টিভির মাধ্য়মে পড়াশোনা! পড়ুয়াদের পক্ষে আদৌ লাভদায়ক? কী বলছে শিক্ষামহল?

মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনায় টেলিভিশনের পর্দায় আয়োজন করা হয়েছে পঠনপাঠন প্রক্রিয়া।

মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনায় টেলিভিশনের পর্দায় আয়োজন করা হয়েছে পঠনপাঠন প্রক্রিয়া।

author-image
Anurupa Chakraborty
New Update
TV Education

প্রতীকী ছবি

দুই বছরের মধ্যে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের দরজা খোলা-বন্ধের মধ্যে দিয়েই কেটেছে। শিশুদের মধ্যে স্কুল নিয়ে যেন এক অনীহার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মধ্যে কর্তব্য এবং পড়াশোনার প্রতি দায়িত্ব বোধ হারাচ্ছে দিনের পর দিন। লেখাপড়ার নামে যেন তাদের গায়ে জ্বর আসার অভিপ্রায়। অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে পঠনপাঠন কার্যক্রম চলেছে অনেকদিন। তবে দিন কয়েক আগেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে টেলিভিশনের পর্দায় আয়োজন করা হয়েছে পঠনপাঠন প্রক্রিয়া। তাতে নিয়মমাফিক পড়াশোনা পদ্ধতি তথা নানান বিষয় সম্পর্কে এক ঘণ্টার জন্য আলোচনা করা হচ্ছে। 

Advertisment

সোম-বুধ এবং শুক্র থাকছে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস, এবং মঙ্গল-বৃহস্পতি থাকছে দশম শ্রেণির ক্লাস। সাধারণত পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমেই বিষয় সাপেক্ষে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা ফোন কল এবং মেসেজের মাধ্যমে প্রশ্ন করতে পারছেন, স্টুডিওতে বসে থাকা শিক্ষকরা সেটির উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে আলোচ্য বিষয় হল আদৌ এইভাবে সম্ভব? পঠনপাঠনের মতো একটি বিষয়কে এতদূর থেকে বোঝানো সম্ভব কি, এই প্রসঙ্গেই কথা বলা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। 

যথেষ্ট সংকোচ প্রথম থেকেই প্রকাশ করেছিলেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। এক্ষেত্রেও তাঁর বক্তব্য, "যদিও বা উদ্যোগটি ভাল তারপরেও এত দূর থেকে ছাত্রদের পড়াশোনা করানো সম্ভব নয়। মোবাইলের থেকে টিভির জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার অনেকটা বেশি। তারপরেও শুধু সাধারণ নাগরিক নয়, তফসিলি থেকে আদিবাসী কিংবা যারা আদ্যোপান্ত বস্তির বাসিন্দা তাদের কথা চিন্তা করা অবশ্যই প্রয়োজন। বোঝার বিষয় রয়েছে, কমিউনিকেশন সমস্যা দেখাতে পারে।" তাই চেষ্টা হলেও বাচ্চাদের খুব একটা সুবিধা হবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি। 

অন্যদিকে এবিভিপির রাজ্য সম্পাদক সুরঞ্জন সরকার জানিয়েছেন, "শিক্ষকরা যেখানে ওপেন এয়ার ক্লাসরুম খুলতে ইচ্ছুক সেখানে সমস্যা থাকার কথা নয়। টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে অনেকের অসুবিধা হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ হাতে ধরে পড়ানো, বিজ্ঞান বিষয় বোঝানো এগুলি খুব দরকার, নইলে পরবর্তীতে অসুবিধা। যেখানে অনলাইনেই এত অসুবিধা ছেলেমেয়েরা ভোগ করেছেন সেখানে কিন্তু এতে প্রচণ্ড সুবিধা হবে বলে মনে হয় না।" শুধু তাই নয়, তিনি বলেন, শিক্ষক নিয়োগ করা হোক, বাচ্চাদের পঠনপাঠন অবিলম্বে স্কুলে গিয়ে শুরু করা হোক। 

Advertisment

আরও পড়ুন স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই, একাদশ-দ্বাদশের ফি দেওয়া যাবে অনলাইনে, জানুন পদ্ধতি

পঠনপাঠনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত শিক্ষকমহল, তারা আদৌ এই প্রক্রিয়াকে ঠিক মনে করেছেন কি? বা তাদের মতামত অনুযায়ী এভাবে কতটা শিখতে পারে শিক্ষার্থীরা? সাউথ পয়েন্ট স্কুলের শিক্ষিকা সোহাগ কানুনগো বলছেন, "বাচ্চারা টিভি মানেই বোঝে আমাদের বিষয়বস্তু। টিভির দিকে ধ্যান দিয়ে ওরা পড়াশোনা করবে এটা ভাবাই বেশ সমস্যার। সবথেকে বড় কথা অনুষ্ঠান চলাকালীন যখন কোনও শিক্ষক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন তাতে মাঝে মধ্যে ছেদ পড়ছে ফলেই রেশ কেটে যাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট টপিক থেকে অন্যটিতে যাওয়া তাও আবার লিংক না রেখে, বুঝতে যথেষ্ট অসুবিধে হয়।" হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের শিক্ষক শ্রী শুভ্র চক্রবর্তী বলছেন, "যতই বাচ্চারা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করুক কিংবা শিক্ষকরা টেলিভিশনে বোঝানোর চেষ্টা করুক, বিজ্ঞান বিষয়ক সবকিছুই হাতে ধরে শেখাতে হয়। অনেক রকম পদ্ধতি আছে, ট্রিকস রয়েছে - জাম্প মেরে চলে যাওয়া সম্ভব নয়। শিক্ষকরা যথেষ্ট চেষ্টা করছেন বোঝানোর, তবে যেকোনও ক্ষেত্রে ওদেরকে সড়গড় করা প্রয়োজন এবং সেটা টিভির মাধ্যমে সম্ভব নয়।" 

সুতরাং তাঁদের কথাতেই পরিষ্কার, ছেলে মেয়েদের জন্য সবথেকে দরকারি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পঠনপাঠন। নইলে বেজায় মুশকিল। চক ডাস্টার এবং ব্ল্যাকবোর্ড নিয়ে যে কাজ সম্ভব আর কোনওভাবেই সম্ভব নয় বলেই তাদের বিশ্বাস।

Education school education expert Television