General Election 2019: ভোটের দিন যত গড়াচ্ছে, ততই মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হচ্ছেন মমতা। রবিবার কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে সভা করে মমতাকে নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার সেই মাঠেই সভা করে মোদীকে তীব্র ভাষায় পাল্টা আক্রমণ করলেন মমতা। এদিনও বাংলার উন্নয়ন নিয়ে মোদীর কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন মমতা। মোদীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি না কি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, তখন কিছু করিনি। আপনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে কী করেছেন?’’এরপরই রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কী কী করেছেন, সেই তালিকা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘আমি যদি মিথ্যা কথা বলি, ভোটের পর না হলে, ভোটের আগেই এখানে আরেকটা সভা হবে। সেখানে জনগণের সামনে হামাগুড়ি দিয়ে ক্ষমা চাইব। আর যদি তুমি মিথ্যা কথা কও, তোমাকেও হামাগুড়ি দিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। মোদীবাদ মিথ্যাবাদ, ধান্দাবাজ, ভাঁওতাবাজ।’’
লোকসভা ভোটের আরও খবর পড়ুন, এখানে
অন্যদিকে, এদিন মমতার আক্রমণের নিশানায় ছিল মোদীর ব্যক্তিজীবন। কোচবিহারের সভায় একতার কথা বলতে গিয়ে মমতা এদিন বলেন, ‘‘হিন্দু-মুসলমান-শিখ-খ্রিস্টান সকলে একসঙ্গে নিয়েই ধর্মের পরিবার। আপনি (মোদী) জানবেন কী করে পরিবারের কথা? দুটো পরিবার হয়। দেশের পরিবার ও মানুষের পরিবার। আপনার তো কোনওটাই নেই। নিজের পরিবারকে কখনও দেখেছেন? নিজের স্ত্রীকে কখনও দেখেছেন? তাহলে কী করে ঘরের মেয়ে-বোনদের কথা জানবেন? যাঁরা সংসার মানেন না, যাঁরা পরিবার মানেন না, তাঁরা আবার দেশপ্রেম দেখাচ্ছে!’’
আরও পড়ুন: ‘সারদা-নারদের সবচেয়ে বড় দালাল’ মোদীর পাশে, আক্রমণ মমতার
মোদীর চৌকিদার অবতার নিয়ে এদিনও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তৃণমূলনেত্রী। মমতা বলেন, ‘‘আগে ছিল চাওয়ালা, এখন হয়েছে চৌকিদার। আগে কাপ আর কেটলি, এখন কোথায় গেল দুটো পাতা, একটা কুঁড়ি, আমার প্রিয় চায়ের গুঁড়ি! ৫ বছরে দেখা নাই, তোমার দেখা নাই গো তোমার দেখা নাই, খালি বিদেশে ঘুরছে।’’
বাংলার উন্নয়ন নিয়ে মোদীর বিদ্রুপের জবাব দিতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘‘৫ বছর কাজ করার পর যাঁর কৈফিয়ত দেওয়ার কথা, তিনি কৈফিয়ত না দিয়ে আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রধানমন্ত্রী, হিটলারি কায়দার প্রধানমন্ত্রী, স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী, আমার কাছে কৈফিয়ত চাইছেন? আমি যা করেছি, তার ১ শতাংশও করে দেখাতে পারবেন? বলছে, ২০২২ সালে কৃষকদের আয় দ্বিগুন করবে, আমি তো কৃষকদের আয় এখানে তিনগুন করেছি। বাংলার পায়ে পড়ে শেখা উচিত।’’
মোদী-শাহকে নিশানা করে সোমবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এত প্রধানমন্ত্রী দেখেছি, এমন মিথ্যেবাদী প্রধানমন্ত্রী দেখিনি। খালি মিথ্যা কথা বলেন। আবার বলছে সুশাসন নিয়ে আসবে। দুর্যোধনের ভাই দুঃশাসন। উনি আর ওঁর ভাই, দলের সভাপতি। ওঁরা দেশটাকে খেয়ে ফেলেছেন। বাংলায় এনআরসি করবে বলছে। এসো না দেখাব এনআরসি কী করে করো! ভোট দেবে! কাঁচাকলাও দেবে না! একবার ভুল করে হয়ে গিয়েছিল। আর কেউ ভোট দেবে না। আগামী দিনে তুমি আসবেও না। তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। কোথাও পাবে না ভোট। তাহলে পাবেটা কী? লাড্ডু। লাড্ডু খেয়ে বিদেশে ঘুরে বেড়াবে।
আরও পড়ুন: মোদী মহম্মদ বিন তুঘলকের ঠাকুরদা, হিটলারের জ্যাঠামশাই: মমতা
বাংলায় দুর্গাপুজো-সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না বলে তোপ দেগেছিলেন অমিত শাহ। সে প্রসঙ্গে মমতা এদিন ফের মুখ খোলেন। তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘কয়েকটা মিথ্যেবাদী লোক বলছে দুর্গাপুজো না কি হয় না। এখানে না কি সরস্বতী পুজো হয় না! জ্বলজ্যান্ত মিথ্যা কথা। কী করা যায় বলুন তো? ছোটোরা দুষ্টুমি করলে শাসন করা যায়। কিন্তু এদের ভীমরতি হলে কী করা যায়? একবারও দেখেছো দুর্গাপুজো? মা দুর্গাকে কেমন দেখতে জানো? জানো তো? মা দুর্গার দশটা হাত। দেবে না যখন, অসুর বধ হয়ে যাবে।’’
সারদাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে এদিন ফের নাম না করে মুকুলকে খোঁচা দিয়েছেন মমতা। কোচবিহারের সভায় তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘আমাদের সময় সারদা হয়নি। সিপিএমের আমলে হয়েছিল। আজ পর্যন্ত সিপিএমের কারওকে গ্রেফতার করেছেন? কংগ্রেসের কারওকে গ্রেফতার করেছেন? লোকের টাকা ফেরত দিয়েছেন? কিছু করতে পেরেছেন? কেস তো আপনার হাতে। ৬ বছর ধরে ফেলে রেখে দিয়েছেন।’’ এরপরই মমতার কটাক্ষ, ‘‘কাকে বসিয়ে মিটিং করেছেন। সারদা-নারদা-হাওয়ালা, মোদীবাবুর বাঁশিওয়ালা। এখানকার প্রার্থীকে আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি, ওই হাওয়ালাকেও তাড়িয়ে দিয়েছি। ঘরের মজদুরকেও প্রার্থী করতে পারতেন। আপনার না থাকলে, আমি ধার দিতাম কয়েকদিনের জন্য। একজন অস্ত্র কারবারিকে প্রার্থী করে আবার বেশি কথা বলছে।’’
মোদীকে অকৃতজ্ঞ বলেও এদিন বিঁধেছেন মমতা। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই জায়গাটা আমাদের বুক করা ছিল। ৩১ তারিখে আমরা বুক করি। আপনি তো চিঠি অনেক পরে দিয়েছেন। আমাদের বুক করা ছিল। আমি বললাম, দিয়ে দে ভাই দিয়ে দে। বলছে দিদি, প্যান্ডেল হয়ে গেছে। আমি প্যান্ডেল খুলে দিলাম। কোথায় কৃতজ্ঞতা জানাবে তা নয়।’’