/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/05/page-4.jpg)
কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মদন মিত্র
লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফাতেও রাজ্য জুড়ে বহাল রইল অশান্তির আবহ। সারাদিন ধরে চলল শাসক-বিরোধী গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এবারের লোকসভা নির্বাচনের মাঝেও সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল ভাটপাড়ার বিধানসভা উপনির্বাচন নিয়েই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত সৈনিক মদন মিত্র এবং এই অঞ্চলের মুকুটহীন সম্রাট অর্জুন সিংয়ের পুত্র পবনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে ভোটের আগের রাত থেকেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ভাটপাড়া।
রবিবারের সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভোটপর্ব চলতে থাকলেও বেলা গড়াতেই চড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের কাঁকিনাড়ার একটি স্কুলে "ফলস ভোট" দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। বুথ পরিদর্শনের জন্য কাঁকিনাড়া হাইস্কুলের ৩৭নং বুথে ঢুকতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসা চলে মদন মিত্রের, বুথে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় তাঁকে। ঘটনাস্থলে লাঠিচার্জ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। কেন্দ্রীয় বাহিনীর লাঠিচার্জে জখম হন একজন পুলিশকর্মী এবং মদন মিত্রের একজন নিরাপত্তা রক্ষী। এই ঘটনায় সিআরপিএফের জওয়ানদের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন তৃণমূলের নেতা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, মদন মিত্রকে বাঁচাতে এবং বুথের সুরক্ষা বজায় রাখতেই এই লাঠিচার্জ করে তারা।
আজ ভাটপাড়া উপনির্বাচনে ব্যাপক হিংসার সাক্ষী হয়ে রইল কাঁকিনাড়া সহ সমগ্র অঞ্চল। আমাদের চিত্রগ্রাহক শশী ঘোষের ক্যামেরায় ধরা পড়ল খণ্ডযুদ্ধের খণ্ডচিত্র। আরো জানতে পড়ুন https://t.co/LR7qbvbzPupic.twitter.com/DUlqmrPUgB
— IE Bangla (@ieBangla) May 19, 2019
এরপরেই কার্যত দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হয় কাঁকিনাড়া এলাকায়। মদন মিত্রের গাড়ি স্কুল ছাড়িয়ে কাটাপুকুর এলাকায় আসতেই শুরু হয় ব্যাপক বোমাবাজি। তারপর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের জীপে, ভেঙ্গে দেওয়া হয় বিজেপি-তৃণমূল উভয় দলের ক্যাম্প। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় একটি গুদামঘরে। এমতাবস্থায় মদনের গাড়ি এলাকা ছাড়িয়ে নয়াবাজারে পৌঁছলে সেখানেও চলে বোমাবাজি, ভাঙচুর চালানো হয় বিভিন্ন দোকানে। আক্রমণ করা হয় পুলিশ ফাঁড়ি। পরিস্থিতির অবনতির কথা ভেবে ফাঁড়ি থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে দেওয়া হয় মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারদের। শাসক এবং বিরোধী, উভয় পক্ষের বিরুদ্ধেই উঠেছে অভিযোগ।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/05/7ab82d3c-6749-4bb6-b7ff-d17d2468d81d.jpg)
আরও পড়ুন: হাফপ্যান্ট-বারমুডা-হটপ্যান্ট পরে সব ঢুকে পড়ছে: মদন মিত্র
এদিকে টালমাটাল পরিস্থিতির মাঝেই কাঁকিনাড়ায় হাজির হন অর্জুন সিং। "দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল, হিন্দুদের বাড়িতে বোমা মারা হয়েছে," এই অভিযোগ এনে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তা-ধ্বস্তিতেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। ততক্ষণে মুহুর্মুহু বোমাবাজিতে কাঁপছে গোটা এলাকা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় নামানো হয় র্যাফ, আসেন পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। ভোট পরবর্তীতেও থমথমে চেহারা নেয় সমগ্র ভাটপাড়া এলাকা। পুলিশ সূত্রের খবর, কাঁকিনাড়ার ৩৭ নং বুথে একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধকে নিয়ে এসেছিল বছর পনেরোর একটি মেয়ে। সেখান থেকেই ওঠে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ। তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে শুরু হয় বাদানুবাদ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ভাটপাড়ায় আসেন আইজি সাউথ বেঙ্গল সঞ্জয় সিং।
আরও পড়ুন:ভোট দিলেন মমতা, সিআরপিএফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সমগ্র ঘটনাটি নিয়ে তদন্তের দাবি করতে কাঁকিনাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে আসেন মদন মিত্র। ভোট পরিস্থিতি নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূল নেতা জানান, "কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে করে নিয়েই ছাপ্পা ভোট করেছে বিজেপি। আগের রাতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ফূর্তির ব্যবস্থা করে অর্জুন সিং অ্যান্ড কোম্পানি।" পুননির্বাচনের প্রশ্নে মদনের জবাব, "বেশিরভাগ কেন্দ্রে বিপুল হারে ছাপ্পা ভোট পড়েছে। তবে রি-পোলের সিদ্ধান্ত দল নেবে। এখানে যে আগে থেকেই প্রচুর পরিমাণে গুলি-বোমা মজুত করে রাখা হয়েছিল সেই খবর আমি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছিলাম, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন।"
অন্যদিকে অর্জুন সিং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানান, "দুপুর দুটো নাগাদ যেই বুঝতে পারল যে ওরা হারবে, অমনি বোমাবাজি শুরু করল। যা বোমা মারা হয়েছে সব তৃণমূলের পক্ষে। তবে এসব করে কোনো লাভ নেই। জিতব আমরাই।"
পুলিশ সূত্রের খবর, ভোটকে কেন্দ্র করেই অনেক বহিরাগতরাও হাজির হয়ে এলাকা অশান্ত করে তোলে। বোমাবাজির সঙ্গে সঙ্গে গুলিও চলে এই বিধানসভা কেন্দ্রে। গুলিবিদ্ধ হন তিনজন, আহতদের তৎক্ষণাৎ কল্যাণী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মদন মিত্র দাবি করেন, ওই তিনজনের মধ্যে দুজনই তৃণমূলের "একনিষ্ঠ" কর্মী।