বছর কুড়ির বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠে আফগান সেনার পতনে হতবাক গোটা বিশ্ব। সমগ্র আফগানিস্তান যখন তালিবান আক্রমণের জেরে জর্জরিত, দেশের ক্ষমতাবান মানুষ থেকে সাধারণ মানুষ. সকলের ভরসা টিকে ছিল আফগান বাহিনীর উপর। তাদের এরূপ ভেঙে পড়ার বিষয়টি আশঙ্কার ডঙ্কা বাজিয়েছে দেশজুড়ে।
গত কয়েক দিনে, মে মাসে শুরু হওয়া তালিবান অগ্রগতির চাপে ১৫টিরও বেশি শহরে ভেঙে পড়েছে আফগান বাহিনী। শুক্রবার, আধিকারিকরা নিশ্চিত করেছেন যে এর মধ্যে দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক রাজধানী রয়েছে, কান্দাহার এবং হেরাত। তালিবানদের দ্রুত আগ্রাসনের ফলস্বরূপ আফগান সেনার ব্যাপক হারে আত্মসমর্পণ, তাদের বন্দি করা এবং মার্কিন সরবরাহকৃত লক্ষ লক্ষ ডলারের সরঞ্জাম তালিবানদের প্রকাশিত ভিডিওতে প্রদর্শিত হয়েছে। কিছু শহরে, তাদের আগ্রাসী মনোভাব এবং কয়েক সপ্তাহ ধরে আফগান সেনার সঙ্গে যুদ্ধ আশার আলো দেখালেও শেষ পর্যন্ত তালিবানরা একপ্রকার বিনা প্রতিরোধেই দেশের নানান প্রদেশে আধিপত্য বিস্তার করেছে। প্রায় দুই দশকের উপর মার্কিন সেনাবাহিনীর তৎপরতা, দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীতে ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অস্ত্র, সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরেও এই অধঃপতন যেন আশাতীত।
আফগান নিরাপত্তায় ওবামা প্রশাসন কর্তৃক যথেষ্ট উদ্যোগ এই সেনাবাহিনী তৈরি করতে সচেষ্ট ভূমিকা নিয়েছিল। এর লক্ষ্যই ছিল প্রায় এক যুগ আগে আফগান সেনা দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয় এবং ধীরে ধীরে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মার্কিন সেনার তৎপরতায় আফগান বাহিনীর অনুশীলন যাতে ভবিষ্যতে কাজে আসে এবং আফগান সেনা প্রতিষ্ঠান যাতে নিজ দায়িত্বে কাজ করতে পারে সেই কারণেই এইরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে, এখন প্রশ্ন উঠছে মার্কিন প্রশিক্ষণ নিয়ে! যদিও আফগানিস্তানের ভবিষ্যত আরও বেশি অনিশ্চিত। তবে একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট হয়ে উঠছে আফগানিস্তানের সামরিক বাহিনীকে একটি শক্তিশালী এবং স্বাধীন যুদ্ধশক্তিতে পুনর্নির্মাণের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরের প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং বাস্তব সময়ে সেই ব্যর্থতা পরিস্ফুট, তালিবানদের নিয়ন্ত্রণ থেকে রক্ষা করার সামর্থ্য তাদের নেই।
গত কয়েকদিন শুধু নয়, কয়েকমাস ধরেই আফগান বাহিনী একটু একটু করে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পর থেকেই কমজোর হচ্ছিল প্রশাসনিক কাঠামো। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের নির্দেশে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণ হবে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে। তবে দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম নয় আফগান সেনাবাহিনী। তালিবান আক্রমণের মুখে তাদের কৌশল একেবারে টেকেনি বলেই বোঝা যাচ্ছে। গ্রামীণ পরিসরে সেনা ও পুলিশ বাহিনীকে এমনকী তাদের মজুত গোলা বারুদ, সরঞ্জাম নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালিবান গোষ্ঠী। শর্ত দেয় তারা যদি আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের সরঞ্জাম রেখে যায় তবেই নিরাপদে পথ ছাড়া হবে। ধীরে ধীরে তারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের দখলে নিয়ে নিতে শুরু করে।
২০০১ থেকে আফগান বাহিনীর প্রায় ৬০ হাজার সেনা মৃত্যুর সম্মুখীন হয়েছেন। কুন্দুজের বিমানবন্দর তালিবান নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার পর থেকেই আফগান সেনার পরাজয়ের সূত্রপাত হয়। বিদ্রোহীরা একটি নিষ্ক্রিয় হেলিকপ্টার ও গানশিপ নিজেদের আয়ত্বে আনে। তালিবানদের দখল করা মার্কিন সরবরাহকৃত ড্রোনের ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল সাঁজোয়া গাড়ির সারির ছবি-সহ। দেশের নানান প্রদেশে আফগান সেনার ঘাঁটি পতনের দৃশ্য সাধারণ মানুষের কাছে ভীষণ হতাশার।
আরও পড়ুন কাবুল দখল সময়ের অপেক্ষা, মাত্র ৮০ কিমি দূরে তালিবানি জঙ্গিরা
তালিবানদের কাছে আফগান সেনার আত্মসমর্পণ এবং একের পর এক প্রাদেশিক রাজধানীর জবরদখল দেশের ভৌগলিক এবং মানসিক দুই চিত্রের পরিবর্তন করে ফেলেছে। কান্দাহার ফ্রন্ট লাইনে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, দুর্নীতির শিকার আফগানিস্তানের সমস্ত বিভাগ। ১৫ থেকে ৩০ জন সহযোদ্ধা এবং তাঁদের লড়াই অবশেষে ফলাফল আনতে ব্যর্থ! স্বল্প পরিমাণ গোলাবারুদ এবং মেশিন গান দেশকে তালিবানমুক্ত করতেও ব্যর্থ!
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন