আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরাও পারবেন এম ডি রেডিওলজিতে যোগ দিতে, অর্থাৎ আয়ুর্বেদের যাঁরা স্নাতক, তাঁরাও পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন প্রবেশিকায় বসতে পারবেন। সম্প্রতি এমনই একটি নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে এই সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করছেন মডার্ন মেডিসিনের চিকিৎসকরা, চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চিকিৎসক মহলে।
এমসিআই-এর আইন অনুযায়ী, যে সমস্ত এমবিবিএস চিকিৎসকদের মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াতে রেজিস্ট্রেশন আছে তাঁরাই কেবল পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করতে পারেন, এ ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথ বা ইউনানি বা অন্য কোনও বিষয়ের কেউ আসতে পারেন না। পাশাপাশি NEET পরীক্ষা দিয়েই পেতে হয় রেডিওলজিস্টের পদ, অথচ এই পরীক্ষায় বসার সর্বনিম্ন যোগ্যতা এমবিবিএস। এইরকম অবস্থায় কিভাবে একজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক রেডিওলজিতে সুযোগ পান, এই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কাজেই তাঁদের বক্তব্য, BAMS চিকিৎসকদের এই অধিকার দিতে হলে মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার আইনে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করতে হবে। যা কখনই করতে দেবেন না এমবিবিএস চিকিৎসকরা।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির অভিযোগ উঠল ইউনানি মেডিক্যাল কাউন্সিলের বিরুদ্ধে
এই নির্দেশিকা জারি হওয়ায় কটাক্ষের তীর গিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই। আসন্ন লোকসভা ভোটের জন্যই মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বর্তমান সরকার, এমনটাই অভিযোগ চিকিৎসকদের। শুধু তাই নয়, দেশকে "পাঁচ ছয় হাজার" বছর পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত করছে সরকার, এমনও অভিযোগ এনেছেন তাঁরা।
পাশাপাশি, এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর এমবিবিএস এবং রেডিওলজিস্টরা বলছেন, অল্প খরচে চিকিৎসা হলে সরকারের চাপ কমবে, এবং একইসঙ্গে মানুষের ক্ষোভের উৎসমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, এতে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানটা পুরোটাই শেষ হয়ে যাবে। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হবে লক্ষাধিক মানুষের। রেডিওলজিস্ট ডাঃ রেজাউল করিমের কথায়, ''এমবিবিএসের অনেক প্রোটোকল রয়েছে, রেডিওলোজিতে যে সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে চর্চা করা হয়, সেই ব্যাকগ্রাউন্ড নলেজ আয়ুর্বেদ, ইউনানির বা অন্য কোনও চিকিৎসকের থাকতেই পারে না।'' তিনি আরও বলেন, "আইনের বিরুদ্ধে কাজ হচ্ছে। দেশের চিকিৎসক সমাজ তা কখনওই মেনে নেবে না।''
মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ অশোক ভদ্রের কথায়, ''স্নাতকোত্তর প্রবেশিকায় অসাধারণ রেজাল্ট না করলে, বা প্রথম কয়েকজনের মধ্যে না থাকলে রেডিওলোজি নিয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায় না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার গত ৪০-৪১ বছরের কেরিয়ারে আমি কখনই কোনও আয়ুর্বেদের BAMS-কে এই ক্ষেত্রে আসতে দেখিনি। কাজেই হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কীভাবে সম্ভব হল আমার জানা নেই।''
আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডাঃ অনির্বান ভট্টাচার্য বলেন, ''এটা বেশ ভাল পদক্ষেপ। আসলে BAMS এবং এমবিবিএস সমতুল্যই। আমাদের কাজও প্রায় একই। কাজেই এদের সমান মর্যাদাই দেওয়া উচিৎ। আয়ুর্বেদ চিকিৎসা চলে আসছে দীর্ঘদিন। খুব সামান্য কিছু পার্থক্য থাকতে পারে আলোপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদে। আয়ুর্বেদ এমডির মর্যাদা পেলে লাভবান হবেন সাধারণ মানুষও। গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে চিকিৎসা আরও সহজলভ্য হবে। এখন তো গ্রামের দিকে এমনিই তথাকথিত বড়ো ডাক্তাররা যেতে চান না। কাজেই এই সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই মনে করছি আমি।"
তবে মডার্ন মেডিক্যাল সায়েন্সের চিকিৎসকের একাংশ সাফ জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপের কোনও ভিত্তিই নেই, মানুষকে "ভুল চিকিৎসায় মরতে" দেবেন না তাঁরা। প্রয়োজনে দেশব্যাপী আন্দোলন হবে, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এমন সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না।মেডিক্যাল কাউন্সেলিং-এর ওপর কেন্দ্রীয় সরকার কোনওরকম চাপ সৃষ্টি করলে প্রয়োজনে পাল্টা "আক্রমন" করবেন বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।