ইতিমধ্যেই ভারতে জিএসটি এবং নোটবন্দির পরই ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছেন ছোট ব্যবসায়ীরা৷ ক্ষুদ্র ও ছোট সংস্থার পুঁজি কম হওয়ায় লেনদেন মূলত নগদ নির্ভরশীল। তাই নোট বাতিলে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা গিয়েছে ওই দিকেই । সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রকাশিত একিটি রিপোর্ট অনুযায়ী ডিফল্ট লোনের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৭ সালের মার্চে ছোট ব্যবসায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ যেখানে ছিল ৮,২৪৯ কোটি টাকা, ২০১৮ সালের মার্চে সেই অঙ্কটাই দাঁড়িয়েছে ১৬,১১৮ কোটি টাকা।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার ক্ষেত্রে যেখানে ২৫ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয় সেখানে ঋণের পরিমাণ ৮২,৩৮২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৯৮,৫০০ কোটি টাকা হয়েছে। তবে দেখা গিয়েছে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণও বেড়েছে অনেকটাই। উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের এপ্রিল-জুন মাসে দেশে জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছিল ৫.৭ শতাংশে। সেই হার ২০১৮ সালে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮.২ শতাংশে। আরটিআই-য়ের আওতায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের দ্বারা প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক ঋণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বাড়ছে তরতরিয়ে৷ আরবিআই-এর মতে যার একমাত্র কারণ, জিএসটি এবং বিমুদ্রাকরণ৷
আরও পড়ুন: জিএসটির বিজ্ঞাপনে কেন্দ্র খরচ করেছে ১৩২.৩৮ কোটি টাকা
আরবিআই-এর মনিটারি পলিসি ডিপার্টমেন্টের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশেষত স্বর্ণ ও রত্ন শিল্প ও ঠিকা শ্রমিকরা পারিশ্রমিক নিয়মিত পাচ্ছেন না নোটবন্দির পর থেকেই৷ জিএসটি চালু হওয়ায় বহু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করের আওতায় চলে আসায়, তাদের খরচও বেড়েছে৷ ফলে সেই ধাক্কা সামলে উঠতে পারছে না তারা৷
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার কথা ঘোষণা করে সরকার। সরকারের ওই আচমকা সিদ্ধান্ত বিপুল নোটের আকাল সৃষ্টি করে দেশজুড়ে। এতে জিডিপি বৃদ্ধির হার ১.৫ শতাংশ কমে যায়। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রবল ক্ষতির সম্মুখীন হয় এর ফলে। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরও একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে জোর ধাক্কা লাগে নোট বাতিল ও জিএসটি লাগুর ফলে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, গহনা ও রত্ন শিল্পের শ্রমিকদের ঠিক সময়ে বেতন দেওয়া যায়নি নোট বাতিলের পর টাকার আকালের কারণে। অন্যদিকে, জিএসটি বসার ফলে ব্যবসায় জটিলতা বেড়েছে। খরচ বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই।
আরও পড়ুন: লো ফিভারে ভুগছে ভারতীয় টাকা: মোদী সরকারের বিরুদ্ধে টুইটারে ক্ষোভ মমতার
আরবিআইয়ের এ রিটার্নে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছে যে মার্চেন্ট ব্যাংকের বৃহৎ ঋণের পরিমাণ ২০১৬ সালের মার্চে দাঁড়িয়েছে, যা পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কগুলির দ্বারা পরিচালিত হয়, যার পরিমাণ ছিল ৬৫.৩২ শতাংশ, যা আগের বছরের ৬৬.৬১ শতাংশ থেকে ছোট ইউনিটের ক্ষেত্রে অসামান্য ঋণ।
সম্প্রতি SMERA রেটিং লিমিটেডের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ৬০ শতাংশের বেশি ক্রেতা মনে করেন যে, তাঁদের সিস্টেমগুলি নতুন কর ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম ছিল না। আরবিআই-এর MSME গবেষণাতে বলা হয়েছে, যে সমস্ত জেলা উচ্চহারে লাভের সাক্ষী ছিল, নোটবন্দির সময় বেশ বড়ো একটা ধাক্কার সম্মুখীন হয়েছে।
SIDBI-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে নোটবন্দি এবং জিএসটির পরবর্তী সময়ে রিলেটিভ ক্রেডিট এক্সপোজার অনেকটাই পড়ে গিয়েছে, যদিও ২০১৮-র মার্চের মধ্যে তা পুনরুদ্ধার করা হয়। গবেষণা অনুযায়ী, ক্রেডিট গ্রোথের হার হ্রাস পেয়ে নেতিবাচক ভূমকা পালন করেছে ২০১৬-র ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ এই সময়কালে। অতএব শিল্পক্ষেত্রে ক্রেডিট গ্রোথ কমে যাওয়ার জন্য নোটবন্দিকেই দুষছেন একাংশ।