নিজের এলাকার সাংসদকে পছন্দ করেন না বিধায়ক। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে তিনি যাচ্ছেন পাশের লোকসভার দলীয় প্রার্থীর প্রচারে। অথচ নিজের কেন্দ্রে তিনি কার্যত নিষ্ক্রিয়! বারাসাতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার বনাম রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের দ্বন্দ্ব নির্বাচনের প্রাক্কালে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শাসকদল তৃণমূলের।
বারাসাত লোকসভার অর্ন্তগত সাতটি বিধানসভার একটি রাজারহাট-নিউটাউন। স্থানীয় ও তৃণমূল সূত্রের খবর, নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে এখনও পর্যন্ত সাংসদ তথা দলীয় প্রার্থী কাকলির সমর্থনে কোনও প্রচার করেননি সব্যসাচীর অনুগামীরা। সে কথা প্রকাশ্যে জানাতেও দ্বিধা নেই বিধায়কের।
কেন কাকলিকে বয়কট?
মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সব্যসাচী বলেন, "আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি। নির্বাচনে সব কেন্দ্রেই তৃণমূলের জয় চাই। কিন্তু বারাসত কেন্দ্রের প্রার্থীর জন্য কোনও প্রচার আমি করছি না।" কেন? সব্যসাচীর দাবি, কাকলি তাঁকে প্রচারে নিতে চাননি। তাঁর কথায়, "আমি তো নিজে থেকে প্রচার করে প্রার্থীকে বিব্রত করতে পারি না। বাকি বিধায়ক, নেতাদের ডাকা হলেও উনি আমাকে ডাকেননি। তাই আমিও ওঁর জন্য প্রচার করছি না।" এরপরই তাঁর সংযোজন, "২০১৬ সালের নির্বাচনে স্থানীয় সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও উনি আমার জন্য প্রচার করেননি। হয়তো উনি চাননি আমি জয়ী হই। কিন্তু মানুষ আমাকে জিতিয়েছেন। আমার জেতার জন্য ওঁকে প্রয়োজন হয়নি। এবার উনি প্রার্থী। আমিও ওঁর হয়ে প্রচার করছি না। হয়তো আমাকেও ওঁর প্রয়োজন নেই।"
আরও পড়ুন, Lok Sabha Election 2019: ‘প্রণব আরএসএস অফিসে গিয়েছিলেন, অধীর-অভিজিতের হয়ে কাজ করছে সংঘ’
কাকলির হয়ে মাঠে না নামলেও প্রতিদিন নিয়ম করে ভোটের প্রচারে বেরোচ্ছেন সব্যসাচী। পাশের দমদম লোকসভার প্রার্থী সৌগত রায়ের হয়ে দু'বেলা প্রচার করছেন রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক। তিনি বলেন, "সৌগতদা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই প্রার্থী। তাঁকে জেতাতে লড়াই করা মানে মুখ্যমন্ত্রীর হাতকেই শক্ত করা। আমি সেটাই করছি।"
সব্যসাচীর নিষ্ক্রিয়তাকে অবশ্য গুরুত্বই দিচ্ছেন না কাকলি। আসামে দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচার করার ফাঁকে তিনি বলেন, "এসব নিয়ে কথা বলার কোনও অর্থ হয় না। কারও যদি দলের হয়ে প্রচার করতে ইচ্ছে না হয়, তাহলে তিনি করবেন না। ভোট জোড়া ফুল প্রতীকে হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে প্রার্থী করেছেন, তিনিই মানুষের সমর্থন পাবেন৷ কোনও ব্যক্তির আলাদা গুরুত্ব নেই।" তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিধানসভা হাবড়া কাকলির লোকসভার মধ্যেই পড়ে। সব্যসাচী প্রসঙ্গে এদিন জ্যোতিপ্রিয় বলেন, "সবাইকে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। নির্বাচনের লড়াই চলছে, গুরুত্বহীন বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। যে যা ইচ্ছা করুক, বারাসতে আমরা ব্যবধান বাড়িয়ে জিতব।"
সব্যসাচীর নিষ্ক্রিয়তায় কি সমস্যায় পড়তে পারেন কাকলি? তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের বক্তব্য, বারাসতে এবার লড়াই ঈষৎ কঠিন। ২০১৪ সালে কাকলি পেয়েছিলেন ৫ লক্ষ ২৫ হাজার ৩৮৭ ভোট, ৪১.৩৯ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৩৮৭ ভোট। বিজেপি-র পি সি সরকারের ঝুলিতে গিয়েছিল ২ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬০৮ ভোট। গত ৫ বছরে বামেদের সংগঠন কমেছে, বেড়েছে গেরুয়া ব্রিগেডের প্রভাব। বারাসতের এক তৃণমূল নেতার কথায়, "সব্যসাচীর প্রায় লাখখানেক পকেট ভোট রয়েছে। তার একাংশ যদি পদ্মফুলে যায়, তাহলে আমাদের সমস্যা।"
সম্প্রতি সব্যসাচীর সঙ্গে বিজেপি-র যোগাযোগ নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে। দলে বিধাননগরের মেয়রের বিরোধীদের অভিযোগ, বারাসতে তৃণমূলকে হারাতে সক্রিয় তাঁর অনুগামীদের একাংশ। সব্যসাচী অবশ্য বলেন, "বিজেপিতে কেন যাব! আমি তো দমদমে তৃণমূলের হয়েই প্রচার করছি!"