লোকসভা ভোট ঘিরে উন্মাদনা যখন তুঙ্গে সেই সময়েই মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ‘র্যাঙ্কিং’ (এনআইআরএফ) ২০১৯-এর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় উঠে এল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। গত বছরের মতো এবছরেও একই স্থান দখল করে রাখল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইআইএম কলকাতা।
'এনআইআরএফ ২০১৮' প্রকাশিত তালিকায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল চতুর্দশ স্থানে। সার্বিক তালিকায় সব বিভাগে প্রশংসিত নম্বর নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্বারা প্রকাশিত 'এনআইআরএফ ২০১৯' তালিকায় পঞ্চম স্থানে উঠে এল কলকাতা।
দেশের উত্কর্ষ উচ্চশিক্ষার নানা প্রতিষ্ঠানের মান নির্ধারণের জন্য ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু হয় এনআইআরএফ। কেন্দ্রীয় মানব উন্নয়ন মন্ত্রকের অনুমোদনক্রমে নির্দিষ্ট নানা তথ্য ও সূচকের ভিত্তিতে প্রতি বছর এই মান নির্ধারণ হয়। গতবছর সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— এই তিন বিভাগে যাদবপুর ছিল যথাক্রমে ত্রয়োদশ, ষষ্ঠ এবং দ্বাদশ স্থানে । এ বছরে তাদের স্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে গত বার ছিল যথাক্রমে একুশ ও চোদ্দ নম্বর স্থানে। এবার অনেকটা এগিয়ে দ্বাদশ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে তারা। র্যাঙ্কিং এর দিক থেকে বিচার করলে গত বছর ৪৮নং স্থানাধিকারী বিশ্বভারতী এবছর পিছিয়ে ৫৯নং স্থানে রয়েছে। অপরদিকে, সার্বিক লড়াইয়ের তালিকায় নামই তুলতে পারল না কল্যাণী ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুন একাধিক পেশাদার ডিসট্যান্স কোর্স বাতিল করল ইউজিসি
মান-তালিকায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অনেকখানি উঠে আসায় খুশির মহল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, "উৎকর্ষের নিরিখে আমাদের এই সাফল্য সততই গর্বের। এই সাফল্যর পিছনে রয়েছে সকল শিক্ষক, অধ্যাপক, অশিক্ষক কর্মী এবং শিক্ষার্থীদের অবদান। ভবিষ্যতর তালিকায় আরও উপরের দিকে নিজেদের দেখার ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।"
গত বছর ২০১৮ সালে এই যোগ্যতা নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে যাদবপুর ছিল ষষ্ঠ স্থানে। এ বছরও তাদের স্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি। এই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, "পাবলিক ফান্ডিং এর উপর অনেকটাই নির্ভরশীল আমরা, তাই অনেক বিভাগে মানের বিকাশ যথাযথ ভাবে হয়নি, তবে আগামীতে নিজেদের তালিকার উপরের দিকেই দেখতে চাই নিজেদের।
প্রসঙ্গত গত বছর সার্বিকভাবে এবং সেরা দশ ইঞ্জিনিয়ারিং এর তালিকায় আইআইটি খড়্গপুর ছিল যথাক্রমে পঞ্চম ও তৃতীয় স্থানে, এবছর সার্বিকভাবে রয়েছে চতুর্থ স্থানে।
আরও পড়ুন নতুন শিক্ষাবর্ষে সিলেবাসে থাকবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স
কলেজগুলির মধ্যে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ গত বছর ষষ্ঠ স্থানে থাকলেও এবারে তারা পেয়েছে দশম স্থান। বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির গত বছর ছিল নবম স্থানে এবছর দু'ধাপ পিছিয়ে তারা রয়েছে একাদশ স্থানে। তবে এই মান-নির্ধারণের লড়াইয়ে নিজেদের র্যাঙ্কিং এ খুশি বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির এবং প্রধানশিক্ষক স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানন্দ সেই প্রসঙ্গে বলেন," মান নির্ধারনের এই লড়াইয়ে প্রাপ্ত নম্বরের নিরিখে সবাই খুব কাছাকাছি রয়েছি তাই একাদশ স্থান নিয়ে দুঃখ নেই আবার অনেকের থেকে এগিয়ে আছি বলে তা নিয়ে উৎফুল্লও নই। এই তালিকায় কেউ খারাপ নয় তাই প্রত্যেক কলেজের থেকেই ভাল কিছু শেখার চেষ্টা করব এবং সন্মিলিতভাবে সকলে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করব।"
আইআইএম কলকাতা ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে গত বছর ছিল তিনে। এ বারেও তাই। সার্বিকভাবে তারা ৩৪নং থেকে উঠে এসে ২৬নং স্থানে রয়েছে তারা। এবছর আইআইএম কলকাতা থেকে সদ্য ডক্টরেট পাওয়া অদ্রিজা মজুমদার জানালেন," আমি প্রচণ্ড খুশি এই খবরে এবং বেশ কিছু বছর ধরে রিসার্চের ক্ষেত্রে, পারসেপশনে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেভাবে এগিয়ে চলেছে আইআইএম কলকাতা তা অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। আগামী দিনে আরও উপরের দিকেই থাকতে চলছে আইআইএম কলকাতা"।