বিজেপির সভার দিনক্ষণ ঘোষণা ক্রমশ রাজনৈতিক মহলে হাসির খোরাক হয়ে উঠছে। তা প্রধানমন্ত্রীর সভা হোক বা অমিত শাহর সমাবেশ। শেষ মুহূর্তে জানা যাচ্ছে বক্তা কে। কখনও বক্তা যে কোনো কারণেই হোক সভায় হাজিরই হতে পারছেন না। সভা-সমাবেশ নিয়ে এতবার দিন-তারিখের বদল সম্ভবত দেশের কোনও রাজনৈতিক দলই করে না। এবার কি দিনক্ষণ ঘোষণা অনুযায়ী সভা করতে পারবে রাজ্য বিজেপি? তা নিয়ে প্রশ্ন খোদ দলের অন্দরেই।
রথযাত্রা হয়নি আদালতের নির্দেশে। ব্রিগেড ঘোষণা হয়েছে একাধিকবার। তাও বিজেপি ব্রিগেডমুখী হতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সময় জেনে নিয়ে ব্রিগেডের বদলে ঘোষণা ছিল আসানসোলে সভা হবে ৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু তারও বদল ঘটে যায়। শুক্রবার বিজেপি দপ্তরে ফের সাংবাদিক বৈঠক করে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, "প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব সহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এরাজ্যে সভা করবেন।"
বিজেপির নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, নরেন্দ্র মোদী আগামী ২ ফেব্রুয়ারি দুটি সভা করবেন। একটি ঠাকুরনগর, অন্যটি দুর্গাপুর-বর্ধমানে। ৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড থেকে আসানসোল ঘুরে এদিন ঘোষণা করা হয়েছে, মোদীর সভা হবে শিলিগুড়িতে। যদিও দলের সভা নিয়ে রাজ্য বিজেপির নেতা-কর্মীরাও নিজেদের কানকে আর বিশ্বাস করতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: উনিশে মোদী-শাহর নজরে বাংলা, এ রাজ্যে তিনশোরও বেশি সভা!
এদিন দিলীপবাবু টানা বেশ কয়েকটি সমাবেশের কথা জানিয়েছেন। মোদি ছাড়়া এরাজ্যে আসছেন যোগী আদিত্যনাথ। তিনি ৩ ফেব্রুয়ারি বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় সভা করবেন। ৫ ফেব্রুয়ারি সভা করবেন বালুরঘাট ও রায়গঞ্জে। তার আগে বিপ্লব দেব ২৯ জানুয়ারি সভা করবেন ঘাটালে ও পরের দিন সভা করবেন আরামবাগে। তারিখ চূড়ান্ত না হলেও ঠিক হয়েছে শিবরাজ সিং চৌহান সভা করবেন দমদম ও বহরমপুরে। ধর্মেন্দ্র প্রধান সভা করবেন কাঁথিতে। অর্জুন মুন্ডার সভা হবে বিষ্ণুপুরে। রাজনাথ সিং ২ ফেব্রুয়ারি ডায়মন্ড হারবারে জনসভা করবেন বলে দলীয় সভাপতি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ওই দিন আবার রাজ্যে দুটি সভা করবেন মোদী।
অন্য দিকে, এদিন সাংবাদিক বৈঠকে দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সভাপতি লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, "শ্রীকান্ত মোহতা গ্রেপ্তার হওয়ায় টলিপাড়ার ৯৯ শতাংশ মানুষ খুশি। গতকাল অনেকে শান্তিতে ঘুমিয়েছেন। বহু মানুষের পেটের ভাত কেড়ে নিয়েছেন তিনি। প্রিয়া সিনেমা বন্ধ করে দিয়েছেন। শ্রীকান্ত রাজনৈতিক ভাবে পুরো বাংলা সিনেমা জগতকে আয়ত্তে নিয়ে নিয়েছেন। ওঁর জন্য দেবের সিনেমাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। যদিও তৃণমূলে আছে বলে দেব কিছু বলতে পারছে না।" দিলীপবাবু মোহতাকে "জমি মাফিয়া" বলে বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি তাঁর উক্তি, "দিদির ভাইকে ধরে তদন্ত চললে তিলজলা পর্যন্ত চলে আসবে।"
ওদিকে দলবদলের হিড়িকে এবার তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের 'ভাইপো' সহ ভাটপাড়ার এক ঝাঁক তৃণমূল নেতা বিজেপিতে যোগ দিলেন। যদিও বিশ্বরূপ মণ্ডল তাঁর ভাইপো নয় বলে দাবি করেছেন অনুব্রত। তাঁর প্রশ্ন, "বিশ্বরূপ কে? আমি চিনিই না।" বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়ের হাত থেকে বিজেপির পতাকা গ্রহণ করেন নতুন সদস্যরা। মুকুলবাবুর দাবি, "বিশ্বরূপবাবুই আমাদের বলেছেন তিনি অনুব্রতর ভাইপো।" বিশ্বরূপবাবু স্পষ্ট বলেন, "রক্তের কোনও সম্পর্ক নেই, এমনকী দূরসম্পর্কেও কাকা নয়। এমনি কাকা-ভাইপোর সম্পর্ক অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে। আমাকে উনি চেনেন।" উল্লেখ্য, সম্প্রতি তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত সাংসদ অনুপম হাজরাও অনুব্রতর 'ভাইপো' হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
এদিন বিজেপির দেওয়া তালিকা অনুযায়ী কারা যোগ দিলেন দলে? বিশ্বরূপ মণ্ডল ওরফে টাইগার (অনুব্রতর তথাকথিত ভাইপো), প্রাক্তন তৃণমূল যুবর ভাটপাড়ার সহ সভাপতি রবি সিং, ভাটপাড়ার অনিল গুপ্তা, সুনীল সাউ এবং নৈহাটির শুভম সিং ও তাঁর অনুগামীরা।