দেখতে দেখতে দু’সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ । ইউক্রেনের আকাশ ঢেকে গেছে কালো ধোঁয়ায়। মস্কো বুধবারই একটি শিশু হাসপাতালে বোমা ফেলেছে। বোমার আঘাতে কমপক্ষে ১৭ জন জখম হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের তরফে দাবি করা হয়েছে রুশ আগ্রাসনের মুখে পড়ে এখনও পর্যন্ত ৭১ জন শিশু নিহত হয়েছে। আহত বহু। এই ঘটনায় পুতিনের কড়া সমালোচনা করেছে রাষ্ট্রসংঘ । এর মধ্যেই আমেরিকার আশঙ্কা, এবার যুদ্ধে জৈব অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া! যদিও এর আগেই ইউক্রেন দাবি করেছিল রাশিয়া ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করছে। এবার আমেরিকার তরফেও একই দাবি করা হয়েছে। রাশিয়া এর আগে দাবি করেছিল ইউক্রেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র প্রয়োগের কথা পরিকল্পনা করছে আমেরিকা। এবার সেই দাবিকে উড়িয়ে ওয়াশিংটনের দাবি, রাশিয়ার ইঙ্গিত থেকে মনে হচ্ছে এবার হয়তো রাশিয়াই যুদ্ধে জৈব অস্ত্র প্রয়োগ করতে চলেছে।
মার্কিন মুখপাত্র নেড প্রাইস একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ”ক্রেমলিন ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যে রটাচ্ছে যে আমেরিকা ও ইউক্রেন মিলে রাসায়নিক ও জৈব অস্ত্র প্রয়োগ করতে চাইছে। এভাবেই ইউক্রেনে নিজেদের ভয়ংকর হামলার সপক্ষে যুক্তি সাজাচ্ছে রাশিয়া।”এদিকে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব জেন সাকির দাবি, ”চিনকেও এভাবেই কন্সপিরেসি থিয়োরি আওড়াতে দেখা গিয়েছে। একই ভাবে রাশিয়াও এমন সব দাবি করছে। আমাদের লক্ষ রাখতে হবে রাশিয়া রাসায়নিক কিংবা জৈব অস্ত্র ইউক্রেনে প্রয়োগ করে কিনা।” রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটা টুইট করা হয়। সেই টুইটে দাবি করা হয়, কিয়েভে সামরিক-জৈব অস্ত্র প্রয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, এমন প্রমাণ নাকি মিলেছে। এবার সেই দাবি উড়িয়ে পালটা অভিযোগ আমেরিকার।
এদিকে ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধানের দাবি, গত ১৪ দিনে অন্তত ১২০০ রুশ সেনার মৃত্যু হয়েছে। এদিন নিজেদের ফেসবুক পেজে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হিসেব তুলে ধরেছে ইউক্রেনের সেনা। ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়েছে ৩১৭ রুশ ট্যাঙ্ক, ১০৭০ সাজোঁয়া গাড়ি, ১২০ কামান, ২৮ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ৪৯টি যুদ্ধবিমান, ৮১ হেলিকপ্টার, ৩টি জাহাজ এবং একাধিক জ্বালানি পরিবহণকারী ট্যাঙ্কও। সবমিলিয়ে ১৪ দিন ধরে যুদ্ধ চালিয়েও এখনও ইউক্রেন দখল করতে পারেনি রাশিয়া। উলটে বিরাট ধাক্কা খেল পুতিনবাহিনী।
আগের দিন সন্ধ্যায় পর পর তিনটি জোরালো বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে রাজধানী কিয়েভ। ভেঙেছে একাধিক বহুতল। তবে হতাহতের খবর এখনও মেলেনি। রাষ্ট্রসংঘের দেওয়া হিসেব বলছে, দুই সপ্তাহে ইউক্রেনে প্রাণ হারিয়েছেন ৪৭৪ জন। জখম হয়েছেন ৮৬১ জন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইউরোপের এই দেশের। এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা । তিনি বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলার মধ্য দিয়ে আমাদের ঘুম ভেঙেছে। রাশিয়ান ট্যঙ্ক ইউক্রেনের বর্ডার অতিক্রম করেছে, তাদের বিমান আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। ক্ষেপনাস্ত্র ব্যবস্থা আমাদের শহরগুলোকে ঘিরে রেখেছে'। রাশিয়ার হামলায় নিহত কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন তিনি, সেই সঙ্গে শিশু নিহত হওয়ার ঘটনাকে সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও ধ্বংসাত্মক বলেও বর্ণনা করেন তিনি।