General Election 2019: রাজ্যে কী শেষমেষ চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে চলেছে? কংগ্রেস-বামেদের জোটে জট কাটার কি কোনও সম্ভাবনা রয়েছে? ভোটের জোট নিয়ে কংগ্রেস-সিপিএমের তরজা জমিয়ে দিয়েছে রাজ্য-রাজনীতি। রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদ, বিশেষ করে এই দুই কেন্দ্র ঘিরেই চাপানউতোর চলছে সোমেন মিত্র ও বিমান বসুদের মধ্যে। কংগ্রেসকে ‘চাপে’ রেখে শেষমেশ সেই দুই কেন্দ্রেই একতরফা ভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল সিপিএম। যার জেরে বাম-কংগ্রেস জোটে জট বাড়ল বৈকি কমল না, এমনই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
শুক্রবার বামফ্রণ্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদে সিপিএমের দুই বর্তমান সাংসদের নাম লোকসভা ভোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে এই ঘোষণার পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "বামফ্রণ্ট যদি জোটে আগ্রহী না হয়, তাহলে কংগ্রেস একা লড়ার জন্য প্রস্তুত।" এদিকে এদিনই বীরভূমে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, তাদের সঙ্গে কংগ্রেসের কখনও জোট হয়নি। শুধু আসন ভাগাভাগি হয়েছিল।
আরও পড়ুন, রায়গঞ্জে আটকে গেছে কং-সিপিএম জোটের গাড়ি
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি ঠিক করেছিল, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে জয়ী দুটি কেন্দ্র কোনওভাবেই ছাড়া যাবে না। এমনকী এ রাজ্য থেকে কংগ্রেসের জয় পাওয়া চার আসনে বামেরা প্রার্থী দেবে না। অর্থাৎ জয়ী আসন জোট আলোচনার বাইরে রাখতে চায় সিপিএম। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জে জয়ী হয়েছিলেন মহম্মদ সেলিম ও মুর্শিদাবাদ থেকে সাংসদ হয়েছিলেন বদরুদ্দোজা খান। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস একরোখা মনোভাব নিয়েছে বলে বামফ্রন্ট আগাগোড়া দাবি করে আসছে। রাজ্যে ওই দুটি লোকসভা কেন্দ্রে কোনওরকমে বাতি জ্বালিয়ে রেখেছে সিপিএম। ওই দুই সবেধন নীলমনি সিপিএমের পক্ষে কোনওভাবে হাতছাড়া করা সম্ভব নয়, তাই তড়িঘড়ি প্রার্থী ঘোষণা বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
এদিন সাংসদ মহম্মদ সেলিম জোট নিয়ে কংগ্রেসের গা-জোয়ারির অভিযোগ করেন। অন্যদিকে, বীরভূমে সূর্যকান্ত মিশ্র তো বলেই দিয়েছেন, "কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের কোনও প্রশ্ন নেই। এর আগে কংগ্রেসের সঙ্গে শুধু আসন ভাগাভাগি হয়েছিল।" রাজনৈতিক মহলের মতে, বিমান বসুর প্রার্থী ঘোষণা করার জন্য এদিন ওই দুই হেভিওয়েট সিপিএম নেতা রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করছিলেন। ভর সন্ধ্যায় ফ্রন্ট চেয়ারম্যান ঘোষণা করে দেন রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদে দলীয় প্রার্থীদের নাম। কংগ্রেস যদি ওই দুই কেন্দ্রে প্রার্থী দেয়, সেক্ষেত্রে বহরমপুরের মতো আসনে বামেরা প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে ভাবতে পারে বলেও সিপিএম নেতৃত্ব হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন, Lok Sabha Election 2019: উনিশের নির্বাচনে ‘কিং মেকার’ কে? ২৮২টি আসনে দাপট প্রথম ভোটারদের
এদিকে, কলকাতায় বিধান ভবনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র জানান, কংগ্রেস এ রাজ্যে দীর্ঘমেয়াদী জোট রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সোমেন মিত্রের বক্তব্য, "উভয় দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কথা হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য বামফ্রন্ট যদি তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দেয়, তবে সে দায় বামফ্রন্টের। বামফ্রন্ট স্থির করুক তারা জোট করবে কি করবে না। বামফ্রন্ট যদি জোটে আগ্রহী না হয়, তবে কংগ্রেস একা লড়ার জন্যও প্রস্তুত।"
তিনি জানান, সমস্ত বিষয়টি সম্পর্কে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অবহিত করা হবে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দাবি, সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি রাজ্য কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈকে বলেছিলেন যে, ৮ মার্চ তাঁদের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে কংগ্রেস নেতৃত্বকে। সেখানে হঠাৎ করে রাজ্য বামফ্রন্টের এহেন দুই আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত "বেশ দুর্ভাগ্যজনক"। তবে তিনি এখনও জোটের ব্যাপারে আশাবাদী।
এ রাজ্যে এখন তৃণমূল ও বিজেপি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দল। এই দুই দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায় কংগ্রেস ও বামফ্রণ্ট। রাজ্যের গুটিকয়েক লোকসভা আসনে কংগ্রেস ও বামেদের শক্তি রয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, সিপিএমের দুই জয়ী আসন তাদের ছাড়তে চাইছিল না কংগ্রেস। তাই শুক্রবার দিনভর সিপিএম নেতৃত্ব শুধু দুই আসন নিয়ে বার্তা দিয়েই ক্ষান্ত থাকলেন না, রাজ্যের বাকি ৪০টি আসন বাদ দিয়ে রায়গঞ্জ ও মুর্শিদাবাদে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিলেন। কংগ্রেসের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্যই এই ঘোষণা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।