"রবিবার নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করতে মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া সহ নানা জেলা থেকে দাগী অপরাধীদের এনে জড়ো করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ওই অপরাধীদের বিভিন্ন হোটেল, বিয়েবাড়িতে রাখা হয়েছে। সপ্তম দফার নির্বাচনে অশান্তি পাকাতে চাইছে তৃণমূল।" শনিবার হাওড়ায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই অভিযোগ করেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়।
বিজেপির রাজ্য দপ্তর কলকাতার ৬ মুরলিধর লেনে অবস্থিত। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ কলকাতার বাইরের ভোটার। নিয়মানুযায়ী রবিবার তাঁরা কলকাতায় রাজ্য দপ্তরে আসতে পারবেন না। তাই হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার বেলিলিয়াস রোডে অস্থায়ী নির্বাচনী দপ্তর করেছে বিজেপি। সেখানে সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায় অভিযোগ করেন, "রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক সহ পুলিশ-প্রশাসন শাসকদলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। যাতে ভোট দিতে না পারে তাই গ্রামের পর গ্রাম থেকে মানুষকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। শাসকদলের সমাজবিরোধীরা দাপিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।"
আরও পড়ুন: ১ কোটি টাকা-সহ ধৃত দিলীপ ঘোষের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক
রবিবার সাত দফার শেষ দফায় এরাজ্যে নয়টি আসনে নির্বাচন। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল, দক্ষিণবঙ্গের মোট ৩৩ টি লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। রবিবার কলকাতার দুই কেন্দ্র, এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার লোকসভা আসনে ভোট। তার আগেই নির্বাচনে সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগ করল বিজেপি। নির্বাচন কমিশনের কাছে মুকুল রায়ের দাবি, "শুধু যৌথবাহিনী থাকলেই হবে না। সাধারন মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে তার জন্য নির্বাচন কমিশনকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।" তাঁর বক্তব্য, "কলকাতাতেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। একদিকে যখন শাসকদলের সমাজবিরোধীরা দাপাচ্ছে, ঠিক তখন বিজেপি নেতাদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। আজ ডায়মন্ড হারবারের ব্লক সভাপতিকে গ্রেপ্তার করেছে। মগরাহাটেও আমাদের দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
শুক্রবার বারুইপুরের বকুলতলা থানা এলাকায় নাকা তল্লাশিতে মেলে নগদ ২৪ লক্ষ ১২ হাজার টাকা, যার জেরে গ্রেফতার হন এক বিজেপি নেতা সহ চার জন। তৃণমূলের অভিযোগ, বারুইপুরের বিজেপি কার্যালয় থেকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করার জন্যে টাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, বিজেপির পার্টি অফিস থেকে বকুলতলার দিকে যাওযার সময় একটি গাড়ি আটক করা হয়। গাড়িতে উপস্থিত মহিলাদের শাড়ির ভিতরে লুকিয়ে রাখা ছিল টাকা। এই ঘটনায় গ্রেফতার হন বারুইপুরের বিজেপি সম্পাদক মিঠুন হালদার এবং দুজন মহিলা সহ চারজন। জেরায় ধৃতরা জানান, বারুইপুরের দলীয় কার্যালয় থেকে টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। বাজেয়াপ্ত টাকার উৎস কোথায় এবং কে বা কারা বিষয়টির পিছনে রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: মুকুল রায়-শমীক ভট্টাচার্যের গাড়ি ‘ভাঙচুর’, ধৃত ১০
বিজেপির পক্ষ থেকে ঘটনাটি অস্বীকার করা হয়েছে। বিজেপির এক স্থানীয় নেতা বলেন, এই টাকা তাঁদের দলের নয়, যিনি এই টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর ব্যবসার টাকা, এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি আরও বলেন, "পুলিশের এসব সাজানো কেস, সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়েই ওরা এই কাজ করে যাচ্ছে, এসব করে বিজেপিকে দমানো যাবে না।"
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই আসানসোল স্টেশন থেকে নগদ ১ কোটি টাকা-সহ রেল পুলিশের হাতে ধরা পড়েন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক গৌতম চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গে ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত সাউ নামে এক ব্যক্তি। এই দুজনকে জেরা করে বার্নপুর স্টেশন রোডের বাসিন্দা বজরঙ্গ আগরওয়াল নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ১৯ লক্ষ ২৫ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করে রাজ্য সিআইডি। তবে ওই ব্যবসায়ীর খোঁজ মেলে নি।
ষষ্ঠ দফার ভোটের মুখে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের গাড়ি থেকেও লক্ষাধিক টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ।