পিছনে বালির বস্তার ব্যারিকেড। তার সামনে দাঁড়িয়ে সেনার পোশাকে কয়েকজন। হাতে মারণাস্ত্রর বদলে বাদ্যযন্ত্র। ওঁদের সেই বাদ্যযন্ত্র সুর তুলছে, 'চিন্তা কর না। সুখে থাক।' বুধবার এভাবেই মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গাইল ইউক্রেন সেনা। যা চেয়ে দেখল গোটা বিশ্ব।
রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান থেকে আছড়ে পড়া গোলা, অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসা গুলি গত দু'সপ্তাহ গোটা ইউক্রেনকে ইতিহাসের বিবর্ণ অধ্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। মহেঞ্জদড়ো, হরপ্পার মতোই ভেঙে পড়া অজস্র ধ্বংসাবশেষ আজ নির্দশন হিসেবে যেন ইউক্রেনের মাটি থেকে সভ্যতার সাক্ষী দিচ্ছে। খারকিভ, কিয়েভ থেকে মারিউপোল- সর্বত্র ছবিটা একই।
তারই মধ্যে ওডেসা অপেরা এবং ব্যালে থিয়েটারের সামনে সেনা ব্যান্ড তুলল ববি ম্যাকফেরিনসের সেই বিখ্যাত সুর। যা ইউক্রেনবাসীকে পৌঁছে দিল আটের দশকের সুখস্মৃতিতে। ইন্টারনেটের যুগে মুহূর্তে এই ভিডিও ভাইরাল হতে দেরি হয়নি।
অবশ্য রুশ আক্রমণে ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদের আবেগ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেনা ব্যান্ডের এই সুর ধরা ইউক্রেনবাসীকে মোটেও অবাক করেনি। স্থানীয় শিল্পীরাও নিজেদের মতো করে মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্য রাস্তায় সুর তুলছেন। গলা ছেড়ে গান ধরছেন।
আর, ঘনঘন সাইরেন, রুশ যুদ্ধবিমানের সাঁই করে মাথার ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া ভুলে রাস্তায় জড় হয়ে সেসব শুনছেন ইউক্রেনের মানুষ। সুরে গুনগুন করছেন। তাল মেলাচ্ছেন সেই সুরে। তাঁরা গাইছেন, 'আমরা ওডেসাকে হিটলারের সামনে আত্মসমর্পণ করতে দিইনি, কারও সামনে দেবও না।'
ওডেসায় দর্শনের অধ্যাপক গ্যালিনা জিত্সার ইউক্রেনবাসীর এই সাহস, এই মনোভাবকে বেপরোয়া বলতে নারাজ। তাঁর মতে, এটা আসলে ইউক্রেনবাসীর স্বতঃস্ফূর্ততা। 'এখানকার মানুষ যে ভীত নয়, তেমনটা কিন্তু না। বিশেষ করে যখন তাসের ঘরের মতো শহরের ইমারতের ভেঙে পড়া, মৃত সৈনিকদের দৃশ্য তাঁরা দেখেন, তখন ভয় জাগে। কিন্তু, তার মধ্যেও প্রতিমুহূর্তেই যেন নতুন করে প্রাণশক্তিতে ভরে ওঠেন ইউক্রেনবাসী,' এমনটাই মনে করছেন গ্যালিনা।
দলে দলে মানুষের প্রাণহাতে দেশত্যাগ, ভিনদেশের পড়ুয়াদের বাড়ি ফেরার আকুলতা ছাপিয়েও ইউক্রেন ছাড়তে না-চাওয়া দেশভক্ত এই সব মানুষই এখন জাতীয়তাবাদী ইউক্রেনের প্রতীক হয়ে উঠেছে বিশ্বের কাছে।