কোভিড-১৯ থেকে কার্যকর সুরক্ষা পাওয়ার জন্য সবাইকে টিকার তৃতীয় ডোজ নিতে হবে কিনা, সেজন্য একাধিক টিকার প্রয়োগ করা যাবে কিনা ইত্যাদি নানা প্রশ্ন আমাদের সকলের মনেই ভিড় করে আসছে। এই বিষয়ে কী জানিয়েছেন গবেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে বুস্টার ডোজের কোন বিকল্প নেই।
বুস্টার ডোজ শরীরে যে মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি করে তা আমাদের সুরক্ষা দেয় ওমিক্রনের বিরুদ্ধে। গবেষকরা তাঁদের গবেষণায় বেঁছে নিয়েছিলেন এমন কয়েকজনকে যারা ইতিমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন এমন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়নি। ৯৮ জন যারা ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং ৭৩ জন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়নি উভয়ের শরীরে এমআরএনএ-ভিত্তিক ফাইজার ভ্যাকসিন দিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছিল। এবং ফলাফলে দেখা গিয়েছিল উভয়েই কার্যকরভাবে ওমিক্রন ভ্যরিয়েন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করতেও সক্ষম।
জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখ (টিইউএম) এর গবেষকরা দেখেছেন যে ভাইরাল স্পাইক প্রোটিনের মোট তিনটি এক্সপোজারের ফলে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে অনেক বেশি সুরক্ষা প্রদান করে। টিইউএম-এর অধ্যাপক পার্সি নল বলেছেন, "টিকাকরণের মাধ্যমে ইমিউনিটি তৈরি করা বা বুস্ট করা ভাইরাসের ভবিষ্যৎ রূপগুলির বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষার চাবিকাঠি।"
গবেষণার অন্যতম গবেষক অলিভার টি কেপলার বলেছেন, "ওমিক্রনের জন্য, সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য আপনার যথেষ্ট বেশি এবং আরও ভাল অ্যান্টিবডি দরকার।" ব্র্যাডফোর্ড রয়্যাল ইনফার্মারির চিকিৎসক ড. জন রাইট সেই ট্রায়ালের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। কিছু কিছু টিকা রয়েছে, যা একবার নেওয়ার পর সারাজীবন ধরে কাজ করে। যেমন হেপাটাইটিস টিকা। আবার পোলিও অথবা টিটেনাসের মতো কিছু টিকা রয়েছে, যেগুলোর সুরক্ষা পেতে নিয়মিত বিরতিতে বুস্টার ডোজ নিতে হয়”।
কোভিড-১৯ যদিও পৃথিবীতে অল্প কিছুদিন এসেছে, কিন্তু এখনো বিজ্ঞানীদের জানা নেই যে, সেটি কতদিন থাকবে এবং টিকা নেওয়ার পরেও সেটির বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন কার্যকর থাকবে। তাই সেক্ষেত্রে বুস্টার ডোজ’ই বাঁচার একমাত্র হাতিয়ার”।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, অন্যান্য ফ্লু-র টিকার মতো, কোভিডের ক্ষেত্রেও শীতের আগে সংক্রমণ এড়াতে আর নতুন ধরনের ভাইরাসের হামলা থেকে বাঁচতে প্রতিবছর বুস্টার টিকা হতে পারে সংক্রমণ থেকে বাঁচার হাতিয়ার।
অধ্যাপক ব্রাউন বলছেন, ''মানুষজন হয়তো মনে করতে পারে যে, লকডাউন শেষ হয়ে গেলেই এই বিপদ থেকে মুক্তি, আসলে তা নয়। আপনাকে সবসময়েই সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। তখন এটি মহামা্রির বদলে একটি সাধারণ রোগে পরিণত হবে।'এই রোগ থেকে মুক্তির উপায় হলো টিকা। এটাকে আমাদের জীবনের স্বাভাবিক একটি কাজ হিসাবেই মানিয়ে নিতে হবে।'' তিনি বলছেন।