অবশেষে জটমুক্ত হল ঐতিহ্যবাহী হিন্দু হস্টেল। ওয়ার্ড ১ এবং ২, অর্থাৎ বিল্ডিং ১-এর কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সোমবারই মিলেছে পূর্ত দফতরের ছাড়পত্র৷ ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলে আসন বন্টনের নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য ডাঃ অনুরাধা লোহিয়া। ছাত্রছাত্রীদের তরফে জানানো হয়েছে, আগামিকালই রাজারহাট হস্টেল থেকে হিন্দু হস্টেলে চলে আসবেন মোট ৬৪ জন পড়ুয়া, শুরু হয়েছে তার প্রস্তুতি। মিছিল, মিটিং, অনশনের মতো একাধিক বাধা অতিক্রম করে দীর্ঘ তিন বছর পর জয়ের মুখ দেখায় অবশ্যই খুশি তাঁরা।
আরও পড়ুন: হিন্দু হস্টেল না মিললে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাবেন প্রেসিডেন্সির ছাত্ররা
বরাদ্দ সময়ের পরেও হস্টেল না মেলায় গত ১৬ নভেম্বরই ফের বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন পড়ুয়ারা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে নতুন করে বৃহত্তর আন্দোলনে পা বাড়াবেন আন্দোলনকারীরা।
১৮৮৬ সালে তৈরি হয় এই হস্টেল। স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডাঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ এই হস্টেলে থেকেই পড়েছেন৷ দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল শতাব্দী প্রাচীন আবাসন৷ অবশেষে রাজ্য সরকার হস্টেলটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, তিন বছর আগে হিন্দু হস্টেল সারানোর অজুহাতে ১১ মাস সময় চেয়ে রাজাবাজার আবাসিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের। তবে তিন বছর কেটে গেলেও হস্টেলের কোনও উন্নতি দেখতে পাওয়া যায়নি।
এভাবেই জমেছিল অভিযোগের পাহাড়। অবশেষে অগাস্টের প্রথম সপ্তাহেও হোস্টেল ফেরতের দাবিতে উত্তাল হয়েছিল প্রেসিডেন্সি। এমনকী আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নেয় আন্দোলনকারীরা। ঘটনার জের এতদূর গড়ায় যে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নেন উপাচার্য। সাংবাদিক বৈঠকে ডাঃ লোহিয়া জানিয়েছিলেন, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোন আপোস করবেন না তিনি।হস্টেল সংস্কারের কাজ করছে পিডব্লুডি৷ সংস্কারের পর ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে হস্টেল হস্তান্তরের কথা ছিল৷ কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি পূর্ত দপ্তর৷ তাই ছাত্রদের হস্টেল দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পাশাপাশি এদিন হস্টেলের কাজ শেষ করার জন্য চার-পাঁচ মাস সময়ও চেয়ে নিয়েছিলেন উপাচার্য।
তবে আন্দোলনে অনড় ছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, একাধিকবার সংস্কারের জন্য বরাদ্দ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনই একাধিক জটিলতায় চলতে থাকে চাপানউতোর। বেশ কয়েকজনকে সাসপেন্ডও করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। তবে শেষ পর্যন্ত মধুরেণ সমাপয়েত। দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের লড়াইয়ের পর ঐতিহ্যবাহি হস্টেলে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন প্রেসিডেন্সির ছাত্ররা।