২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন দোরগোড়ায়। তার আগে বিরোধী দলগুলি আরও একবার মোদী-বিরোধী ঐক্যের আগুনে হাত সেঁকে নিল। এবারের ঘটনাস্থল যন্তর মন্তর। এবারের ডাক আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের। কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাবেশের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচার হতেই পারে এই সমাবেশের।
কেজরিওয়ালের ডাকা সমাবেশে সারা দেশের নেতা-নেত্রীদের উপস্থিত থাকার কথা। এঁদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো রয়েইছেন, রয়েছেন অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ফারুক আবদুল্লা এবং এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের নামও। এছাড়াও বিরোধীদের এই ক্ষমতা প্রদর্শনীতে থাকার কথা সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, রাষ্ট্রীয় লোক দল এবং আরজেডি নেতাদের।
আরও পড়ুন, সংসদে বিরোধী ঐক্যের ছবি, তৃণমূলের বিক্ষোভে রাহুল গান্ধী
আপ আয়োজিত এই সমাবেশে সম্ভবত থাকছে না কংগ্রেস। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, বেলা সাড়ে তিনটের সময়ে তিনি রাফাল নিয়ে নতুন তথ্য জানানোর জন্য সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দিয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি কলকাতায় আয়োজিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা মহাজোটের সমাবেশেও হাজির হননি তিনি। তবে দলের পক্ষ থেকে কলকাতায় গিয়েছিলেন অভিষেক মনু সাংভি এবং মল্লিকার্জুন খাড়্গে। আম আদমি পার্টির বরিষ্ঠ নেতা গোপাল রাইকে উদ্ধৃত করেছে সংবাদসংস্থা পিটিআই। তিনি বলেছেন, ”মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আয়োজিত এই সমাবেশে সমস্ত বিরোধী নেতানেত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। গত মাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আয়োজিত সমাবেশে যাঁরা হাজির ছিলেন, সকলেই উপস্থিত হবেন এই সমাবেশেও।”
বিরোধীরা যখন ডিক্টেটর হঠাও, দেশ বাঁচাও শ্লোগান তুলে একত্রিত হওয়ার ডাক দিচ্ছে- তখন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গত এক বছরে কোন কোন সময়ে বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
১. এন চন্দ্রবাবু নাইডুর দিল্লি নাট্য
অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা তেলুগু দেশম পার্টির নেতা গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের বিশেষ মর্যাদার দাবিতে অনশন করেন। বিরোধী ঐক্যের সূচনা সম্ভবত সেখান থেকেই। নয়া দিল্লির অন্ধ্র ভবনে চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে দেখা করতে যান রাহুল গান্ধী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ নেতা অরবিন্দ কোজরিওয়াল, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা, এনসিপি-র মজিদ মেনন, তৃণমূলের ডেরেক ও ব্রায়েন, ডিএমকে-র তিরুচি শিবা, লোকতান্ত্রিক জনতা দলের শরদ যাদব এবং সমাজবাদী পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব।
২. কলকাতায় মমতার ‘দেশ বাঁচাও, গণতন্ত্র বাঁচাও সমাবেশ‘
মোদীর এক্সপায়ারি ডেট শেষ হয়ে গেছে। ঘরের মাঠ থেকে এভাবেই আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রিগেড সমাবেশে ২০টি বিরোধী দল একজোট হয়েছিল। মমতা সেদিন বলেছিলেন, সবাইকে দেশের স্বার্থে একত্রিত হতে হবে। যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী সে রাজ্যে বিজেপির সঙ্গে লড়ার জন্য তাকে সমর্থন করতে হবে।
ফারুক আবদুল্লা, দেবগৌড়া, কেজরিওয়াল, চন্দ্রবাবু নাইডু, এখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব স্ট্যালিন, বদরুদ্দিন আজমল এবং হেমন্ত সোরেনের মত নেতারা সেদিন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেনই শুধু নয়, লোকসভা ভোটের আগে বিরোধী ঐক্য নিয়েও কথা বলেছিলেন তাঁরা। খাড়্গে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে সোনিয়া গান্ধীর বার্তা পড়ে শুনিয়েছিলেন।
৩. ইভিএম নিয়েও একজোট বিরোধীরা
২১টি বিরোধী দল মাঝ-জানুয়ারি নাগাদ ইভিএম ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। তাঁরা নির্বাচন কমিশনকে জানান, প্রচুর সংখ্যক ইভিএম যথাযথ ভাবে কাজ করছে না- যার সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে। মধ্য প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় মোট ভোটদানের পরিমাণ এবং যে পরিমাণ ভোট গোনা হয়েছে, তার সংখ্যার মধ্যে অমিলের কথাও বলেছেন তাঁরা।
৪. রাহুল গান্ধীর বাস যাত্রা
তিনটি হিন্দি হার্টল্যান্ড বলে পরিচিত রাজ্য- মধ্য প্রদেশ, ছত্তিসগড় এবং রাজস্থানে রাহুল গান্ধীর বাসযাত্রায় সঙ্গী হয়েছিলেন অনেক বিরোধী নেতা। তিন রাজ্যের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানেও হাজির হয়েছিলেন অনেকেই।
৫. কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণ
বিরোধীদলের প্রথম কাছাকাছি আসার ঘটনা ঘটেছিল কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে। সেখানে হাজির হয়েছিলেন দশজনেরও বেশি বিরোধী নেতা-নেত্রী।
আরও পড়ুন, প্রিয়াঙ্কার অভিষেক, রবার্টের প্রার্থনা
৬. সোনিয়া গান্ধীর বিরোধীদের জন্য আয়োজিত নৈশভোজ
ইউপিএ চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী গত বছর মার্চ মাসে বিরোধী দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন শরদ পাওয়ার, রাম গোপাল যাদব, তেজস্বিনী যাদব, হেমন্ত সোরেন, জিতন রাম মানঝির মত নেতারা। তখন জেডি(এস)-এর সঙ্গে কংগ্রেসের কর্নাটকে লড়াই চলছিল। তারা সে নৈশভোজে অংশ নেয়নি।
Read the Full Story in English