শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠাচ্ছে না ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের ইঙ্গিত পেয়ে স্পষ্ট জানাল কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন গণমাধ্যম জল্পনা উসকে দিয়েছিল। সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল যে কলম্বোয় সেনা পাঠাতে চলেছে নয়াদিল্লি। তারপরই, মুখ খুলল কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন। এই ব্যাপারে হাইকমিশন টুইটে জানিয়েছে, 'শ্রীলঙ্কায় সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার একাংশ যে অনুমানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, ভারত তা তার সঙ্গে সহমত নয়। এই রিপোর্ট এবং এই ধরনের মতামত ভারত সরকারের অবস্থানের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।' একইসঙ্গে অন্য একটি টুইটে কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, 'ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র গতকাল স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে শ্রীলঙ্কার গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।' শ্রীলঙ্কা ইস্যুতে ভারতের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, গণতন্ত্রের পথে যাতে শ্রীলঙ্কাবাসীর স্বার্থ চরিতার্থ হয়, সেই কথাই ভারত বরাবর চিন্তা করে এসেছে।
এর আগে শ্রীলঙ্কার সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, ৭৬ বছরের মাহিন্দা রাজাপক্ষ পরিবার নিয়ে কলম্বো ছেড়ে পালান। তার পর রটে যায় যে রাজাপক্ষ পরিবার নিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। যদিও, শ্রীলঙ্কার বাসিন্দাদের একাংশের সেই অভিযোগও অস্বীকার করেছেন কলম্বোর ভারতীয় দূতাবাস। বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেও জানায় নয়াদিল্লি। পরে জানা যায়, রাজাপক্ষ কপ্টারে চেপে সপরিবারে ত্রিঙ্কোমালির নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই মাহিন্দা রাজাপক্ষর ছোট ভাই তথা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষর নির্দেশে শ্রীলঙ্কার রাজপথে সশস্ত্র জওয়ানদের মোতায়েন করেছে দ্বীপরাষ্ট্রের প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পথে নামানো হয়েছে সাঁজোয়া গাড়ি, ট্যাংকও।
একটা সময় শ্রীলঙ্কায় এমন ছবি দেখা যেত। সেটা এলটিটিইর বাড়বাড়ন্তের জমানায়। সেই সময় ১৯৮৭ সালের ৩০ জুলাই, তত্কালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী শ্রীলঙ্কায় গিয়ে ইন্দো-শ্রীলঙ্কা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই সময় শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ছিলেন জুনিয়াস রিচার্ড জয়বর্ধনে। আর, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন রণসিংহে প্রেমদাসা। সেই চুক্তি নিয়ে শ্রীলঙ্কার সেনা এবং ভারতীয় সেনা, কেউই খুশি ছিল না। চুক্তির একদিন পরই শ্রীলঙ্কা সেনার থেকে 'গার্ড অফ অনার' নেওয়ার সময় বিজিতা রোহানা নামে একজন শ্রীলঙ্কান সৈনিক রাইফেল দিয়ে রাজীব গান্ধীকে আঘাতের চেষ্টা করেছিল। তবে, ঘাড়ে আঘাত লাগলেও রাজীব গান্ধীর মাথায় কোনও আঘাত লাগেনি। তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- অশান্ত শ্রীলঙ্কায় হিংসার বলি ৮, প্রাণ বাঁচাতে সপরিবারে নৌঘাঁটিতে পালালেন মাহিন্দা রাজাপক্ষ
সেই সময় চুক্তি অনুযায়ী, ভারতীয় শান্তিসেনা গিয়েছিল শ্রীলঙ্কায়। এলটিটিইর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। সেই সময় ২,৪০০ ভারতীয় সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন। দেশের ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। তারপরও ভারতের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কার সার্বভৌমত্বে আঘাত হানার অভিযোগ এনেছিলেন শ্রীলঙ্কার রাজনীতিবিদরা। যার নেতৃত্বে ছিলেন সেই সময়কার প্রধানমন্ত্রী রণসিংহে প্রেমদাসা। তাঁরই ছেলে সাজিথ প্রেমদাসা এখন শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলনেতা। যার নেতৃত্বে আর্থিক সংকট নিয়ে শ্রীলঙ্কায় বর্তমানে আন্দোলন চলছে। তাই সেনা পাঠানো অথবা শ্রীলঙ্কার শাসক দলের রাজনীতিবিদদের আশ্রয় দেওয়ার মতো ফাঁদে আর পড়তে নারাজ ভারত। এমনটাই বুঝিয়ে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। তবে, শ্রীলঙ্কাকে গণতান্ত্রিক উপায়ে যতটুকু সাহায্য করা যায়, তা করা হবে। একথা জানিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি জানিয়েছেন, বর্তমান আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে শ্রীলঙ্কাকে এই বছরই ৩৫০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে ভারত।
Read story in English