Advertisment

সংকটের মুখে ইউক্রেন, কিয়েভ দখলের মরিয়া চেষ্টায় রুশ সেনা

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও এয়ারস্ট্রাইক করেছে রুশ বিমান বাহিনী। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সারি সারি ঘর-বাড়ি। রুশ হানায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। টিভি টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে টেলিভিশন পরিষেবা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

রুশ আগ্রাসনের অষ্টম দিনে ইউক্রেনের প্রধান বন্দর শহর খেরসনে রাশিয়া কার্যত দখল নিয়েছে।

রুশ আগ্রাসনের অষ্টম দিনে ইউক্রেনের প্রধান বন্দর শহর খেরসনে রাশিয়া কার্যত দখল নিয়েছে। একের পর এক বোমা হামলায় বিধ্বস্ত অবস্থা অনান্য শহরগুলির। অবিরাম গোলাগুলির মাঝে পড়ে নিহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এরই মাঝেই খারকিভে রুশ হামলার বলি এক ভারতীয় পড়ুয়া। আক্রমণের এক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেনের চিত্রটাই যেন পাল্টে গেছে। রাশিয়ার আক্রমনের মুখে পড়ে ইউক্রেনীয়রা সর্বাত্মক আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এরই মাঝে রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে পড়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন। যা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান মাত্র সাতদিনের। বৃহস্পতিবার থেকে এপর্যন্ত রাশিয়ার ক্রমাগত আক্রমণে প্রায় বিধ্বস্ত ইউক্রেন। বিপর্যস্ত রাজধানী কিয়েভ। সম্প্রতি সামনে এসেছে একটি উপগ্রহ চিত্র। তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে রাজধানী কিয়েভকে প্রায় ঘিরে রেখেছে রুশ সেনা বাহিনী। এই অবস্থায় রাশিয়ার বিরুদ্ধের সরব হয়েছে ইউক্রেনে কর্মরত মানবাধিকার সংগঠনগুলি । মানবাধিকার সংস্থার পাশাপাশি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ রাশিয়া ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা (Claster Bomb) ও ভ্যাকুয়াম বোমা (vacuum bombs) দিয়ে আক্রমণ করেছে।

Advertisment

রাশিয়ার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি প্রবল সমালোচনা  করেছে। এসবের মাঝে রাশিয়ার ভয়ঙ্কর আক্রমণের ভিডিও সামনে এসেছে যা দেখে শিউরে উঠেছে তামাম বিশ্ববাসী। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তবে কী রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কী সত্যি? ক্লাস্টার বোমা ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করছে রাশিয়া? ইউক্রেন দখলের মরিয়া চেষ্টা আর জেলেনস্কির নাছোড় মানসিকতা এই দুইয়ের মাঝে রোজই বলি হচ্ছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ।

ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার নিয়ে মুখ খুলেছে আমেরিকা। হোয়াইট হাউস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, রাশিয়া কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। তবে রাশিয়া যদি ঐ জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করে তাহলে যা যুদ্ধ অপরাধর হিসেবে চিহ্নিত হবে।

ইউক্রেনের ওপর ভয়ঙ্কর ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। এই মিডিয়া ব্রিফিংয়েও তিনি এমন অভিযোগ তুলেছেন। এখন যদি সত্যি রাশিয়া ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ইউক্রেনের ওপর নিক্ষেপ করে থাকে তবে তা হবে সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ।

খেরসন রাশিয়া কর্তৃক বন্দী

ইউক্রেনের প্রশাসন বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন যে রাশিয়ান সৈন্যরা দক্ষিণ শহর খেরসন দখল করেছে । রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের অন্যান্য শহরে তাদের হামলা জোরদার করছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য শহরে বেড়েছে আক্রমণের তীব্রতা। মঙ্গলবার ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ভাদিম ডেনিসেনকো জানিয়েছিলেন যে রুশ বাহিনী খেরসনে প্রবেশ করেছে। তবে ইউক্রেন এখনও শহরের প্রশাসন ভবন নিয়ন্ত্রণ করছে। বুধবার খবর ছড়ায় রাশিয়া খেরসন দখল করেছে যদিও ইউক্রেন এই নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

কিয়েভ দখলই মুল উদ্দেশ্য-

বুধবারই রাশিয়ান বাহিনী বিপুল অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে রওনা দিয়েছে। লক্ষ্য একটাই বর্তমান সরকারের পতন এবং একটি নতুন শাসন প্রতিষ্ঠা করা। প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষ এখন আটকে রয়েছে কিয়েভে। ভয়ঙ্কর কিছুর জন্য অপেক্ষা করছেন, প্রাণ সংশয়ে দিন কাটছে বিপুল মানুষের। আগামী দিনে যুদ্ধের তীব্রতা আরও বাড়বে এমনটাই জানা গিয়েছে গোয়েন্দা সূত্রে। যদিও কিয়েভ এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণাধীন। ইউক্রেনের সাম্রিক বাহিনি রাশিয়ার আগ্রাসনকে রুখতে একের পর শহরে ঢোকার সেতু উড়িয়ে দিয়েছে।

টিভি টাওয়ারে , একাধিক শহরে হামলা-

বিশ্বের সমকক্ষ রাষ্ট্রগুলোর হুঁশিয়ারিকে অগ্রাহ্য করে ইউক্রেনে ধ্বংসলীলা (Russia Ukraine War) জারি রেখেছে রুশ সেনা। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, ইউক্রেনের রাজধানী শহর কিয়েভে (Kyiv) হামলা করেছে রুশ বাহিনী। নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে প্রধান টিভি টাওয়ার। একই সঙ্গে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভেও এয়ারস্ট্রাইক করেছে রুশ বিমান বাহিনী। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সারি সারি ঘর-বাড়ি। রুশ হানায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। টিভি টাওয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে টেলিভিশন পরিষেবা। আগেই রাশিয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে তারা কিয়েভের সিকিউরিটি সার্ভিস সংস্থার প্রধান দফতরে হামলা চালাবে। সেই মতো সেখানকার বাসিন্দাদের বাড়ি খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রুশ এয়ারস্ট্রাইকের ফলে ধ্বংস হয়েছে বহু ঘর-বাড়ি। মৃত্যু হয়েছে আট জনের। আরও ছ'জন আহত হয়েছেন। এর আগে খারকিভেই রুশ রকেট স্ট্রাইকে মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। আহত হয়েছিলেন ৩৫ জন। সেই সঙ্গে বুধবার খারকিভে জারী রয়েছে বোমাবর্ষন। ১৯৪৫ সালের পর এত বড় আক্রমণ দেখেনি ইউরোপীয় রাষ্ট্র। সেই সঙ্গে প্রকোট হচ্ছে পশ্চিমী সংঘাত।

দেশ ছেড়েছেন ১০ লক্ষ নাগরিক-

রাষ্ট্রসংঘ জানিয়েছে রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে পড়ে ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন। যা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান মাত্র সাতদিনের। ২০২০ সালের শেষে ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৪০ লক্ষ। রাষ্ট্র সংঘের ভবিষ্যৎবাণী এইরকম অবস্থা চলতে থাকলে ৪০ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ ইউক্রেন ছাড়তে পারেন।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে চলছে তদন্ত-

ইউক্রেনের ওপর ভয়ঙ্কর ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে একাধিক মানবাধিকার সংগঠন। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভা রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। এই মিডিয়া ব্রিফিংয়েও তিনি এমন অভিযোগ তুলেছেন। এখন যদি সত্যি রাশিয়া ক্লাস্টার বোমা এবং ভ্যাকুয়াম বোমা ইউক্রেনের ওপর নিক্ষেপ করে থাকে তবে তা হবে সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ইউক্রেন আক্রমণ করার সময় রাশিয়ান সৈন্য এবং সরকারের দ্বারা সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সময় সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত করছে আইসিসি।

ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যু-

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এই প্রথম এক ভারতীয় ছাত্রের মৃত্যু। মৃত ছাত্রের নাম নবীন এস.জি। তিনি কর্ণাটকের বাসিন্দা। রুশ সেনার হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। টুইট করে এই খবর জানানো হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এবিষয়ে টুইট করেন।

Russia-Ukraine Row
Advertisment