scorecardresearch

বড় খবর

সকালে গিয়ে ফিরতে হচ্ছে রাতে, পেট্রোল পাম্পে চূড়ান্ত হয়রানি, মাথায় হাত মহিলা অটোচালকের

১৯৪৮ সালে স্বাধীন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু, আজ পর্যন্ত এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতির শিকার হয়নি।

petrol pump
পাম্পে জ্বালানির অভাব, অপেক্ষার লম্বা লাইন শ্রীলঙ্কাবাসীর।

দুর্বিষহ জীবনের যে ছবিটা কয়েক সপ্তাহ আগে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ করে তুলেছিল, তা আজও বদলায়নি। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে পরিবার নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে। গুলি চলেছে, কার্ফু জারি হয়েছে। কিন্তু, পরিস্থিতিটা যে কে সেই। শ্রীলঙ্কার পেট্রোল পাম্পগুলো আজও প্রায় তেলশূন্য। সব জায়গায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য হাহাকার।

আর দাম? সেটাই এখন সবচেয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। পেট্রোপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। মানুষ খাবে কী? কতদিনই বা খাবার পাবে? সেসবই এখন দ্বীপরাষ্ট্রবাসীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। সকালে পেট্রোল পাম্পে গেলে তেল নিয়ে ফিরতে প্রায় মধ্যরাত। নামেই অবশ্য পেট্রোল পাম্প। পেট্রোল পাওয়া যাচ্ছে না। যেটুকু মিলছে, সেটা ডিজেল। তারই এই চোট। নাওয়া-খাওয়া ভুলে জওয়ান থেকে বৃদ্ধ, সাতসকালেই লাইন দিচ্ছেন পাম্পে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছে অটোচালকদের। তেল বা গ্যাস ভরাতেই হচ্ছে। এখন এমন অবস্থা যে পারলে গাড়ি চাবি দিয়ে বন্ধ করে বাড়িতে বসে থাকেন। কিন্তু, সেই উপায়ও নেই। সংসার হয়ে গিয়েছে প্রায় সকলেরই। অটোর ওপরই জীবনযাপন। ২ কোটি ২০ লক্ষের দ্বীপরাষ্ট্রে গাড়ি চালানোই এখন সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা। তা সে কলম্বোই হোক। অথবা, দ্বীপরাষ্ট্রের অন্য কোথাও। সব জায়গাতেই পরিস্থিতিটা মোটের ওপর একইরকম।

আরও পড়ুন- আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ, কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা শিবকুমারকে দিল্লির আদালতের তলব

যেমন ৪৩ বছরের লাসান্দা দীপ্তির কথাই ধরা যাক। গোটা উপমহাদেশে যে ক’জন হাতেগোনা মহিলা অটোচালক আছেন, লাসান্দা তাঁদের অন্যতম। গোটা দিনটা লাসান্দার লাইনে দাঁড়িয়েই কেটে যায়। সেখানে দাঁড়িয়েই সংসার থেকে অটোর ট্রিপ খাটা, যাবতীয় হিসেবনিকেশ তিনি কষেন। কলম্বোর উপকণ্ঠেই বাড়ি। বাড়ির কাছাকাছি রুটেই গাড়ি চালান লাসান্দা। গাড়ি চালানোর সময়ই পেট্রোল পাম্পের ওপর নজর রাখেন। গাড়ি চালানোর সময়ই তেলের কাঁটাটা যেই কমার দিকে দেখায় লাসান্দা গাড়ি ভিড়িয়ে দেন কাছাকাছি কোনও পেট্রোল পাম্পে। কখনও কখনও গ্যাস ভরতে রাত কাবার হয়ে যায়। ট্রিপ থেকে সবকিছু তখন মাথায়। লাইন ছেড়ে যাওয়া যাবে না। আগে অটোয় গ্যাস ভরাতে হবে, এটাই তখন প্রধান।

১৯৪৮ সালে স্বাধীন হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু, আজ পর্যন্ত এমন দুর্বিষহ পরিস্থিতির শিকার হয়নি। পরিস্থিতির চাপে গাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকরা। অটো থেকে ট্যাক্সি, সবকিছুরই একই দশা। কিন্তু, অত অর্থই বা যাত্রীরা দেবেন কেমন করে? যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে। একান্ত ঠেকায় না-পড়লে কেউ গাড়ি চাপছেন না। সব মিলিয়ে এক দুর্বিষহ পরিস্থিতি। অনেকেই কর্মস্থলে হেঁটে যাতায়াত শুরু করেছেন। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে যাচ্ছেন। পথে দেখতে পাচ্ছেন পেট্রোল পাম্পগুলোর সামনে সাপের মত লাইন। তবে, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেই যে তেল পাবেন, তেমনটা না। পাম্পে তেল শেষ হয়ে গেলে, আবার ছুটতে হবে অন্য পাম্পে। সেখানেও আবার সবচেয়ে পিছন থেকে লাইন দিতে হবে। দ্বীপরাষ্ট্র জানে না, কবে এই দুর্বিষহ জীবন থেকে রক্ষা পাবে। তবে চায়, শিগগিরি এর শেষ হোক। যত, তাড়াতাড়ি সম্ভব।

Read full story in English

Stay updated with the latest news headlines and all the latest World news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Sri lankan autodriver has to queue twelve hours for fuel