সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্ভবত এই প্রথম ভঙ্গ হলো আদর্শ নির্বাচন বিধি। মঙ্গলবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন ফেসবুককে অনুরোধ জানিয়েছে, তারা যেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের ছবি সম্বলিত দুটি পোস্টার সরিয়ে নেয়, যেগুলি পোস্ট করেছেন বিজেপি নেতা তথা দিল্লির বিধায়ক ওমপ্রকাশ শর্মা।
জানা গিয়েছে, cVIGIL অ্যাপে একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কমিশন এই মর্মে বার্তা পাঠিয়েছে ফেসবুকের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর শিবনাথ ঠুকরালকে। cVIGIL নতুুন একটি অ্যানড্রয়েড অ্যাপ, যা গত বছরের কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যে আনে কমিশন, যেটির মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকরা নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনো অনিয়মের কথা জানাতে পারেন কমিশনকে। কমিশনের অনুরোধ সম্পর্কে ফেসবুকের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এক মুখপাত্র জানান, "আমরা ইলেকশন কমিশনের সঙ্গে মিলে আমাদের সাইটের অপব্যবহার রুখতে দায়বদ্ধ।"
লোকসভা ভোটের আরও খবর পড়ুন, এখানে
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই কমিশনের পক্ষ থেকে সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে নির্দেশ আসে, যেন নির্বাচনী প্রচারে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে কোনোভাবে ব্যবহার না করা হয়। গত রবিবার নির্বাচন নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আদর্শ নির্বাচন বিধি লাগু হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের তালিকা, মমতার হিসেব-নিকেশ
বিতর্কিত পোস্টার দুটি দিল্লির বিশ্বাস নগরের ওই বিধায়ক ফেসবুকে পোস্ট করেন ১ মার্চ। দুটিতেই রয়েছে অভিনন্দন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, এবং বিধায়কের ছবি। একটি পোস্টারে লেখা হয়েছে, "এত কম সময়ের মধ্যে বাহাদুর অভিনন্দনকে ফেরত আনতে পারা মোদীজির পক্ষে বিরাট কূটনৈতিক জয়।" অন্যটিতে লেখা, "ঝুক গয়া হ্যায় পাকিস্তান, লৌট আয়া হ্যায় দেশ কা বীর জওয়ান (পাকিস্তান মাথা নুইয়েছে, দেশের বীর জওয়ান ফিরে এসেছে)।"
রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের প্রতিরক্ষা কর্মীদের ছবি ব্যবহার করার বিষয়টি বিগত কিছুদিন ধরেই নজরে রেখেছিল কমিশন। ৯ মার্চ কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলের প্রচারে সেনার ছবি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই বিষয়ে ৪ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে জারি করা নির্দেশের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, পুলওয়ামা হামলা এবং বালাকোটের এয়ার স্ট্রাইকের জেরেই ফের এই নির্দেশ জারি করে কমিশন।
আরও পড়ুন: প্রচার কৌশল বাতলাতে আজ প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে মমতা
নির্দেশের একাংশে বলা হয়েছে, "এটা মনে রাখা দরকার যে দেশের সশস্ত্র বাহিনী সেই দেশের সীমান্ত, নিরাপত্তা, এবং রাজনৈতিক পরিকাঠামোর রক্ষাকর্তা। তারা অরাজনৈতিক এবং আধুনিক গণতন্ত্রে নিরপেক্ষ অংশগ্রহণকারী। তার ফলে এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতারা তাদের প্রচারে সশস্ত্র বাহিনীর উল্লেখ করার আগে বিষয়টি সম্পর্কে সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করেন।"
প্রসঙ্গত, সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে আদর্শ নির্বাচন বিধি প্রযোজ্য হয় ২০১৩ সালেই, কিন্তু কমিশন এ বিষয়ে এর আগে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে নি, যেহেতু সংশ্লিষ্ট সাইটের নাগাল পাওয়া সম্ভব ছিল না। এই প্রথম কোনও লোকসভা নির্বাচনে ফেসবুক, টুইটার, গুগল, হোয়াটসঅ্যাপ, বা শেয়ারচ্যাটের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার মহারথীরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে, তাদের সাইটে "রাজনৈতিক প্রচারের অখণ্ডতা এবং বৈধতা বজায় রাখার জন্য", জানিয়েছিলেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা।