/indian-express-bangla/media/media_files/2025/10/12/us-china-trade-tension-2025-10-12-18-59-02.jpg)
US–China trade tension: আমেরিকা-চিনের বাণিজ্য উত্তেজনা, সতর্ক ভারত!
US–China trade tension: বিশ্ব অর্থনীতি আবারও অস্থিরতার মুখে। আমেরিকা-চিন বাণিজ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। অক্টোবর ২০২৫-এর শুরু থেকেই এই উত্তেজনা নতুন রূপ পেয়েছে। চিন সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং ভূমিজ সম্পদের রফতানির ওপর নতুন করে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। জবাবে আমেরিকা চিনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এই সংঘাত কেবল দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব পড়তে চলেছে গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে। বিশেষ করে ভারতের মতো উদীয়মান দেশের অর্থনীতির ওপর এর বিরাট প্রভাব পড়তে চলেছে।
চিন ভয়ংকর খেলা খেলেছে
চিন জানিয়েছে, যে কোনও পণ্য, যার উৎপাদনের মধ্যে ০.১ শতাংশের বেশি চিনের ভূমিকা রয়েছে, সেই রেয়ার আর্থ বা চিনা প্রযুক্তিতে তৈরি জিনিসপত্র রফতানির আগে বেজিংয়ের অনুমতি নিতে হবে। এর ফলে ইলেকট্রনিক্স, ইভি মোটর, উইন্ড টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর এমনকী যুদ্ধবিমান তৈরিতেও বিরাট প্রভাব পড়বে। কারণ, বিশ্বের রেয়ার আর্থ রিফাইনিং (rare earth refining)-এর প্রায় ৭০% ক্ষমতা চিনের হাতে রয়েছে। ফলে এই নিয়ন্ত্রণ বিশ্ব সরবরাহে এক বড় চাপ তৈরি করতে চলেছে।
আরও পড়ুন- ইরানের সঙ্গে ব্যবসার অভিযোগ, ৯ ভারতীয় কোম্পানির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা!
আমেরিকার পালটা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জবাবে কড়া ভাষায় বলেছেন, 'চিন অপ্রত্যাশিতভাবে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। এর জবাবে আমেরিকা চিনা পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল।' এছাড়াও তিনি ঘোষণা করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তিগত পণ্যের রফতানিতেও নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে আমেরিকার স্টক মার্কেট-এ পতন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন- কীভাবে চেক করবেন, জিএমপি ৪০০ টাকা ছাড়িয়ে ৩৭% লিস্টিং লাভের ইঙ্গিত!
ভারতের ওপর প্রভাব
ভারত বর্তমানে আমেরিকার সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি (trade deal) নিয়ে আলোচনা করছে। সেই অবস্থায় এই মার্কিন-চিন সংঘাত ভারতের জন্য একইসঙ্গে সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুই-ই তৈরি করেছে। এর মধ্যে সুযোগ বলতে, আমেরিকা এবং চিনের পরিবর্তে ভারত, ভিয়েতনাম এবং অস্ট্রেলিয়াকে বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। ফলে ভারতের ইলেকট্রনিক্স, ফার্মা ও মাইনিং খাতে বিনিয়োগ বাড়তে পারে। আর চ্যালেঞ্জ বা প্রতিকূলতা বলতে, চিনের রফতানি নিয়ন্ত্রণ ভারতের গাড়ি শিল্প ও ইভি উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, বেশিরভাগ রেয়ার আর্থ-নির্ভর যন্ত্রাংশ চিন থেকেই আমদানি হয়।
আরও পড়ুন- শেষ দিনে সম্পূর্ণ সাবস্ক্রাইব, বাজারে এই সংস্থার সাফল্য দিচ্ছে চমক!
অর্থনীতিবিদদের মত
প্রাক্তন ট্রেড অফিসার অজয় শ্রীবাস্তব এই প্রসঙ্গে বলেছেন, 'এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে ইভি (EV), উইন্ড টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর অংশের দাম বাড়বে। চিন হয়তো তার রফতানি নন-ওয়েস্টার্ন পার্টনারদের দিকে ঘুরিয়ে দেবে। ভারতের জন্য বার্তা পরিষ্কার— কোনও বাণিজ্য চুক্তিই চিরস্থায়ী নয়। আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় সতর্ক থাকতে হবে এবং আত্মনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে।'
আরও পড়ুন- শেষ দিনে সম্পূর্ণ সাবস্ক্রাইব, বাজারে এই সংস্থার সাফল্য দিচ্ছে চমক!
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি
জাপানের এমইউএফজি রিসার্চ (MUFG Research)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, চিনের এই নতুন পদক্ষেপ আংশিকভাবে অ্যাপেক (APEC) সম্মেলনের আগে কৌশলগত চাপ তৈরিতে ব্যবহার করা হতে পারে। বিশ্বজুড়ে বাজার এখনও এর পুরো প্রভাব বুঝে উঠতে পারেনি। যদি চিন এই নিয়ন্ত্রণ কঠোরভাবে প্রয়োগ করে, তবে আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
রোডিয়াম গ্রুপ (Rhodium Group)-এর এক গবেষণায় জানা গিয়েছে, চিনের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী রফতানি-আমদানি প্রবাহে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। গত দুই দশকে চিনের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে অনেক দেশ শিল্পোন্নয়নের সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু এখন চিনের দুর্বল চাহিদা ও অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা বিশ্ববাজারে মন্দার আশঙ্কা তৈরি করছে।
ভারতের করণীয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতকে এখনই কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। সেগুলো হল- দুর্লভ খনিজ সম্পদে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি, বিকল্প সরবরাহ চেইন তৈরি— যেমন অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যে কৌশলগত ভারসাম্য নিয়ে আসা, দেশীয় শিল্পে ভর্তুকি বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটানো।
কারণ, আমেরিকা-চিন বাণিজ্য উত্তেজনা (US–China trade tensions) কেবল দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বাস্তবতা। ভারতের মত উদীয়মান অর্থনীতির জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল— কীভাবে এই সংঘাতকে সুযোগে পরিণত করা যায়, সেটা দেখা। সেজন্য আত্মনির্ভরতা বাড়ানো এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বজায় রাখার চেষ্টাও ভারতকে করতে হবে।