আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ৪২টি আসনের মধ্যে ২২টি আসনকে পাখির চোখ করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ অনেক আগেই এই লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছিলেন। তবে স্থির করে দিলেও তিনি রাজ্যে নিজে দুদফায় দুটি সমীক্ষক দল পাঠিয়েছেন। সূত্রের খবর, প্রথম দফার সমীক্ষক দল রিপোর্ট দিয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে পাঁচটি আসনে ভালো ফল করতে পারে পদ্ম শিবির। পরবর্তীতে আরও একটি দল আসে। বিজেপি সূত্রে দাবি, দ্বিতীয় সমীক্ষক দলের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ন'টি আসনে ভাল ফল হতে পারে।
রাজ্যে লোকসভার কোন ২২টি আসনের ওপর বিজেপির নজর রয়েছে, তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই গুঞ্জন রয়েছে। যেহেতু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, সেক্ষেত্রে স্বভাবতই চাপ বাড়ছে রাজ্য বিজেপির ওপর। এদিকে রথযাত্রা না হওয়া, ব্রিগেডে সমাবেশ করতে না পারা এসব ব্যাপার রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জ্বলন্ত ইস্যু রয়েছে, বিশেষত আয়ুষ্মান ভারত। এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম পরিবর্তন ইস্যু নিয়েও জোরদার আন্দোলন দানা বাঁধছে না। তার ওপর সভা-সমাবেশের দিনক্ষণ ঘোষণার পর বারেবারেই পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কম সময়ের মধ্যে সমাবেশ সফল করতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে রাজ্য নেতৃত্বের।
আরও পড়ুন: সিপিএম-এর ব্রিগেড মঞ্চের কেন্দ্রে সাধারণ মানুষ
কোন ২২ টি আসনে জয় পেতে পারে বলে মনে করছে বিজেপি? সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহল ও রাজ্যের সীমান্ত সংলগ্ন আসনগুলিতে দল ভালো ফল করবে, এটা ধরে নিয়েছে রাজ্য বিজেপি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেসব জায়গায় দল ভাল ফল করেছে, সেইসব এলাকাও হিসেবের মধ্যে রয়েছে। উত্তরবঙ্গের বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম, এই পাঁচটি আসন তারা আগেভাগেই নিশ্চিত জয় ধরে নিয়েছে। একইসঙ্গে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, যেসব তৃণমূল সাংসদ তাদের দলে যোগ দেবেন, নিজস্ব কেন্দ্রে তাঁদের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ইতিমধ্যে বিষ্ণুপুর লোকসভার তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বোলপুর লোকসভার সাংসদ অনুপম হাজরাকে তৃণমূল কংগ্রেস দল থেকে বহিষ্কার করেছে। তাঁরও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন সাংসদ তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসবেন বলে দাবি করেছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়।
মতুয়া সম্প্রদায় রাজ্যের বেশ কয়েকটি লোকসভা আসনের ক্ষেত্রে 'ব্যালান্স ফ্যাক্টর' বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। তৃণমূল কংগ্রেস বরাবরই দাবি করে আসছে, মতুয়াদের সুখে-দুঃখে তারা আছে। মমতাবালা ঠাকুর এই মুহূর্তে তৃণমূল সাংসদ। মতুয়াদের 'বড়মার' জন্মদিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরনগর গিয়েছিলেন। ঠাকুর বাড়িতে ফাটল ধরাতে উদ্যোগী বিজেপিও। গেরুয়া শিবিরের ধারনা, মতুয়াদের কাছে টানতে পারলে এরাজ্যে বেশ কিছু আসনে হারজিতের হেরফের হয়ে যাবে। এমনকী তার ফল মিলবে আসামের মত পাশের রাজ্যেও।
আরও পড়ুন: হিন্দু শরণার্থীদের অভয় বাণী অমিত শাহর
আসামের এনআরসি ইস্যুতে রাজ্যে রেল রোকো করেছিলেন মতুয়ারা। কিন্তু লোকসভায় নাগরিকত্ব বিল পাস করিয়ে মতুয়াদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে বিজেপি। এবং এতেই ক্ষান্ত থাকছে না বিজেপি। এরাজ্যে লোকসভার অভিযান শুরু করতে ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জনসভা করবেন ঠাকুরনগরে। কেন বিজেপি মতুয়াদের কাছে বেশি আপন, তার প্রমান দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করবেন তিনি।
রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড়ে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের কাছে কুপোকাৎ হয়েছে বিজেপি। এমনকি উত্তর প্রদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচনে পাওয়া ৭১টি লোকসভার আসনও ধরে রাখা সম্ভব নয় পদ্ম শিবিরের পক্ষে। সেক্ষেত্রে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে লোকসভার আসন বৃদ্ধি করতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যেনতেন প্রকারে এরাজ্যে লোকসভার আসন বৃদ্ধি করতেই হবে। এই মূহুর্তে মোদী-শাহ জুটিকে আরও চিন্তায় ফেলে দিয়েছে পাকাপাকি কংগ্রেসে যোগ দেওয়া প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
তাহলে নিশ্চিতভাবে রাজ্যের কোন কোন আসন টার্গটে করবে বিজেপি? এখন তাদের দখল রয়েছে আসানসোল, দার্জিলিং। সূত্রের খবর, বাকি কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, মালদা উত্তর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বনগাঁ, কলকাতা উত্তর, শ্রীরামপুর, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, বোলপুর, বীরভূম, বর্ধমান-দুর্গাপুর, হাওড়া, ব্যারাকপুর আসনে জয় পেতে চায় বিজেপি। তবে দলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, "এই আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় আমি বিশ্বাসী নই। সারা রাজ্যে ঘুরে যা দেখছি, মানুষ ভোট দিতে পারলে 'মিরাকল' ঘটবে। সেক্ষেত্রে টার্গেট আসনে জয় না পেয়ে যে কোনও আসন দখলে আসতে পারে। এমনকী দক্ষিণ কলকাতা, কাঁথিও এখন তৃণমূল কংগ্রেসের 'শিওর সিট' নয়।" তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, দক্ষিণবঙ্গে তুলনামূলক বিজেপির সংগঠনের অবস্থা মজবুত নয়। ভোট হওয়া পর্যন্ত এসব বিতর্ক আরও বাড়বে আশা করা যায়।