Lok Sabha Election Results 2019: ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ’, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই স্লোগানেই বাংলায় পতন ঘটেছিল ৩৪ বছরের বাম সাম্রাজ্যের। সালটা ছিল ২০১১। ৮ বছর বাদে আবারও সেই একই স্লোগান, শুধু একটা শব্দের রদবদল। মমতার স্লোগানে ছিল ‘ফুল’। সেই স্লোগান ‘এডিট’ করে অমিত শাহ বললেন, ‘‘চুপচাপ কমল (পদ্ম) ছাপ’। মমতার ওই স্লোগানকেই হাতিয়ার করে বাংলায় তৃণমূলকে বড়সড় ধাক্কা দিল পদ্মবাহিনী। ২৩টি আসনে জেতার লক্ষ্যপূরণ না হলেও, বাংলায় ১৮ ছুঁয়েই খুশিতে ডগমগ দিলীপ ঘোষরা। ১৮টি লোকসভা কেন্দ্র দখল করে নিঃসন্দেহে বঙ্গে বড়সড় উত্থান ঘটল বিজেপির।
২০২১ সালের বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবারের লোকসভা নির্বাচন কার্যত যেন সেমিফাইনাল ম্যাচ। সেমিফাইনাল ম্যাচে যেভাবে বাংলার বুকে ঝোড়ো ইনিংস খেলল পদ্মবাহিনী, তাতে মমতা শিবিরের ধুকপুকানি যে বাড়ল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টিতেই পদ্মফুল ফুটেছে। ৪টি আসন বেশি পেয়ে তৃণমূলের দখলে ২২টি কেন্দ্র। একেবারে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে বিজেপি। শতাংশের হিসেবে তৃণমূলের সঙ্গে জোর টক্কর কেটেছে বিজেপি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গে সাকুল্যে ২টি আসন দখল করে গেরুয়াবাহিনী পেয়েছিল ১৮ শতাংশ ভোট। ৫ বছর বাদে বিজেপির ভোট শতাংশ দ্বিগুণ হয়ে গেল। এবার ১৮টি আসন জিতে বিজেপি পেয়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি ভোট।
আরও পড়ুন: বাংলায় দুই থেকে দুই অঙ্কে বিজেপি
প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনে এবার বাংলাকে পাখির চোখ করেছিলেন মোদী-শাহরা। বাংলায় এসে যেমন ২৩টি আসনে জেতার টার্গেট বেঁধে দিয়েছিলেন শাহ, তেমনই বারবার বাংলায় এসে ভোটপ্রচার করতেও দেখা গিয়েছে মোদী সেনাপতিকে। শুধু শাহই নন, বাংলায় এবার বারবার ঢুঁ মেরেছেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী। বঙ্গে বিজেপির সংগঠন মজবুত করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ও শিবপ্রকাশ। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরই বাংলায় সংগঠন বাড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়েছিল গেরুয়াবাহিনী। এজন্যই ২০১৫ সালে বাংলায় পাঠানো হয়েছিল বিজয়বর্গীয় ও শিবপ্রকাশের মতো কেন্দ্রীয় নেতাদের।
রাজনৈতিক বিশ্লষেকদের মতে, বাংলায় বিজেপির এমন উত্থানের নেপথ্যে ছিল সুদৃঢ় পরিকল্পনা। তৃণমূল স্তর থেকেই সংগঠনের ভিত মজবুত করার কাজ শুরু করেছিল বিজেপি। সেকারণেই ২০১৫ সালে বিজেপির মণ্ডল কমিটির সংখ্যা ৪৫২ থেকে বেড়ে এখন হয়েছে ১২৮০। ৪ বছরে গড়ে উঠেছে ১২ হাজার ৪০৭টি শক্তিকেন্দ্র, ১০ হাজার ২৬৬ শক্তিকেন্দ্র প্রমুখ ও ৫৮ হাজার ৮৪টি কমিটি। বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশরা যেমন সংগঠন মজবুত করার কাজ করছিলেন, তেমনই দলকে চাঙ্গা করতে সঠিক নেতৃত্ব বাছাইয়েও ভূমিকা পালন করেছেন। লোকসভা নির্বাচনে দলের কাজ পরিচালনার জন্য গোটা রাজ্যে ৫ ভাগে ভাগ করেছিল বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব। নির্বাচনী জয়ের থেকেও বাংলায় এবার লোকসভা নির্বাচনের সাফল্য বিজেপির কাছে যেন স্বপ্নপূরণের মতো। ১৯৫২ সালে বিজেপির পূর্বসূরী ভারতীয় জন সংঘ ২টি লোকসভা কেন্দ্র ও ৯টি বিধানসভা কেন্দ্র দখল করেছিল।
আরও পড়ুন: ‘গদ্দার’ চাণক্যই বিজেপির বাংলা জয়ের কারিগর
বাংলায় বিজেপির সংগঠন বাড়ানো প্রসঙ্গে কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘‘যখন আমরা কাজ শুরু করেছিলাম এখানে, কাউকেই সঙ্গে পেয়েছিলাম না। হয় ভয় পেয়ে আসত না আমাদের সঙ্গে, না হলে আমাদের পছন্দ করত না। কিন্তু আমরা মণ্ডলস্তর পর্যন্ত সংগঠন মজবুত করার কাজটা আমরা চালিয়ে গিয়েছিলাম। তাই পরিস্থিতি বদলেছে’’।
এদিকে, এবার লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কোনও খাতা খুলতেই পারেনি বামেরা। বাম-রাম একসঙ্গে কাজ করেছে বাংলায় অভিযোগ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে প্রসঙ্গে দমদমের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সৌগত রায় বলেন, ‘‘এটা প্রমাণিত যে, সিপিএমের সব ভোট বিজেপিতে গিয়েছে। আমাদের দলনেত্রীই বলেছিলেন, বাংলায় বাম-রাম একসঙ্গে কাজ করছে’’।
Read the full story in English