প্রথমে ১৯ জানুয়ারি তৃণমূলের নেতৃত্বে কেন্দ্রের বিরোধীদের ব্রিগেড সভা, তারপর কলকাতার নগরপালের বাসভবনে সিবিআই তল্লাশির প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না, সব মিলিয়ে লোকসভার আগে জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে রীতিমতো খবরে থেকেছে বাংলার তৃণমূল। দলের রাজ্যসভার বিধায়ক ডেরেক ও' ব্রায়েনের কাছে সেই প্রসঙ্গেই কিছু প্রশ্ন রেখেছিলেন সাংবাদিক অবন্তিকা ঘোষ।
প্রশ্ন- নগরপালের জন্য ঠিক কেন ধর্নায় বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
চন্দ্রবাবু নাইডু, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী সবার সাথেই সিবিআই এটা করেছে, যেটা কলকাতার নগর পালের সঙ্গে হল। আসলে এটা বিজেপি কিমবা সিবিআই কেউই করেনি। মোদী এবং অমিত শাহ করেছেন। এরা দুজনে মিলে যা খুশি করতে পারেন। কলকাতায় নগরপালের বাসভবন তল্লাশির জন্য ৪১জন সিবিআই আধিকারিক চলে এলেন। অথচ ২০১৪-২০১৯ কিছুই হয়নি। কে নগরপাল, নামটা ভুলে যান। কিন্তু পদটা মাথায় রাখতে হবে তো। লোকসভার কয়েক সপ্তাহ আগেই এসব করতে হল। এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছাড়া কিছুই নয়। রাজ্য প্রশাসনের সমর্থনেই ধর্নায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন, প্রধানমন্ত্রীর নামে এফআইআরের পরই গভীর রাতে তৃণমূল নেতার বাড়িতে গেল ‘অদ্ভুত গাড়ি’!
প্রশ্ন- পুলিশদেরকেও ধর্নায় কেন দেখা গেল?
পুলিশ ধর্নায় বসেনি। আইপিএস আইএএস আধিকারিকদের সমর্থনে মমতা ধর্নায় বসেছিলেন। সমর্থন জানাতে পুলিশরা ঘণ্টা খানেক ধর্নামঞ্চে ছিলেন। মোদী আর অমিত শাহকে বার্তা দিতে হত, যে আপনি গন্তন্ত্রে যা খুশি চালাতে পারেন না। কিছু ছবি দেখে আপনাদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছতেই পারে। আসলে সংবিধান এবং কিছু প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করাটাই মূল লক্ষ্য ছিল।
প্রশ্ন- বিজেপির অভিযোগ আপনারা, তৃণমূলের নেতারা বিজেপির চপার নামাতেই দেন না পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে?
আমাদের কাছে একটা সমীক্ষা আছে। যোগী আদিত্যনাথ যেখানেই ভোটের প্রচারে গিয়েছেন, ৭২ শতাংশ ক্ষেত্রে বিজেপি হেরে গিয়েছে। আমরা কেন ওঁদের আসতে দেব না? মুশকিল হল, ওরা বাংলার সংস্কৃতি বোঝেন না। অনুবাদক ছাড়া যতবার এখানে ভাষণ দিতে আসেন, তৃণমূলের পক্ষেই ভোট বাড়াতে সাহায্য করে তা। বলিউডের শিল্পিরা বাংলায় এসেই বলতে থাকেন 'মিষ্টি দই', তেমনি বিজেপি এখানে এসে বলতে থাকেন 'সোনার বাংলা'। কিন্তু এর বাইরেও তো বাংলার আরও কিছু আছে। সেটা বোঝাবে কে?
আরও পড়ুন, রাম মন্দিরে দেরি কেন? শিব সেনার নিশানায় ভিএইচপি-আরএসএস-কেন্দ্র
প্রশ্ন- মোদী তো বিরোধীদের মহামিশেল বলেছেন?
ওদের নিজেদের দেখেছেন? মোদী এবং অমিত শাহের দল ওটা। ওরা ২০১৪তে মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ২০১৮ তে রাখতে পারেনি। এখন বলছে ২০২২-এর মধ্যে কথা রাখবে। আর আমাদের দেখুন, ২০১১ তে আমরা বলেছিলাম কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করব আমরা। তিনগুণ করে ফেলেছি এর মধ্যে। কেন্দ্রের বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও প্রকল্পও সেরকমই। তুলনায় আমাদের রাজ্যের কন্যাশ্রী প্রকল্প অনেক বেশি সফল। মোদী কারোর প্রশ্ন শোনেন না। নিজে অনেক ফাঁপা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান।
প্রশ্ন- আপনি বলেছেন, অমিত শাহ এবং মোদী দেশের সনবিধানের পক্ষে বিপজ্জনক। সঙ্ঘের সঙ্গে আদর্শগত সমস্যা আছে আপনাদের? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যদি দল থেকে সরে যান, আপনারা জোট করতে পারেন ভবিষ্যতে?
কী হবে, আমি কোনও রাখ ঢাক না করে বলছি। এনডিএ ১৫০ থেকে ১৬০টা আসন পাবে। কিন্তু ২৭২ টা আসন পেতে চাইবে। তাই আপনি যে পরিস্থিতির কথা বলছেন, সেটা আসবেই না। আমরা বিরোধীরা কেউ ২৭২ টি আসন পাবার আশা করছি না। বিজেপি দাবি করছে ওরা ৩৪০ টা আসন পাবে। ১৯ জানুয়ারির ব্রিগেড সভার পর আমি যা দেখছি, আমরা গতি পেয়ে গিয়েছি। খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। আমাদের মধ্যে যেখানে ঐক্য রয়েছে, সেখানেই জোর দেওয়ার চেষ্টা করছি। কতগুলো ভোট বিরোধীদের পক্ষে এল, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।