প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লোকসভা ভোট নিয়ে মুখ খুলেছেন। বেশ কয়েকবছর ধরে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা এই বাম নেতার বক্তব্য টুইট করেছে রাজ্য সিপিএম। কয়েকদিন আগে বঙ্গ সিপিএমের মুখপত্র গণশক্তিতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি যে সব কথা বলেছিলেন, তার থেকেই বাছাই অংশ তুলে টুইট করা হয়েছে সিপিএমের অফিশিয়াল হ্যান্ডেল থেকে।
টুইটে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে উদ্ধৃত করে যে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তার শুরুতেই রয়েছে বিজেপি-তৃণমূল আঁতাতের কথা। বুদ্ধদেব বলেছেন, এ রাজ্যে অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ঘটে গেছে। এ রাজ্যে এ পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদীকে "ধান্দাবাজদের চৌকিদার" বলে উল্লেখ করেছেন বুদ্ধদেব। "উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও পুঁজিপতিদের মডেল" বলেও আখ্যা দিয়েছেন মোদীকে। এই শক্তিদের পরাহত করার আহ্বান করেছেন বর্তমানে অসক্রিয় এই বাম নেতা।
আরও পড়ুন, ভোট বয়কটের ডাক দিয়ে নকশাল পোস্টার, উদ্বেগে লালবাজার
গণশক্তিতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকার থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েই উঠে আসছে। শিল্প-কৃষি নিয়ে নিজের অবস্থান বদলাননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলেছেন, বলেছেন দরকার আধুনিক কৃষি। ঠিক এর পরেই সপ্তম বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন "শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান, অবৈতনিক শিক্ষা, সুলভ স্বাস্থ্য... ইত্যাদি"র কথা।
এই শিল্প-কৃষি নিয়ে তীব্র সংঘাতের জেরে পায়ের তলার মাটি হারিয়েছিল বুদ্ধদেব সরকার। ৩৪ বছরের শাসনকাল ভেঙে পড়েছিল ধীরে ধীরে। ২০১১ সালে সিপিএম সরকারের পতন ঘটলেও, তার শুরু হয়েছিল সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো কারখানা নিয়ে। অভিযোগ, দো-ফসলি, তিন-ফসলি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে। যদিও এ অভিযোগ মানেনি সিপিএম। তৈরি হয়েছিল ইচ্ছুক চাষি ও অনিচ্ছুক চাষির তত্ত্ব।
এর পর নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব তৈরি নিয়েও সেই জমি নিয়েই শুরু হয় চাপান-উতোর। জোর করে জমি অধিগ্রহণ, খুন, পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে আন্তর্জাতিক মানচিত্রেও উঠে আসে পূর্ব মেদিনীপুরের এই এলাকা।
২০০৬-এর সিঙ্গুর, ২০০৭-এর নন্দীগ্রাম-এর পর ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ের মুখে পড়ে সিপিএম। তারপর ২০১১, এবং বাস্তিল দুর্গের মতই ধসে পড়া সিপিএমের।
কিন্তু গঙ্গা-ভোলগা দিয়ে বহু জল গড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, বুদ্ধদেব রয়েছেন বুদ্ধদেবেই।