আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বাংলার মাটিতে সম্ভবত সিপিএম-কংগ্রেসের কৌশলগত বোঝাপড়া হতে চলেছে। শনিবার রাজধানীতে দুই দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের বৈঠক থেকে তেমন ইঙ্গিতই মিলেছে। জানা যাচ্ছে, রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী না দেওয়ার পথেই হাঁটতে চলেছে সিপিএম-এর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট। সূত্রের খবর, সিপিএম যদি এমন অবস্থান নেয় সেক্ষেত্রে 'প্রতিদান' হিসাবে বামেদের জয়ের সম্ভবনা রয়েছে, এমন আসনে প্রার্থী দাঁড় করাবে না কংগ্রেসও। 'বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী ভোট' একত্র করে নির্বাচনী সাফল্য লাভের উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দুই দলের রাজ্য নেতৃত্ব এই বোঝাপড়া চাইলেও, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও রীতিমত দ্বিধা বিভক্ত। একদিকে, জোট সঙ্গী হিসাবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের যেমন অধিকতর পছন্দ তৃণমূলকে, তেমনই কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও প্রকার বোঝাপড়ায় যেতে নারাজ সিপিএম-এর কেরালা ব্রিগেড।
আরও পড়ুন- জোটের আমি জোটের তুমি, জোট দিয়ে যায় চেনা
শনিবার রাজধানীতে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, "বাংলায়...যে সব এলাকায় আমাদের বা অন্যান্য বাম দলের উপস্থিতি থাকবে না, সেখানে আমরা একযোগে বিজেপি ও তৃণমূলকে হারানোর ডাক দেব। আমাদের লক্ষ্য, বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী ভোটকে যতটা সম্ভব বাড়ানো"।
তবে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড চাইলেও, লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আসন রফায় যেতে নারাজ তৃণমূল। শুক্রবার দিল্লিতে বৈঠকে বসেছিল সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো। আবার প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও। কংগ্রেসের এই বৈঠকের পরই পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র সাংবাদমাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, "আত্মমর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে" তাঁরা বামেদের সঙ্গে আসন সমঝতায় যেতেই আগ্রহী। অন্যদিকে, সিপিএম-এর অন্দরে কংগ্রেস সম্পর্কে চিরকাল 'রক্ষণশীল' ভাবধারার কেরালা ব্রিগেডও এদিনের বৈঠকে কিঞ্চিত সুর নরম করেছে। সে রাজ্যের সিপিএম সম্পাদক কোডিয়ারি বালাকৃষ্ণান বলেন, "আগামী লোকসভা নির্বাচনে যেভাবেই হোক বিজেপি-কে ক্ষমতাচ্যূত করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজনীয় পন্থা অবলম্বন করতে হবে...এ কথা দ্বর্থ্যহীন ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে সর্বশেষ পার্টি কংগ্রেস"।
আরও পড়ুন- প্রধানমন্ত্রীর নামে এফআইআরের পরই গভীর রাতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে গেল ‘অদ্ভুত গাড়ি’!
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালেরে এপ্রিলে সিপিআই(এম)-এর পার্টি কংগ্রেসে বলা হয়, বিজেপি এবং তাদের সহযোগী শক্তিগুলিকে পরাস্ত করাই দলের প্রধান কাজ। পাশাপাশি এও বলা হয় যে, এই 'প্রধান কাজ' সম্পন্ন করতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা যাবে না। তবে, পশ্চিমবঙ্গের জন্য অবশ্য ভিন্ন তত্ত্ব আওড়াচ্ছে সিপিএম-এর একাংশ। তাদের যুক্তি, "এ রাজ্যের ক্ষেত্রে বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী ভোটকে যতটা সম্ভব বাড়ানো এবং একত্রিত করাই আমাদের লক্ষ্য"।
ইয়েচুরি এদিন বলেন, পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি বিশেষ। এরপরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি উল্লেখ করেন, পার্টি কংগ্রেসে ঠিক হয়েছে 'শাসক শ্রেণি'র দলের সঙ্গে যৌথ প্রচার বা জোট করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, "সুতরাঙ, বাংলার দল (সিপিএম) এইসব দিক খতিয়ে দেখে আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে। আমরা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে (মার্চ মাসে) তা আলোচনা করব"।
আরও পড়ুন- রাজীব কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের অন্দরে ঘুরছে বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ! কী লেখা তাতে?
দুই দলের আসন সমঝোতার পথ ক্রমশ পরিষ্কার হতে শুরু করলেও, আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন রাজ্যের সাধারণ কর্মীরা। কারণ, জাতীয় স্তরে অ-বিজেপি দলগুলিকে একত্রিত করে মমতার ব্রিগেড সভা থেকে রাজীব কুমারকাণ্ড- রাহুল গান্ধী সবেতেই তৃণমূল নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত কী হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না কেউই। যদিও সোমেন মিত্রের দাবি, তৃণমূল কীভাবে প্রতি নিয়ত রাজ্যে কংগ্রেসকে দুর্বল করে দিচ্ছে, সে কথা তাঁরা কংগ্রেস সভাপতিকে সবিস্তারে জানিয়েছেন। সোমেনবাবুরা এও বলেছেন যে রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট হলে, কংগ্রেসের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হবে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দাবি, রাহুল তাঁদের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন।
এদিকে, সিপিএম সাংসদ তথা পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, "আমরা মনে করি তৃণমূল আদপে বিজেপির দোসর। আশা করি, এ বিষয়ে কংগ্রেসের মূল্যায়নও তাই"। তবে, রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের কথায় আমল দিতে নারাজ রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দ্য সানডে এক্সপ্রেস-কে তিনি বলেন, জাতীয় স্তরে বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করার কৃতিত্ব যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছে কংগ্রেস হাই কম্যান্ড। কিন্তু, বাম কংগ্রেসের এই প্রস্তাবিত জোট নিয়ে কী বলছে বাংলার বিজেপি? সায়ন্তন বসুর মত, "কংগ্রেস আসলে বিভ্রান্ত দল। এই দলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এক কথা বলে, আর রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক তার ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করে"।
Read the full story in English