অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি প্রতিদিনই আরও একটু করে খারাপ হচ্ছে। অনভিপ্রেত হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮। অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি প্রতিদিনই আরও একটু করে খারাপ হচ্ছে। অনভিপ্রেত হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮। প্রাণে বাঁচতে পরিবার নিয়ে কলম্বোর বাড়ি ছেড়ে নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষ। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ত্রিঙ্কোমালির নৌঘাঁটির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। বাধ্য হয়ে প্রশাসন নির্দেশিকা জারি করেছে, কেউ সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করলে বা অন্য কারও ক্ষতি করলে তাঁকে গুলি করা হবে।
অগ্নিগর্ভ এইপরিস্থিতির জন্য সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থকদের দায়ী করছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, রাজাপক্ষের সমর্থকরা সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সেই সময় শান্তিপূর্ণ ভাবে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছিল।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কার আর্থিক দশা শোচনীয় অবস্থায় চলে গিয়েছে। সেই পরিস্থিতি থেকে এই দ্বীপরাষ্ট্রকে কীভাবে উদ্ধার করা যাবে, তা নিয়ে ঘোর চিন্তায় গোটা শ্রীলঙ্কা প্রশাসন। কারণ, সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পর্যন্ত অর্থাভাবে কিনতে পারছে না শ্রীলঙ্কা সরকার। যাকে ঘিরে বিক্ষোভ চরমে উঠেছে। বিরোধীদের পাশাপাশি, সেই বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষও। গত একমাস ধরে এই বিক্ষোভ চলছিল। এখন তা গোটা শ্রীলঙ্কায় ছড়িয়ে পড়েছে। ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। দ্বীপরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথমবার মধ্যবিত্ত শ্রেণিও বিক্ষোভ শামিল হয়েছেন। তাঁদের সংখ্যাটাও বিরাট। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে পর্যন্ত গত একসপ্তাহ ধরে বসে রয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
পরিস্থিতির চাপে বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষর থেকে পদত্যাগপত্র চান তাঁর ভাই তথা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষ। শুধু তাই নয়, মাহিন্দা রাজাপক্ষর সমর্থকরাও এখন বিক্ষোভকারীদের দলে ভিড়ে গিয়েছেন। পরিস্থিতির চাপে তাই ইস্তফা দিয়েছেন মাহিন্দা। কিন্তু, তারপরও সমস্যা মিটল না। বরং, আরও জটিল হয়ে পড়ল। কারণ, ইস্তফার পর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানো শুরু করেন মাহিন্দা রাজাপক্ষের লোকজন।
আরও পড়ুন- দ্বীপরাষ্ট্রে টালমাটাল পরিস্থিতি, পদত্যাগ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের
এরপরই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ করে তোলে। হামবানতোরার মেদামুলানায় রাজাপক্ষর পৈতৃক বাড়ি পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই জ্বলন্ত বাড়ির ছবি ভাইরাল হয়েছে। দাউদাউ করে জ্বলতে দেখা গিয়েছে বাড়িটি। কারফিউয়ের মধ্যেও সোমবার রাত থেকে, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে রাজাপক্ষের দলের ৪১ জন সাংসদের বাড়িতেও। শ্রীলঙ্কা প্রশাসন সূত্রে খবর, রাজাপক্ষর সমর্থক ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত অন্ততপক্ষে আট জনের প্রাণ গিয়েছে। আহত হয়েছেন ২০০ জনেরও বেশি। শুধু রাজাপক্ষই নন। শ্রীলঙ্কার অন্যান্য প্রথমসারির রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িও আক্রান্ত হয়েছে। একাধিক জায়গায় পুলিশের ওপরও হামলা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশও রেহাই পায়নি। পরিস্থিতি সামলাতে কার্ফু জারি করা হয়েছে। স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রধারী সেনাকর্মীদের নামানো হয়েছে রাস্তায়।
Read story in English