হিজাব বিতর্কে তুলকালাম কর্নাটক। এই পরিস্থিতিতে টানা তিন দিন স্কুল, কলেজে ছুটিও দিয়েছে কর্নাটক সরকার। এই পোশাক বিতর্ক গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এদিকে হিজাব বিতর্ক নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকাররে বক্তব্য, 'ধর্মীয় পোশাক স্কুলের বাইরেই থাকা উচিত। শিক্ষার সঙ্গে ধর্মকে মেশাতেই চাই না।' অন্যদিকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির কথায়, 'ধর্ম সম্প্রদায়ের ড্রেস কোড বারন করার কোনও অধিকার নেই।' তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সুরঞ্জন দাস এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
কর্নাটেকর হিজাব বিতর্ক ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র। বুধবার কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হিজাব পরেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন ছাত্রীরা। তাছাড়া কর্নাটকের আশপাশের রাজ্যেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'পোশাকের ব্যাপারে স্কুলের ইউনিফর্ম থাকে তাহলে সেই ইউনিফর্ম পরা উচিত। আমি মনে করি যে কোনও ধর্মীয় পোশাক স্কুলের বাইরেই থাকা উচিত। সে হিন্দু হোক, ইসলাম হোক বা খ্রিস্টান হোক। শিক্ষার সঙ্গে ধর্মকে মেশাতেই চাই না।'
কর্নাটকের ঘটনা প্রসঙ্গে পবিত্র সরকার বলেন, 'একটা মেয়েকে তাড়া করেছে এটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এভাবে ভয়ঙ্কর জায়গা তৈরি হয়।' শিক্ষাবিদের স্পষ্ট মত, 'আমি ধর্মে বিশ্বাসী নই। যাঁর বিশ্বাস তাঁর কাছে। আমি সব ধর্মকে শ্রদ্ধা করি। শিক্ষার সঙ্গে ধর্মীয় আচার-আচরণ মেশাতে চাই না।'
তবে অধ্যাপক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরায় কোনও ভুল কিছু দেখছেন না। বরং বাধা দেওয়ায় তিনি আশ্চর্য হয়েছেন। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'একজন সন্ন্যাসী তিনি তাঁর পোশাকে আসছেন। আমরা কী সেখানে বলব এখানে ইউনিফর্ম আছে এখানে তুমি এটা পরবে না? এটা করতে পারি না। আমার দু'বছরের জুনিয়র অরিন্দম চক্রবর্তী। তাঁর যৌবনকাল কেটেছে গেরুয়া পোশাক পরে। তিনি কলেজে আসতেন ওই পোশাক পরে, কারও আটকানোর ক্ষমতা ছিল না। অক্সফোর্ডে কলেজে যাওয়ার সময়ও গেরুয়া পরে যেতেন অরিন্দম। অক্সফোর্ডের অধ্যাপকরা তাঁকে ওই পোশাকে আসতে নিষেধ করেননি। এখন মানোয়ার ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াইতে আছেন।'
তাঁর মতে, 'সম্প্রদায়ের একটা পোশাক আছে, হিজাবের ব্যাপার আছে। পরুক তাঁরা। ধর্ম সম্প্রদায়ের ড্রেস কোডের ক্ষেত্রে বারন করার কোনও অধিকার নেই। করতে পারি না।' তবে এই পোশাকের প্রচলন উঠে যাওয়ার ব্যাপারে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, 'আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি মুসলিম আইনে উদারতার দিক থেকে এগুলো উঠে যাওয়া উচিত। হিজাব উঠে যাওয়ার দরকার।' এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ড্রেস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, 'একজন সন্ন্যাসী কখনও রাজনীতি করেন। পূর্বে কখনও কোনও ঋষি কি রাজনীতি করেছেন।'
ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, হিজাব পরিহিতা এক ছাত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকছেন। একদল গেরুয়া উত্তরীয় পরিহিত যুবক স্লোগান দিচ্ছেন। পাল্টা স্লোগান দিচ্ছেন ওই ছাত্রীও। এই ঘটনার পরই বিতর্ক দানা বেধেছে সারা দেশজুড়ে।