ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রতিবাদে রাষ্ট্রসংঘে একাধিক প্রস্তাব এসেছে। সেই সব প্রস্তাবে সায় দিয়ে ভারতকেও সুর মেলাতে বলা হয়েছিল। রাশিয়া কোনও চাপ দেয়নি। ভারতকে কোনও শর্তও দেয়নি। বরং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ভারতের ওপর চাপ এসেছে। ভারত এবং রাশিয়ার সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে গিয়ে এমনটাই দাবি করলেন নয়াদিল্লির রুশ রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপভ।
কিন্তু, মিত্র দেশ ভারতের থেকে এটুকু পেয়ে রাশিয়া যে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়, তা-ও ঘুরিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন আলিপভ। কার্যত নরম-গরম, উভয় সুরই বজায় রেখে আলিপভ বলেছেন, ইউক্রেন সমস্যার প্রভাব গোটা বিশ্বে পড়েছে। এমনকী, ভারত-রাশিয়া সম্পর্কেও তা রেখাপাত করেছে। এই প্রভাবের সীমা এখন কল্পনাও করা যাচ্ছে না। ভারত এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে, রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক জোরদার করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রসংঘ, ইতিমধ্যেই ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়াকে চাপে ফেলতে নানা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাতে রীতিমতো করুণ দশা হয়ে পড়েছে রাশিয়ার অর্থনীতির। কারণ, বাকি বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার যাবতীয় লেনদেন এতে কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে তারা যে ভারতের ঘাড়েই ভর দিতে চায়, কার্যত তেমনই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন নয়াদিল্লির রুশ রাষ্ট্রদূত।
যা আসলে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতোই হয়ে উঠেছে ভারতের কাছে। কারণ, আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় মধ্যপন্থা নিতে গিয়ে রাষ্ট্রসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি ভারত। এতে চটে আমেরিকা এবার ভারতের ওপরও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির কথা ভাবছিল। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন লেনদেন থেকে পিছিয়ে এসে ভারত আপাতত নিষেধাজ্ঞা আটকে রেখেছে। কারণ, এই মুহূর্তে রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক সম্পর্কে যাওয়া মানেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার কোপে পড়া।
তাই, রাশিয়া যা চাইছে তা ভারতের পক্ষে কোনওমতেই করা সম্ভব নয়। মহাশক্তিধর চিন পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক লেনদেন প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। সেটা বুঝেও স্রেফ নিজেদের বাধ্যবাধকতা থেকে, আর্থিক সমস্যা থেকে উদ্ধারের জন্য রাশিয়া যে ভারতকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাশে চাইছে, সেটা যেন আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন নয়াদিল্লির রুশ রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন- আইপিএস অফিসারদের কাছে গুজরাতের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়োগের অর্থ ‘শাস্তি’
যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া একাধিকবার ভারতীয় পড়ুয়াদের পণবন্দি করে রাখার অভিযোগ তুলেছে, সেই আটকে থাকা পড়ুয়ারাদেরই কি ভারতের ওপর চাপ বাড়াতে ব্যবহার করতে চাইছে রাশিয়া? এই প্রশ্নের জন্ম দিয়ে নয়াদিল্লির রুশ রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, খারকিভে তিন হাজার ভারতীয় আটকে আছেন। ৯০০ ভারতীয় আটকে আছেন পিসোচিনে। আর, সুমিতে আটকে আছেন ৬৭০ ভারতীয়।
এই ভারতীয়দের ইউক্রেন থেকে বের হতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও এতদিন পালন করেনি রাশিয়া। তাদের মৌখিক আশ্বাস এবং কার্যক্ষেত্রে নেওয়া ভূমিকার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য থেকে গিয়েছে। নয়াদিল্লির জন্য যা জন্ম দিয়েছে নতুন উদ্বেগের।
Read story in English