General Election 2019: যাদবপুরের রঙ কি এবার গেরুয়া হবে? ২৩ মে লোকসভার ফলপ্রকাশের আগে এ প্রশ্নের উত্তর নেই। কিন্তু, কলকাতার কোলঘেঁষা এই কেন্দ্রের রঙ যে গেরুয়াই হতে চলেছে, ইঙ্গিত দিলেন আত্মবিশ্বাসী অনুপম হাজরা। বৃহস্পতিবার ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই গেরুয়া রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে ইংরেজিতে ‘যাদবপুর’ লিখে টুইট করেছেন অনুপম হাজরা।
উল্লেখ্য, গতকালই মুকুল রায়ের সঙ্গে হোলি খেলার ছবিও টুইটারে পোস্ট করেন অনুপম। ছবির ক্যাপশন: "রং দে তু মোহে গেরুয়া।"
....rang de tu mohe gerua...????...with Dada (Mukul Roy)...!!! pic.twitter.com/9MBCcmKKjg
— Anupam Hazra (Dr. Anupam Hazra) (@tweetanupam) March 21, 2019
লোকসভা ভোটের আরও খবর পড়ুন, এখানে
ধারে ও ভারে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ। এই আসনের রাজনৈতিক ইতিহাসও উল্লেখযোগ্য। ১৯৮৪ সালে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতো তাবড় সিপিএম নেতাকে পরাজিত করে এই আসন থেকেই সংসদীয় রাজনীতিতে খাতেখড়ি হয়েছিল সেদিনের যুবকংগ্রেস নেত্রী তথা অধুনা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমনাথবাবুর আগে দীর্ঘ ৬ বছর এই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন বিশিষ্ট বাম নেতা ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত। ১৯৯১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাদবপুর কেন্দ্র থেকে সরে যাওয়ার পর মালিনী ভট্টাচার্য, কৃষ্ণা বসু, কবীর সুমন এবং সুগত বসুরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন এবং জিতেছেন এই আসন থেকে। সেই ঐতিহ্যের যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রেই এবার বিজেপির টিকিটে লড়তে নামছেন অনুপম।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যাদবপুর কেন্দ্র আলাদা করে নজর কেড়েছে। বড় চমক দিয়ে রাজ্যের শাসকদল এই আসনে দাঁড় করিয়েছে রাজনীতিতে নবাগতা তথা টলিউডের নায়িকা মিমি চক্রবর্তীকে। মমতার সেই চমকের পাল্টা চমক দিয়েছে বিজেপিও। মমতার দলেরই প্রাক্তন সদস্যকে তথা বোলপুরের বিদায়ী সাংসদকে দলে টেনে যাদবপুরের লড়াইয়ে শামিল করেছে বঙ্গ বিজেপি। অন্যদিকে, বামফন্টের প্রার্থী হিসাবে ইতিমধ্যে প্রচারের ময়দানে নেমে পড়েছেন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।
রাজ্যে এ মুহূর্তে মূল লড়াইটা তৃণমূল বনাম বিজেপি ধরে নিলে, যাদবপুর আসনে অনুপম হাজরাকে প্রার্থী করা বিজেপির রীতিমতো বড় সিদ্ধান্ত। কারণ, অনুব্রত মণ্ডলের গড় থেকে বোলপুরের বিদায়ী সাংসদকে তুলে নিয়ে এসে যাদবপুরের মত মর্যাদার আসনে প্রার্থী করার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বোলপুর আসনে অনুব্রতর যা দাপট সেখানে অনুপমের জয় হাসিল করা মোটেই সহজ কাজ ছিল না।
এদিকে, মিমিকে যাদবপুরে প্রার্থী করায় সমাজের নানা অংশে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে। মিমি-নুসরতদের নিয়ে ট্রোলিং-এর বাণ ডেকেছে সোশাল মিডিয়ায়। অন্যদিকে, এই এলাকায় বামের সংগঠনও বেশ ভাল। তার ওপর বিকাশ ভট্টাচার্য প্রার্থী করায়, বাম ব্রিগেডও ভোটপ্রাপ্তির আশায় বুক বাঁধছে। আর এর মাঝে অধ্যাপক এবং যুব প্রজন্মের ঝকঝকে মুখ অনুপমকে লড়াইয়ের ময়দানে নামিয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে চাইছে বিজেপি।
— Anupam Hazra (Dr. Anupam Hazra) (@tweetanupam) March 21, 2019
আরও পড়ুন, Lok Sabha polls 2019: অন্যকে ছোট করে নিজে বড় হওয়া যায় না: মিমি
প্রসঙ্গত, গতবার লোকসভা নির্বাচনে বোলপুরে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছিলেন অধ্যাপক অনুপম হাজরা। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় দল তৃণমূল ও নেতৃত্বকে নিয়ে 'বেফাঁস মন্তব্যে'র জেরে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাঁকে। এরপর থেকেই তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা বাড়তে থাকে। অবশেষে লোকসভা ভোটের মুখে মুকুল রায়ের হাত ধরে পদ্ম পতাকা হাতে তুলে নেন অনুপম। বিজেপিতে যোগদানের পর মনে করা হচ্ছিল, বোলপুর থেকেই হয়তো এবার বিজেপির টিকিটে লড়বেন অনুপম। কিন্তু শেষবেলায় যাদবপুরে অনুপমকে দাঁড় করিয়ে পদ্মশিবির বড় চমক দিল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।
বিজেপির বহু প্রতিক্ষীত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে যাদবপুরের বিজেপি প্রার্থী কে হতে পারেন, তা নিয়ে যে জোর জল্পনা চলছিল। সেই তালিকায় একেবারেই অনুপমের নাম ছিল না। বরং, মিমির মতো তারকা প্রার্থীর পাল্টা হিসেবে একাধিক তারকাকেই প্রার্থী করতে পারে বিজেপি, এমন খবরই ঘুরছিল। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত গ্ল্যামার দুনিয়ার মুখ না এনে অনুপমই ভরসা রাখল গেরুয়া শিবির। এখন দেখার, একদা মমতার কেন্দ্র যাদবপুরে মমতার দল থেকে বহিষ্কৃত অনুপম বিজয় কেতন ওড়াতে পারেন কি না!