লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএম জোটের সম্ভাবনায় সবচেয়ে বড় কাঁটা রায়গঞ্জ। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির দুর্গ বলে পরিচিত রায়গঞ্জে ১৬ বার লোকসভা ভোটের মধ্যে ১১ বারই জিতেছে কংগ্রেস। এবার সিপিএম রায়গঞ্জ নিয়ে তাদের সুর চড়িয়েছে কারণ ২০১৪ সালে তারাই এ আসন জিতেছিল। এদিকে কংগ্রেসের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তৃণমূল রায়গঞ্জে নিজেদের শক্তি বাড়িয়েই চলেছে।
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মৃত্যু হয়েছে গত বছর নভেম্বর মাসে। তার পর এটিই প্রথম লোকসভা ভোট। ৯ বছর কোমায় থাকার পর মারা গেছেন প্রিয়রঞ্জন। ২০০৯ সালের ভোটে তাঁর স্ত্রী দীপা দাশমুন্সি স্বামীর ছবি সহ ভোটপ্রচার করে অনায়াসে রায়গঞ্জ থেকে সাংসদ হয়ে গিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি হারেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিমের কাছে। তবে সে হার ছিল অতি সামান্য ভোটে, সেলিম দীপার চেয়ে ১৬৩৪টি ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
কংগ্রেস চাইছে রায়গঞ্জ থেকে দীপাকে ফের প্রার্থী করতে। এখানেই সিপিএমের সঙ্গে তাদের আলোচনা আটকে গেছে।
সেলিমকে রায়গঞ্জ থেকে প্রার্থী করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সিপিএম। কংগ্রেসের উচিত আসল পরিস্থিতি বোঝা, দাবি করছে তারা। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে সেলিম বললেন, ”কংগ্রেসের বোঝা উচিত তাদের আর সেই সমর্থন নেই। দীপা দাশমুন্সী এখন আর সাংসদ নন এবং কংগ্রেসের বহু সমর্থক তৃণমূলের দিকে চলে গেছে।”
সিপিএম এলাকায় যা কাজ করেছে, সে নিয়েও সেলিম আত্মবিশ্বাসী। ”যদি চতুর্মুখী লড়াই হয়, সে ব্যাপারেও আমরা প্রস্তুত।”
২০১৪ সাল থেকে কংগ্রেসের বহু কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছেন ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়ালও। গত বছরের পঞ্চায়েত ভোটে উত্তের দিনাজপুরে তৃণমূলের কাছে বহু আসনে হেরেছে কংগ্রেস।
২০১৪ সালে সিপিএম ও কংগ্রেসের থেকে পিছিয়ে থেকে তিন নম্বরে দৌড় শেষ করেছিল বিজেপি। কিন্ত গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ইসলামপুরে স্কুলে সংঘর্ষ ও দুই ছাত্রের মৃত্যুর পর তারা এবার সামনের সারিতে। এ ঘটনায় বিজেপি সারা রাজ্যে ধর্মঘটরে ডাক দিয়েছিল, যাতে যথেষ্ট সাড়াও মিলেছিল।
রায়গঞ্জ লোকসভা আসনের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে ইসলামপুর একটি।
বিজেপির আশা হিন্দু ভোট তাদের সঙ্গে থাকবে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে উত্তর দিনাজপুরের জেলার জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ মুসলিম। রায়গঞ্জ আসনে হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি নির্মল দাম স্বীকার করে নিলেন যে কংগ্রেস সিপিএম আলাদা হয়ে গেলে তাঁদের সুবিধের কথা। তবে তিনি এও বললেন যে দু দল একত্রিত হয়েও সুবিধে করতে পারেনি। কিছু কংগ্রেস সমর্থক রয়েছে যারা কোনও দিন সিপিএমকে ভোট দেবে না। সিপিএমের ক্ষেত্রেও তাই। এসব ভোট বিজেপিতে আসবে।
তৃণমূলের এখানে কোনওরকম সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়ে নির্মল দাম বললেন, ”পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা দেথে রায়গঞ্জের মানুষ হতাশ।”
রায়গঞ্জে গণভিত্তির অভাবও তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোগাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে জনপ্রিয় কাউকে এখান থেকে প্রার্থী করতে পারে তারা। তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পার্থ চট্টোপাধ্যায় কংগ্রেস-সিপিএমের বোঝাপড়া নিয়ে ভাবিত নন। তিনি বললেন, ”আমরা আমাদের লক্ষ্য স্থির রেখেছি। পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি আসনের ৪২টিই আমরা চাই।”
কংগ্রেস যেনতেন প্রকারেণ রায়গঞ্জ আসন ধরে রাখতে চাইছে। প্রিয়রঞ্জন বা দীপা ছাড়াও এখান থেকেই কংগ্রেসের হয়ে জিতেছিলেন রাজ্যের একসময়ের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়।