Advertisment

দেশ জুড়ে বিপর্যয়, অস্তিত্বরক্ষার সংকটে বামপন্থা

পশ্চিমবঙ্গের ফলাফল থেকে স্পষ্ট, বামপন্থী ভোটের বিপুল অংশ বিজেপিতে গিয়েছে। ২০১৪ সালে সিপিএম রাজ্যে ২২.৯৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার তাদের প্রাপ্ত ভোট কমে হয়েছে ৬.৩ শতাংশ। সিপিআই-এর ভোট ২.৩৬ শতাংশ থেকে কমে ০.৩৯ শতাংশ হয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
left front, election result

বিপর্যয়ের মুখে বাম

সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে দেশ জুড়ে প্রবল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন বামপন্থীরা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে, আগামী কয়েক বছর কার্যত অস্তিত্বরক্ষার লড়াই করতে হবে তাঁদের। বৃহস্পতিবার ফলপ্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, একসময়ের লাল দুর্গ হিসেবে পরিচিত পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীরা একটি আসনও পাননি। এমনকি, ১৯৭৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৪ বছর সরকার চালানো সত্ত্বেও সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে বাংলায় বামপন্থীরা ৪২টি আসনের কোনওটিতে দ্বিতীয় স্থানেও নেই। কেরালার ফলাফলও তথৈবচ। দক্ষিণের ওই রাজ্যে সরকারে রয়েছেন বামপন্থীরা। কিন্তু এবার তাঁরা একটিমাত্র আসনে জিততে পেরেছেন। দেশজুড়ে বামেদের প্রাপ্তি মাত্র পাঁচটি আসন।

Advertisment

২০০৪ সালের নির্বাচনে বামপন্থীরা চমকপ্রদ ভাল ফল করেছিলেন। সেবার গোটা দেশে তাঁরা মোট ৫৯টি আসন পেয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-১ সরকারের অন্যতম প্রধান কারিগর ও চালিকাশক্তি হতে পেরেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকেই বামপন্থীদের রক্তক্ষরণ শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত। ২০০৯ সালে বামেরা পান ২৪টি আসন। ২০১৪ সালে সেই সংখ্যা কমে হয় ১০। এবার তারও অর্ধেক। দেশের প্রধান বামপন্থী দল সিপিআই (এম) ২০০৪ সালে ৪৪টি আসনে জয় পেয়েছিল। ২০০৯ সালে সেই সংখ্যা কমে হয় ১৬। ২০১৪ সালে নয়জন সিপিআই (এম) সাংসদ লোকসভা যেতে পেরেছিলেন। এবার সেই সংখ্যা কমে হয়েছে মাত্র তিন। আলাপপুঝা এবং তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর ও মাদুরাই আসনে সিপিআই (এম) প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। আরেকটি কমিউনিস্ট দল সিপিআই পেয়েছে দুটি আসন - তামিলনাড়ুর নাগাপট্টিনাম ও তিরুপ্পুর।

আরও পড়ুন: কেন এমন হলো! বিহ্বল আলিমুদ্দিন

বামপন্থীদের প্রাপ্ত পাঁচটি আসনের চারটিই এসেছে তামিলনাড়ু থেকে। যেখানে কমিউনিস্টরা কার্যত প্রান্তিক শক্তি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, এই চারটি আসন প্রাপ্তির কৃতিত্ব মূলত ডিএমকে-কংগ্রেস জোটের। পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বামপন্থীরা দুটি আসন পেয়েছিলেন। সেই দুই আসনেও এবার তাঁরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন। রায়গঞ্জে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য, সদ্য বিদায়ী সাংসদ মহম্মদ সেলিম তৃতীয় হয়েছেন। মুর্শিদাবাদ আসনে বিদায়ী সিপিএম সাংসদ বদরুজ্জা খান চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। শবরীমালা বিতর্কের জেরে কেরালায় বামপন্থীরা শোচনীয় ফল করেছেন। অন্যদিকে, ওয়ানাডে রাহুল গান্ধি প্রার্থী হওয়ায় বিপুল লাভবান হয়েছে কংগ্রেস। বিহারের বেগুসরাইতে সিপিআই-এর প্রার্থী হয়েছিলেন বাম শিবিরের পোস্টার-বয় কানহাইয়া কুমার। তিনি দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেও বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন।

পশ্চিমবঙ্গের ফলাফল থেকে স্পষ্ট, বামপন্থী ভোটের একটি বিরাট অংশ বিজেপিতে গিয়েছে। ২০১৪ সালে সিপিএম রাজ্যে ২২.৯৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবার তাদের প্রাপ্ত ভোট কমে হয়েছে ৬.৩ শতাংশ। সিপিআই-এর ভোট ২.৩৬ শতাংশ থেকে কমে ০.৩৯ শতাংশ হয়েছে।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, লোকসভা নির্বাচনে যতবার বামপন্থীরা ভাল ফল করেছেন, প্রতিবারই কংগ্রেসের পক্ষে হাওয়া ছিল। ১৯৮০ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী ঝড় তুলে ক্ষমতায় ফিরে আসেন। সেবার বামেরা পেয়েছিলেন ৫৪টি আসন। ইন্দিরার মৃত্যুর পর ১৯৮৪ সালে নির্বাচনে বামপন্থীরা ৩৩টি আসনে জিতেছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক শিবিরে ধ্বস নামার অব্যবহিত পরেই ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বামেদের ঝুলিতে গিয়েছিল ৫৬টি আসন।

আরও পড়ুন: একা কুম্ভ হয়ে বহরমপুরে গড় রক্ষা করলেন অধীর

সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক সুধাকর রেড্ডি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে আমরা ৩-৪টি আসন আশা করেছিলাম। যে কেন্দ্রগুলিতে আমরা জেতার আশা করেছিলাম, সেগুলিতে ব্যাপক ছাপ্পা ভোট হয়েছে। পাশাপাশি, এটাও দেখা গিয়েছে যে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে বামপন্থী ভোটারদের একাংশ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।"

দক্ষিণপন্থার উত্থানের ফলে বামপন্থীরা তাঁদের প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে রেড্ডি বলেন, "দক্ষিণপন্থা নিঃসন্দেহে অগ্রসর হচ্ছে। এর ফলে দেশ আরও জনবিরোধী, শ্রমিক বিরোধী নীতির মুখোমুখি হবে।" বামপন্থীদের ভবিষ্যত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক জানান, তাঁরা সবকিছু খতিয়ে দেখবেন।

রেড্ডির সহকর্মী তথা সিপিআই-এর পলিটব্যুরো সদস্য ডি রাজা বলেন, "এটা ঠিক যে এত বড় নির্বাচনী ধাক্কার মুখোমুখি এর আগে বামপন্থীরা কখনো হননি। এই ফলাফল ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক বিরোধী দলগুলির ব্য়র্থতাকেই সামনে এনেছে। বিরোধী দলগুলি যদি রাজ্যে রাজ্যে একে অন্যের কাছাকাছি আসতে পারত এবং সঠিক ভাবে আসন ভাগাভাগি করা যেত, তাহলে এমন ফল হতো না। তবে এই বিপর্যয়েই সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি।"

left front CPIM CPI
Advertisment