শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে পড়ানোর নয়া নিয়মে উদ্বিগ্ন শিক্ষা মহল

এমন সিদ্ধান্তে কপালে ভাঁজ শিক্ষামহলের একাংশের, বেশিরভাগই নিয়মটিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন। শহরের কোনও স্কুলেই কাগজে কলমে এই নয়া নির্দেশিকা না পৌঁছালেও, খবর পৌঁছে গিয়েছে সর্বত্রই।

এমন সিদ্ধান্তে কপালে ভাঁজ শিক্ষামহলের একাংশের, বেশিরভাগই নিয়মটিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন। শহরের কোনও স্কুলেই কাগজে কলমে এই নয়া নির্দেশিকা না পৌঁছালেও, খবর পৌঁছে গিয়েছে সর্বত্রই।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বসে নয়, শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে পড়াবেন শিক্ষকরা।

শ্রেণিকক্ষে চেয়ারে বসে নয়, ক্লাসে পড়ানোর সময় পুরোটা সময়ই দাঁড়িয়ে পড়াবেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।এবার সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শ্রেণিকক্ষে খুব তাড়াতাড়িই এই ছবির দেখা মিলতে চলেছে। শহরের বেসরকারি কিছু স্কুল এবং শহরের বাইরের বেশ কিছু স্কুলে এই নিয়ম ইতিমধ্যেই বলবৎ থাকলেও রাজ্যের সমস্ত স্কুলে এখনও এই নিয়ম চালু হয়নি।

Advertisment

সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য বসার চেয়ার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলা স্কুলশিক্ষা দফতর। ওই জেলায় প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে প্রায় ছ’হাজার স্কুলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই নিয়ম চালু হতে চলেছে। কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, ক্লাসের পিছনের দিকে যে পড়ুয়ারা বসে থাকে তাদের ঠিকমতো চোখে চোখে রাখা বা তাদের কাছেও যেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা পৌঁছতে পারেন, সে কারণেই এই নয়া উদ্যোগ।

তবে এমন "হঠকারী সিদ্ধান্তে" কপালে ভাঁজ শিক্ষামহলের একাংশের, বেশিরভাগই নিয়মটিকে অযৌক্তিক বলে দাবি করেছেন। শহরের কোনও স্কুলেই কাগজে-কলমে এই নয়া নির্দেশিকা না পৌঁছালেও, খবর পৌঁছে গিয়েছে সর্বত্রই। অভিযোগ, এখন শিক্ষকদের কুক্ষিগত করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের দাবি, বোর্ড স্বশাসিত সংস্থা, এটা বাইরে থেকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

Advertisment

আরও পড়ুন: মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র খোলা হবে পরীক্ষার্থীদের সামনেই, স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত করতে দাওয়াই পর্ষদের

অল বেঙ্গল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এবিটিএ) রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, "বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি, শিক্ষকরা চেয়ারে বসবেন না দাঁড়িয়ে পড়াবেন, এমন একাধিক বিষয় মুখ্য হয়ে দাঁড়ালেও আসল দিকটা, অর্থাৎ পঠনপাঠনের মান কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, ভাল প্রশিক্ষণ ইত্যদির বিষয়ে ভাবা হচ্ছে না। অথচ পড়াশোনার বিষটাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা জানেন, ছাত্রছাত্রীদের কীভাবে সেরা প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এই দাঁড়িয়ে পড়ানোর নতুন নিয়মে শিক্ষা ক্ষেত্রে আলাদা করে কোনও লাভ হবে না। একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার পড়ানোর ধরন এভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না একেবারেই। দাঁড়িয়ে পড়ালেই দারুণ পঠনপাঠন হবে, একথা একেবারেই অযৌক্তিক।"

উত্তর কলকাতার এক স্কুল শিক্ষিকার কথায়, "এটা নতুন নিয়ম নয়, এর আগেও বেশ কিছু স্কুলে এই নিয়ম রয়েছে। তবে এখন এই নির্দেশিকা মানা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে বিভিন্ন কারণেই সম্ভব হয় না, কারণ আগে শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাজ ছিল শুধুই পড়ানো। তবে বর্তমানে পড়ানো ছাড়াও একাধিক কাজ তাঁদের করতে হয়, অর্থাৎ সারাদিনই তাঁদের কোনও না কোনও ডিউটি থাকে। আমরা কেন দাঁড়িয়ে পড়াই না তার পিছনেও যে কারণটা রয়েছে, সেটা জানা দরকার।"

শহরের স্কুলে পড়াতে দূর দূরান্ত থেকে আসেন বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা, তাঁদের পক্ষে প্রতিটা পিরিয়ডে একভাবে দাঁড়িয়ে পড়ানো সত্যিই সমস্যার বলে মনে করছেন অনেকেই। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগে একাধিক সমস্য হওয়ায়, বাড়তি ক্লাসও নিতে হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, সেক্ষেত্রে একভাবে দাঁড়িয়ে পড়ানোর এই নির্দেশিকা ভাবাচ্ছে তাঁদের।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের রায়ের বিরুদ্ধে ফের আবেদন দাখিলের পথে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক

এরপরেও অভিযোগ রয়েছে একাধিক। শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, সরকারি স্কুলে যথেষ্ট প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোই নেই। কম্পিউটর, এক্সেলের যুগে দাঁড়িয়েও পাতার পর পাতা হাতে লিখতে হয়। শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় বাড়তি ক্লাস নিতে হয় বেশিরভাগ সময়ই। কাজেই সব মিলিয়ে শারীরিক ধকল কম পোহাতে হয় না। ফলে শিক্ষামহলের বক্তব্য, অযৌক্তিক নিয়ম চালু না করে গোড়ার গলদ মেটালেই সঠিক প্রশিক্ষণ পাবে পড়ুয়ারা। শিক্ষকদের কথায়, চেয়ার থাকুক না থাকুক, আদৌ কিছু যায় আসে না, শিক্ষক-শিক্ষিকারা দায়িত্ব কর্তব্য পালন করবেন ছাত্রদের স্বার্থেই।

Education