scorecardresearch

কেন এই তিনটি পরীক্ষায় ব্যর্থ ইভিএম?

ভোটদান প্রক্রিয়া হতে হবে সঠিক, গণনাও হবে সঠিকভাবে, এবং গোপনীয়তা যাতে রক্ষা করা হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। স্বচ্ছতা, শুদ্ধতা, এবং গোপনীয়তা যে কোনো নির্বাচনের তিন প্রধান স্তম্ভ হওয়া দরকার।

কেন এই তিনটি পরীক্ষায় ব্যর্থ ইভিএম?

ইভিএম নিয়ে আলোচনা নতুন করে শুরু হয়েছে, বিরোধী দলেরা একযোগে ইভিএম বাতিলের দাবি তুলেছে। যদিও এই মূহূর্তে ইভিএম কাজ না করা আর ইভিএমকে প্রভাবিত করার মধ‍্যে যে সূক্ষ্ম তফাৎ আছে সেই নিয়ে আলোচনা শুরু হয় নি, কিন্তু নাগরিক পরিসরে কিছু আলাপ আলোচনা চলছেই। তাহলে কি আমার ভোটটা পড়েনি ঠিক জায়গায়? তাহলে কি গণতন্ত্রে আমার কোনো ভূমিকাই নেই? যা ভোট পড়ে যে কোনো নির্বাচনে, তার সঙ্গে যদি একটা ভোটেরও তফাৎ হয়, তাহলেও ইভিএম প্রশ্নের মুখে পড়ে। সেই জন‍্যই এই আলোচনাটা জরুরি।

নির্বাচনের প্রধান নীতি

একটা রাষ্ট্র কখন গণতান্ত্রিক হয়? যখন সেই রাষ্ট্র তার সরকারকে নীতিগত মান‍্যতা দেয়। এই মান‍্যতা দেওয়ার প্রক্রিয়াতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে। আর তা ঘটে ভোট দেওয়ার মধ‍্যে দিয়ে। শুধু তাই নয়, কে ভোট পেলেন, তা গোপন রাখার মধ‍্যে দিয়েও এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং এই ভোটদান প্রক্রিয়া হতে হবে সঠিক, গণনাও হবে সঠিকভাবে, এবং গোপনীয়তা যাতে রক্ষা করা হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। স্বচ্ছতা, শুদ্ধতা, এবং গোপনীয়তা যে কোনো নির্বাচনের তিন প্রধান স্তম্ভ হওয়া দরকার। এটা ইভিএমের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকার বিষয় নয়, যে কোনো নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে এই তিনটি জিনিস মাথায় রাখা হচ্ছে কী না, সেটা নজরে রাখা জরুরি।

আরও পড়ুন: ইভিএম রিগিং করে বিজেপির জয়: পুলিশে নালিশ কমিশনের

ঘটনাচক্রে ইভিএম এই তিনটি পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতে ব‍্যর্থ। জার্মানির সাংবিধানিক আদালত ২০০৯ সালে এক স্পষ্ট রায়ে এই কথাগুলোই বলেছে এবং তারা আবার কাগজের ব‍্যালটে ফেরত গেছে। একইভাবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে থাকা নেদারল‍্যান্ড ও আয়ারল‍্যান্ড সহ আরো বেশ কিছু দেশ ইভিএম বাতিল করেছে।

ইভিএম স্বচ্ছ এবং সঠিক, এটি এক বাক‍্যে বলে দেওয়া যায় না, কারণ কোনো ভোটদাতাই তাঁর নিজের ভোট দেখতেও পান না, এবং সঠিক কিনা বুঝতেও পারেন না। যেটা বোঝা যায় সেটা হলো সর্বমোট কত সংখ‍্যক ভোট পড়ল, কিন্তু ভোটদাতার ভোট তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী পড়ল কী না, তা বোঝার কোনো উপায় নেই।

ঠিক এই কারণেই ভিভিপ‍্যাট বা ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট মেশিন ভারতে চালু করা হয়। কিন্তু তা দিয়েও পুরো সমস‍্যার সমাধান হয় না। কারণ এই মুহুর্তে আমাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়াতে সমস্ত ভিভিপ‍্যাট মেশিন গোনা হয় না। যদি এরকম করা যেতো যে কোনো নির্বাচনে একটা ইভিএমের গণ্ডগোল হলে সমস্ত ভিভিপ‍্যাট মেশিন হাতে গোনা হবে, তাহলেও বিষয়টা মেনে নেওয়া যেত, কিন্তু যতদিন না সেই সংক্রান্ত কোনো নিয়ম লাগু হচ্ছে, ততদিন ইভিএমকে সন্দেহের ঊর্দ্ধে রাখা যায় কি?

আসা যাক গোপনীয়তার বিষয়টিতে। যখন পেপার ব‍্যালটে ভোট হতো, তখন গণনার সময় সমস্ত ব‍্যালট আগে মিশিয়ে দেওয়া হতো, যাতে বোঝা না যায়, কোন অঞ্চলের মানুষ কোন প্রার্থীকে বা কোন রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়েছেন। যার ফলে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা থেকেও বাঁচার উপায় থাকত। দ্বিতীয়ত, কোন অঞ্চলের মানুষ সরকারি কোনো সুবিধা পেয়েও শাসকদলকে ভোট দিয়েছেন বা দেন নি, সেটা বোঝার সম্ভাবনা কমত। ফলে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে প্রচার করার যে বিষয়টা ইদানিং আলোচনায় আসছে, সেটা থেকে বিরত রাখা যেত রাজনৈতিক দলগুলিকে। আধার কার্ডের সঙ্গে ভোটার কার্ড যুক্তকরণের বিরুদ্ধে এটাও একটা জোরালো যুক্তি।

আরও পড়ুন: প্রশ্নটা ভোটদানের স্বচ্ছতার, মাধ্যমের নয়

প্রাথমিক পদক্ষেপ

যদিও এটা হয়তো সত‍্যি, যে ইভিএমে নির্বাচন হলে সময় এবং অর্থ কম ব্যয় হয়, কিন্তু এই তিনটি বিষয়কে প্রাধান‍্য দিতে ইভিএম ব‍্যর্থ। যদিও নির্বাচন কমিশনও এই বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ।

অনেকেই বলে থাকেন, এই পদ্ধতিতে ছাপ্পা ভোট এবং ব‍্যালট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা কমে গেছে, কিন্তু এটা তো সত‍্যি, যে ইভিএমের মাইক্রোচিপ দিয়ে যে ভোট হয়, তাকে বিশ্বাস করা ছাড়া ভোটদাতার কোনো গতি নেই। কোন সফটওয়্যারে এই মেশিন চলছে সেটাও জানা নেই। এটা প্রমাণ করা যথেষ্ট কঠিন যে ইভিএমে কারচুপি করা যায়, কিন্তু তা বলেই তা সন্দেহের ঊর্দ্ধে, সেটাও তো বলে দেওয়া যাচ্ছে না। এই সন্দেহই কি যথেষ্ট নয় যে আমরা ইভিএমের বদলে পেপার ব‍্যালটে ফিরে যাওয়ার আলোচনাটা অন্তত শুরু করতে পারি?

জার্মানির আদালতে বলা হয়েছিল, “যে কোনো নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক মান‍্যতা দিতে গেলে নির্বাচনী পদ্ধতিকে সম্পূর্ণরূপে স্বচ্ছ হতে হয়, তবেই একমাত্র সেই প্রক্রিয়া সন্দেহের ঊর্দ্ধে উঠতে পারে, তাতেই গণতন্ত্র রক্ষিত হয়।” সুতরাং ভারতের নির্বাচন কমিশনেরও দায়িত্ব, এই সন্দেহের ঊর্দ্ধে ভারতীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Election news download Indian Express Bengali App.

Web Title: The case for moving to paper ballot vvpat evm fail