লকডাউনের পর ফের স্কুল খুলেছে। সংখ্যা কমলেও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও স্কুলে আসছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের মেয়েরা। কিন্তু, হিজাব বিতর্ক ফের অবস্থার বদল ঘটাতে পারে। শুরুতেই থমকে যেতে পারে বহু সংখ্যালঘু মেয়ের স্কুল শিক্ষা। দেশজুড়ে হিজাব বিতর্কের মধ্যেই এমন আশঙ্কা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।
বিতর্কের কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরিধান। শুরু হয়েছিল দক্ষিণী রাজ্য কার্নাটকে। কিন্তু, ক্রমশই বিতর্কে লেগেছে রাজনীতির রং। মামালা এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে। কর্নাটক হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল যে, যতদিন না হিজাব সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে, ততদিন হিজাব-সহ কোনও ধরনের ধর্মীয় পোশাক স্কুল ও কলেজে পরা যাবে না। হাইকোর্টের এই নির্দেশই বহাল রেখেছে সুপ্রিমকোর্ট। অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ঠিক করে দেওয়া পোশাকবিধিই সবাইকে মানতে হবে। পরা যাবে না ধর্মীয় পোশাক। যা অশনি সংকেত বলেই মনে করছেন মধ্যপ্রদেশের রাজধানী শহর ভূপালের নিশাতপুরার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার এক হাইসেকেন্ডারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
ভূপালের নিশাতপুরার সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত এক স্কলে পৌঁছে গিয়েছিল দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিনিধি। ওই স্কুলে মূলত সমাজে আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই পড়ে। মোট পড়ুয়ার প্রায় ৪০ শতাংশই সংখ্যালঘু।
স্কলের প্রধান শিক্ষক এস কে উপাধ্যায় পড়ুয়াদের স্কুলের পোশাক পরিধানে জোর দেন। তবে, হিজাব নিয়ে জোরাজুরিতে নারাজ তিনি। তাঁর কথায়, 'আমাদের লক্ষ্য পড়ুয়াদের মধ্যে শিক্ষার মাধ্যমে জ্ঞানের আলো বিস্তার করা। ধর্ম বা ধর্মীয় পোশাক পড়ুয়ার পরিবার এবং তাঁর নিজস্ব বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। স্কুলের পোশাক প্রয়োজন, আমাদের ছাত্রীরা সেটি পরে, অনেকেই আবার তার উপর হিজাব পরে নেয়। আসলে প্রয়োজেন ড্রপ আউট বন্ধ করা।'
লকডাউনের পর দুস্থ পরিবারের পড়ুয়াদের স্কুলমুখী করাই বিরাট চ্যলেঞ্জ। প্রধান শিক্ষক বলছিলেন, 'করোনা লকডাউনের ফলে অনেকেরই বাবা, মায়ের চাকরি নেই। পেটের জ্বালা মেটাতে কোনও মতে ৫ হাজার টাকার কাজ করছেন। সেই পরিবার থেকে কম হলেও মেয়েরা স্কুলে আসছে। এই সময় ধর্মীয় পোশাক নিয়ে জোরাজোরি করলে বিপদ বাড়বে। হয়তো পরিবারের চাপে স্কুলে আসাই বন্ধ করে দেবে মেয়েগুলো। ফলে বাড়বে ড্রপআউট। আখেড়ে ক্ষতি হবে সমাজের।'
হিজাব নিয়ে ওই স্কুলের ছাত্রীদের কী মত?
১৬ বছরের জোয়া খান। এবার সে বোর্ড পরীক্ষা দেবে। হিজাব পরেই ক্লাস করে সে। আপাতত বিতর্ক সরিয়ে জোয়ার ভাবনায় পরীক্ষার নম্বর। এই মেয়ের পাখির চোখ ব্যাঙ্ককর্মী হয়ে বাবা-মায়ের অবলম্বন হওয়া। জোয়ার পাশেই বসেছিল তাঁর বন্ধু সৃষ্টি শ্রীবাস্তব। সৃষ্টির কপালে লালা টিকা। প্রতিদিন স্কুলে আসার সময় মন্দিরে প্রণামের পর টিকা পরে স্কুলে আসে সে। ধর্ম আলাদা, কিন্তু বন্ধুত্ব বা ক্লাসের পড়াশুনোয় তার প্রভাব পড়নেনি কোনওদিন।
হিজাব কী জোয়া স্বইচ্ছায় পরেন? উত্তরে ছাত্রীটি বলেন, 'পরিবার থেকে কোনও জোড়াজুড়ি নেই। কিন্তু হিজাব পরে হেঁটে স্কুলে আসার পথে আমার সুরক্ষিত মনে হয়। তাই এটা পরে থাকি।' জোয়ার বন্ধু সাদাফের কথায়, 'আমার হিজাব পরতে ততটা ভালো লাগে না। তবে, ওটা না পরলে বাড়ির লোকেরা আমাকে স্কুলে আসতে দেবেন না। কিন্তু স্কুল যদি আমাদের হিজাব পরতে নিষেধ করে, তাহলে আমি হিজাব পরব না। বা স্কুলে প্রবেশের পর খুলে ফেলব। যদিও সেটা বাড়ির লোকেরা জানবে না।'
পুরো বিষয়টি সৃষ্টি শ্রীবাস্তব কীভাবে দেখেন? উত্তরে সে বলে, 'কেউ যদি হিজাব পরে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে তাহলে আমার কোনও অসুবিধা নেই। আমার বান্ধবীরা প্রায়শই হেঁটে স্কুলে আসে এবং ছেলেরা ওদের দিকে তাকায়। যদি একটি স্কার্ফ পরে ওরা সুরক্ষিত বোধ করে, তবে এমন কেউ নেই যার এটি নিয়ে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা।' সৃষ্টির কথায়, 'হিজাব পরতে স্কুলের তরফে কোনও নিষেধাজ্ঞা কোনওদিনই ছিল না। শুধু বলা হয় ইউনিফর্ম পরতে হবে। তার উপর হিজাব পরা যেতে পারে।'
আরও পড়ুন- সতর্ক প্রশাসন, কাল থেকেই উদুপির স্কুলগুলির আশেপাশে ১৪৪ ধারা
Read in English