অন্যদিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঘুমটা একটু অন্যরকমভাবে ভেঙেছে কিয়েভবাসীর। আধোঘুমেই অনেকে পেয়েছেন বিকট শব্দ। ২০১৪-র পর অনেকগুলো বছর কেটেছে। অনেকে বাসাও বদলেছেন। তাই শব্দটা সকলের কাছে তেমন একটা পরিচিত না। তবে, ১৪-র আগে যাঁরা কিয়েভে ছিলেন, তাঁরা চেনেন শব্দটা। কানই তাঁদের বুঝিয়ে দিয়েছে, হ্যাঁ! ভুল তো হওয়ার নয়। এ তো শান্ত শহরের বুকে রকেট আছড়ে পড়ারই শব্দ। ভুল যে তাঁদের হয়নি। কিছুক্ষণ পরেই উন্মাদের মতো বেজে যাওয়া সাইরেন সেই সাক্ষী দিয়েছে।
কথায় বলে, দিনের শুরুই নাকি গোটা দিনের পূর্বাভাস এঁকে দেয়। প্রবাদটা এক্ষেত্রেও মিথ্যে হয়নি। সাইরেন আর গোলার আঘাতের মধ্যে দিয়ে যে দিনের শুরু, সেই শব্দগুলো বৃহস্পতিবার দিনভর বারেবারে শুনতে হল কিয়েভকে। কখনও মুহুর্মুহু শহরের আকাশ ছেয়ে ফেলল রুশ বায়ুসেনার বিমান। কখনও সোঁ করে মিসাইল ছুটে যাওয়া। আর, ধড়াম করে আছড়ে পড়ার শব্দ।
আর, এসবের চোটেই বৃহস্পতিবার ম্যাজিকের মতো বদলে গেল কিয়েভের প্রধান পথ ক্রেশচারিক। প্রতিদিন কর্মব্যবস্থার জন্য এই রাস্তা জনবহুল থাকে। বৃহস্পতিবার জনবাহুল্যর জায়গায় সেটাই দাঁড়াল গাড়ির স্রোত। আর, দীর্ঘ যানজট। যেন তার শেষ হওয়ার কোনও সময় নেই। এই ব্যস্ততা অবশ্য কর্মচঞ্চলতার জন্য না। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ। কারণ, প্রায় একদশকের শান্ত কিয়েভ মুহূর্তে যেন বদলে গিয়েছে আতঙ্কনগরীতে। সবাই পালাতে চান কিয়েভ ছেড়ে। নিরাপদে, আরও দূরের কোনও নিরাপদ এলাকায়। যেখানে সকালের ঘুমটা ক্ষেপণাস্ত্র হানার বিকট শব্দে ভাঙবে না।
ক্রমশ খবর আসতে লাগল কিয়েভের চারপাশ ঘিরে ফেলছে রুশ বাহিনী। অত্যাধুনিক রুশ কপ্টার, তার প্রতিটিতে ছ'টি করে উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র। যাতে মুহূর্তে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে পারেন এই শহরে এখনও থেকে যেতে বাধ্য হওয়া কয়েক হাজার মানুষ। তবে, এতকিছুর পরও যেন চিন্তার লেশমাত্র নেই ইউক্রেন সরকারে বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্তাদের মুখে।
প্রবল শক্তিমান রাশিয়া। চারপাশে শুধু তাদেরই বিজয়ের ধ্বনি। শহরে আছড়ে পড়া ক্ষেপণাস্ত্রের একের পর এক হামলা। তার মধ্যেই ইউক্রেন প্রশাসন কখনও রুশ সেনার দু'জন জওয়ানকে গ্রেফতার করে ছবি তোলার পর দাবি করছে, রাশিয়া বিপাকে। ইউক্রেনের বাহিনীই লড়াইয়ে জিতছে। কখনও আবার দাবি করছে, রাশিয়ার বেশ কয়েকটি কপ্টার তারা গুলি করে নামিয়েছে। কখনও আবার দাবি করছে, তাদের মাত্র ৪০ জন সেনার হামলায় মৃত্যু হয়েছে। রাশিয়ার সেনার মৃত্যুসংখ্যা অনেক বেশি।
আরও পড়ুন- সাইরেন শুনলেই আতঙ্কনগরী কিয়েভে পরস্পরকে ‘চল পালাই’ বলছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা
সবটাই যেন স্নায়ুর চাপের খেলা। কিন্তু, উন্নত অস্ত্র আর অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্রভাণ্ডারের সামনে এই খেলা আর কতক্ষণ! বিশেষ করে যখন ইউক্রেন প্রশাসনের প্রধানরা যুদ্ধবিমানে চেপে রোমানিয়া পালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ পর্যন্ত উঠছে! তাই আগামীটা সত্যিই জানেন না কিয়েভবাসী। শহরের পতন আসন্ন হলে, তাঁদের শহরের পশ্চিমপ্রান্তে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। ইউক্রেনের বর্তমান প্রশাসন তাঁদের যতই এমন আশ্বাস দিক, টানা মানসিক চাপে দু'চোখের পাতা এক করতে পারছেন না স্বাধীন ইউক্রেনের রাজধানী শহরের বাসিন্দারা।
Read story in English