৬ মার্চ পর্যন্ত ২০ হাজার ভিনদেশি স্বেচ্ছাসেবক ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন। এমন তথ্য দিয়েছে কিয়েভ ইন্ডিপেনডেন্ট। বুধবার কিয়েভ ইন্ডিপেনডেন্ট এক রিপোর্টে দাবি করে প্রায় ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক ইউক্রেনীয় সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে। এদিকে ইউক্রেন প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে "বিদেশী স্বেচ্ছাসেবীরা চাইলে ইউক্রেনের নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারেন”।
২৪ ফেব্রুয়ারি, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তারপর থেকে, ইউক্রেনের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য, বিউটি কুইন, অসামরিক ব্যক্তি এবং এমনকি বিদেশী স্বেচ্ছাসেবকরা এগিয়ে এসেছেন রাশিয়ান আক্রমণের বিরুদ্ধে দেশের হয়ে লড়াই করার জন্য। হাতে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র।
তাদের মধ্যে রয়েছেন বছর একুশের এক ভারতীয় ছাত্র। তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর জেলার সৈনিকেশ রবিচন্দ্রন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইউক্রেনের আধাসামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে হাতে তুলে নিয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবার সরাসরি ইউক্রেনীয় সেনাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন এক ভারতীয়। এমন খবর সামনে আসতেই স্তম্ভিত সকলেই। দেশের হয়ে সেবা করাই তাঁর স্বপ্ন ছিল। আর সেই স্বপ্ন নিয়েই ভারতীয় সেনায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরের যুবক সৈনিকেশ রবিচন্দ্রণ। কিন্তু সুযোগ হয়নি বলে দাবি তাঁর। এর পরই ২০১৮-তে ইউক্রেনের খারকিভে পাড়ি দেন রবি।
খারকিভে ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা শুরু করেন। এ বছরের জুলাইয়ে সেই কোর্স শেষ হওয়ার কথা। তাঁর মাঝেই রুশ আগ্রাসনের কবলে পড়ে ইউক্রেন। আর সেই লড়াই যেন রবির স্বপ্নকে বাস্তবের রুপ দিল। ইউক্রেনে অ্যারোস্পেস নিয়ে পড়তে গেলেও সেনা হওয়ার সুপ্ত বাসনা থেকেই গিয়েছিল রবির মনে। আর সেই সুযোগটাও এসে গেল ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
আরো পড়ুন: ক্ষতবিক্ষত ইউক্রেন থেকে প্রাণে বেঁচে মোদীকে ধন্যবাদ পাক ছাত্রী’র
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হতেই রবির বাড়ির লোকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ছেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এক বার যোগাযোগ হলেও তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফের ভারতীয় দূতাবাসের সহযোগিতায় রবির সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁর বাড়ির লোকেরা। কিন্তু রবি তাঁদের সকলকে চমকে দিয়ে জানিয়ে দেন, বাড়িতে ফেরা সম্ভব নয়। তিনি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছেন। রবির বাড়িতে এসে গোয়েন্দারাও সে খবর দিয়ে গিয়েছেন। প্রথমটাই ভ্যাবাচাকা খেলেও পড়ে ছেলের ইচ্ছাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন। পরিবারের দেওয়া সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে এক সদস্য বলেন, প্রথমটায় খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। ওকে বারণও করা হয়েছিল, কিন্তু সেনা হওয়ার অদম্য ইচ্ছা তাকে দমাতে পারেনি। আমরাও ওর ইচ্ছাকে মেনে নিয়েছি।
এদিকে, উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ছেড়েছেন প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ। মঙ্গলবার, রাস্ট্রসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন যে রাশিয়ার আক্রমণের মুখে পড়ে দেশ ছেড়েছেন প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ। এদিকে ইউক্রেকে হামলা জারী রেখেছে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের সেভেরোদোনেস্কৎ শহরে রুশ সেনার আক্রমণে নিহত হয়েছেন ১০ জন ইউক্রেনীয়। সংবাদ সংস্থা এএফপি স্থানীয় সূত্রে এই খবর পেয়েছে। গত প্রায় দু’সপ্তাহের লড়াইয়ে ধ্বস্ত ইউক্রেন। বিভিন্ন শহর ছেড়ে প্রাণ হাতে পালাচ্ছেন মানুষ।
ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক জানিয়েছেন যে, অবরুদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর মারিউপোল সহ বুধবার ছয়টি ‘মানবিক করিডোর’ দিয়ে সাধারণ নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা জারি রয়েছে। সেই সঙ্গে রুশ হামলার বীভত্সতা থেকে রেহাই পেল না হাসপাতাল। রেহাই পেল না দুধের শিশুরাও।
ইউক্রেনের মারিউপোলে রাশিয়ার বিমানহানায় ধ্বংসস্তূপে বদলে গেল আস্ত একটা হাসপাতাল। যেখানে প্রসূতি এবং শিশুরা ভর্তি ছিলেন। আর, সেখানে বহু শিশুর চিকিৎসাও চলছিল। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে, বলতে পারছে না ইউক্রেন প্রশাসন। রাস্ট্র সংঘের তরফে দাবি করা হয়েছে ইতিমধ্যেই প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন এই সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষের কাছাকাছি যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এরই সঙ্গে ইউক্রেনের তরফে দাবি করা হয়েছে রুশ হামলা থেকে বাদ যায়নি দুধের শিশুরাও এদিনের ঘটনা সেই দাবিকে আরও জোরদার করল।