লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোটদানের দুদিন আগে ভোট পিছিয়ে দেওয়া হলো পূর্ব ত্রিপুরা (এসটি সংরিক্ষত) আসনে। এর ফলে ১৮ এপ্রিলের বদলে এই আসনে এবার ভোট গ্রহণ করা হবে ২৩ এপ্রিল। এই মর্মে মঙ্গলবার একটি ঘোষণা করে ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক শ্রীরাম তরণীকান্তি জানান, নিরাপত্তা এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।
মঙ্গলবার রাতে এক সাংবাদিক বৈঠকে তরণীকান্তি বলেন, নিরাপত্তার কারণেই পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পিছিয়ে দিয়েছে কমিশন। রাজ্য নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২৩ এপ্রিলের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার, এবং ভোটদাতাদের আস্থা অর্জন করার।
তরণীকান্তি জানান, "সকলেই জানেন ১১ এপ্রিল ভোটের দিন কী হয়েছিল। আমি বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করে দেখেছি। এমন বেশ কিছু ভিডিও দেখেছি যেগুলি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অমান্য করা হয়েছে। আমরা বিস্তারিত তথ্য কমিশনকে জানিয়েছি। আশা করছি, ২৩ এপ্রিলের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি করতে পারব, যাতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা যায়।"
আরও পড়ুন: গেটের বাইরে ঝুলছে মুরগির মাথা, ভোট দানের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ত্রিপুরার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং বিশেষ পুলিশ পর্যবক্ষেকের কাছ থেকে পাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, পূর্ব ত্রিপুরা সংসদীয় কেন্দ্রে বর্তমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ১৮ এপ্রিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে "অনুকূল নয়"। ওই বিজ্ঞপ্তিতেই বলা হয়েছে যে, ত্রিপুরার বিশেষ পুলিশ পর্যবক্ষেক তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, তাঁর মতে নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।
ত্রিপুরা কংগ্রেসের সভাপতি তথা সে রাজ্যের প্রাক্তন রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মণ কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তাঁর দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ১১ এপ্রিল পশ্চিম ত্রিপুরা কেন্দ্রে প্রথম দফার ভোট চলাকালীন কারচুপি এবং হিংসা সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।
প্রদ্যোৎ বলেন, "১১ এপ্রিল পশ্চিম ত্রিপুরার লোকসভা ভোটে ব্যাপক হারে রিগিং করা হয়। নির্বাচন কমিশনের কাছে এ সম্পর্কে অভিযোগ করেন ত্রিপুরা কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা এবং অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির লিগ্যাল টিম। ভোটদান একেবারেই অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ হয় নি। নিরাপত্তার কারণে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার এই পদক্ষেপকে ত্রিপুরা কংগ্রেস স্বাগত জানায়।"
তিনি আরও দাবি করেন যে ১১ এপ্রিল যারা রিগিং এবং আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের কাজে জড়িত ছিল, তাদের সরাসরি সাহায্য করেন রাজ্য সরকারের অধীনস্থ কর্মচারীদের একাংশ। এর আগে কংগ্রেসের তরফে রাজ্যের বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হারে রিগিং, বুথ জ্যামিং, এবং অন্যান্য বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়।
উল্লেখ্য, এই নিয়ে দেশের দুটি লোকসভা কেন্দ্রে বাতিল করা হলো ১৮ এপ্রিলের ভোটদান পর্ব। সোমবার তামিলনাড়ুর ভেলোরে নির্বাচন বাতিল করতে চেয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন, যে আবেদন মঞ্জুর করতে কার্যত বাধ্য রাষ্ট্রপতি। ভেলোরে ভোটারদের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ কমিশনের। সমগ্র তামিলনাড়ুতেই নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়েছে ১৮ এপ্রিল।