সারাদিনের বিক্ষোভের পর কনভোকেশন বাতিল ঘোষণা করলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দরজা আটকে ঠায় বসে রইলেন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা, কাজেই কালকের কোনও কাজই হল না। শেষে কনভোকেশন বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হন কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর আগে দেখা যায়, তালা ঝুলছে প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টে, ইতস্তত বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শিক্ষক কর্মীরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে বড়ো বড়ো করে লেখা বার্তা, ''ক্লোজড, প্রেসি বন্ধ, হস্টেল মেরামতির কাজ চলছে।'' ওদিক থেকে স্লোগান তুলছেন আন্দোলনকারীরা। সোমবার সকালে প্রেসিডেন্সি চত্বরের ছবিটা ছিল এমনই। বন্ধের বাজারেও কার্যত ধুন্ধুমার বাঁধল বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবিলম্বে হিন্দু হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট আটকে অবস্থানে বসেন হিন্দু হস্টেলের বোর্ডাররা। তাঁদের দাবি, তাঁরা নিজেরাই গিয়ে দেখে এসেছেন, দুটি ব্লকের কাজ প্রায় শেষ, কাজেই প্রায় ১৫০ জনের থাকার জায়গায় এখনই জায়গা দেওয়া হোক ৫০ জনকে।
আরও পড়ুন: হিন্দু হস্টেল না মিললে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাবেন প্রেসিডেন্সির ছাত্ররা
এদিন সকাল থেকে গেট আটকে রেখে কলেজে কাউকেই ঢুকতে দিলেন না আন্দোলনরত পড়ুয়ারা। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া সহ অন্যান্য শিক্ষক ও কলেজের কর্মীরা বিক্ষোভের মুখে পড়ে ফিরে গিয়েছেন এদিন। অন্যান্য শিক্ষকদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেটের বাইরে থেকেই ফিরে গেছেন উপাচার্য। তিনি জানান, "আমি কখনই পুলিশ দিয়ে বিক্ষোভ তুলে ভিতরে ঢুকব না। কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় অচল হয়ে যেতে পারে না। তবে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। সেই উপলক্ষে আজ জিবির মিটিং ছিল। ঢুকতে না পারলে সেই মিটিং-ও হবে না।"
বিক্ষোভের মুখে উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া
ভূগোল বিভাগের এক স্কলার ছাত্রীর কথায়, ''আজ আমাদের ফেলোশিপের ফর্ম ফিল-আপ ছিল, এছাড়াও আমার দুটো বইও অফিসে পড়ে রয়েছে। কোনও কাজই হল না, একটা দিন নষ্ট হল শুধু। তবে ওদের দাবিটাও ফেলে দেওয়া যায় না, হস্টেলের দাবিও ন্যায্য।" আন্দোলনকারী ছাত্র আত্মজের কথায়, ''কনভোকেশন পণ্ড হোক আমরা চাই না, কিন্তু কনভোকেশনের কোনও ব্যাঘাত ঘটলে তা কর্তৃপক্ষের দোষেই হবে, এতে আমাদের কিছু করণীয় নেই।''
হস্টেল না পেলে কোনও পরিস্থিতেই অবস্থান বিক্ষোভ তুলবেন না বলেই সাফ জানিয়েছেন ছাত্ররা। এক অধ্যাপকের কথায়, ''আজ অফিস না খুলতে পারলে কাল কী হবে জানা নেই, ছাত্ররাও বুঝতে চাইছে না এতে আমাদের কিছু করার নেই।'' সব মিলিয়ে আরও কঠিন মোড় নিল প্রেসিডেন্সির আন্দোলন। রাতারাতি সমস্যার সমাধান করে দিয়ে হস্টেল হস্তান্তর করা আদৌ সম্ভব কিনা, এদিকে আগামিকালের কনভোকেশনও সফল হল না এ যাত্রায়।
প্রসঙ্গত, প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী এখনও দিন কাটাচ্ছেন প্রেসিডেন্সির করিডোরেই। ডাঃ লোহিয়া ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কারের কাজ শেষ করে ১ অগাস্টের মধ্যে হোস্টেল ফেরত দেওয়ার কথা লিখিতভাবে জানালেও ছাত্রদের বক্তব্য, নির্ধারিত দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর জানা যায়, হস্টেল সংস্কারের কাজ এখনও কিছুই এগোয়নি।ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, তিন বছর আগে হিন্দু হস্টেল সারানোর অজুহাতে ১১ মাস সময় চেয়ে রাজাবাজার আবাসিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের। তবে তিন বছর কেটে গেলেও হস্টেলের কোনও উন্নতি দেখতে পাওয়া যায়নি।