্য ৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাঁচ পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।' তবে এ দিন সকাল থেকে শ্রীলঙ্কার রাজাধানী শহর কলম্বো থেকে কার্ফু প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আঁচ এসে পড়েছে ভারতেও। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন রাজ্য সরকারকে শ্রীলঙ্কার তামিলদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুমোদন দাবি করেছেন। দ্বীপরাষ্ট্রে বেকারত্ব এবং আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতির জেরে নাজেহাল অবস্থা অবস্থা মানুষের। ইতিমধ্যেই সেদেশের তামিলদের অনেকেই অর্থনৈতিক শরণার্থী হয়ে তামিলনাড়ুতে আসছেন। অবস্থার বদল না হলে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দিল্লির তরফে কলম্বোকে ইতিমধ্যেই সহায়তা করা হয়েছে। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ভারত শ্রীলঙ্কাকাকে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রদান করেছে। এছাড়াও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বিভিন্ন যৌথ প্রকল্পের জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করেছে।
শ্রীলঙ্কার সংকটের মধ্যেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আগামী দিনে সম্ভাব্য ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে সেদেশের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানা গিয়েছে। আইএমএফের মুখপাত্র গেরি রাইস বলেছেন, এশিয়ার দেশটি গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট রোধ করতে মরিয়া। এপ্রিলেই আইএমএফ ও বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যে বসন্তকালীন বৈঠক হবে। ওয়াশিংটনে ওই বৈঠকে শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপক্ষ উপস্থিত থাকবেন, সেখানেই আর্থিক সংকট ও সম্ভাব্য ঋণ নিয়ে কথা হবে।
Read in English