/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/02/lead-17.jpg)
অভিষেক সিং। ছবি: অভিনেতার ফেসবুক পেজ থেকে
প্যাশন মানুষকে একটা সময় পেশা ছাড়তে বাধ্য করে। বাংলার নতুন প্রজন্মের অভিনেতা অভিষেক সিংয়ের গল্পটাও তাই। আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, দুবাইতে প্রায় ১০ বছর কর্পোরেট লইয়ার হিসেবে চাকরিও করেছেন। কিন্তু সব ছেড়েছুড়ে টিনএজের স্বপ্নটাকেই আঁকড়ে ধরলেন একটা সময় পরে। কেমন ছিল আইনজীবী থেকে অভিনেতা হয়ে ওঠার সেই জার্নি, একান্ত আলাপচারিতায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানালেন অভিষেক।
কলকাতার ছেলে কিন্তু পড়াশোনা করেছেন নৈনিতালের বোর্ডিং স্কুলে। উচ্চশিক্ষার পুরোটাই কলকাতার বাইরে। কলেজে পড়ার সময় থেকেই মডেলিং করতেন। থিয়েটারেও হাতেখড়ি ওই সময়ে। একটা সময়ে দোটানায় পড়েন-- অভিনয় নাকি আইনজীবীর কেরিয়ার। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়টিকেই বেছে নেন। চাকরিসূত্রে চলে যান দুবাই।
আরও পড়ুন: তানসেনের তানপুরা! আসছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে প্রথম থ্রিলার
''আমি প্রায় দশ বছর দুবাইতে ছিলাম, ২০১৫-তে ঠিক করলাম যে কলকাতায় ফিরব। নিজেকে তৈরি করব। আমি ২ বছর প্রায় সময় নিয়েছি। ফিটনেস বাড়িয়েছি, তার পর ২০১৭-তে আমি প্রথম ছবি করলাম-- ককপিট'', বলেন অভিষেক, ''আমার কাজিন রোমা 'চাঁদের পাহাড়' আর 'মেঘে ঢাকা তারা'-তে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ছিল। ওর সঙ্গে বাড়িতে প্র্যাকটিস করতাম, নিজেকে তৈরি করতাম। কমলেশ্বরদার কাছে ও নিয়ে গিয়েছিল। ৫ মিনিটের মিটিং। উনি আমাকে কাস্ট করেছিলেন 'ককপিট'-এ।''
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/02/4-7.jpg)
যাঁরা 'ককপিট' দেখেছেন, তাঁরা জানেন খুবই ছোট চরিত্রে অত্যন্ত নজর কেড়েছিলেন অভিষেক। এর পর বিগত দু বছরে পাঁচটি ছবি ও সাম্প্রতিক 'জাজমেন্ট ডে' নিয়ে তিনটি ওয়েব সিরিজে কাজ করে ফেলেছেন। কিন্তু মিক্সড মার্শাল আর্টে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রাক্তন বক্সার অভিষেক কেন মুম্বই অথবা দক্ষিণী ছবির জগতে নয়, কলকাতাতেই নিজের প্যাশনকে খুঁজতে এলেন?
''আমি আসলে ঠিক করেছিলাম বাংলা ছবিতে অভিনয় করব। আমি বম্বে যেতে চাইছিলাম না। আমার বাড়ি এখানে, এটা আমার শহর। তাছাড়া আমার মার্শাল আর্ট ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, আমি স্টান্ট করতে পারি নিজে, জিপ স্টান্টও নিজেই করি। একটা সময় প্রচুর জিপ রেস করেছি পাহাড়ে... তাই ভাবলাম হয়তো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে আমার কিছু স্কোপ থাকবে। আর আমি বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেও চাইছিলাম'', বলেন অভিষেক, ''প্রথম প্রথম বাড়িতে একটু অবাক হয়েছিল। এইভাবে চাকরি ছেড়ে চলে আসা... 'ককপিট'-এর কথা আগে আমি বলিনি। বাবা-মাকে টিকিট কেটে দিয়ে বলেছিলাম দেখে এসো, পরে বোলো... এখন অবশ্য সবাই খুবই খুশি।''
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/02/3-9.jpg)
তা বলে আইনজীবীর পেশাকে পুরোপুরি ছেড়ে আসেননি। লিগাল কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছেন অভিনয়ের পাশাপাশি। অভিষেকের মতে, আইনের পেশাতেও খুবই উচ্চমার্গের পারফরম্যান্স দরকার হয়। কোর্টরুমে দাঁড়িয়ে প্লিড করা আর মঞ্চে বা পর্দায় অভিনয়ে একই রকম দক্ষতা লাগে। অভিষেক শুধু আইনজীবীই নন, তিনি এসিএফই সার্টিফায়েড ফ্রড এগজামিনার। এই প্রশিক্ষণও তাঁর কাজে লেগেছে অভিনয়ে। কারণ এই ধরনের কোর্সে মনস্তত্ব, বডি ল্যাঙ্গোয়েজ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ শেখানো হয়।
ওয়েব সিরিজ 'জাজমেন্ট ডে'-তে এসিপি জাভেদ খানের চরিত্রে অভিনয়ের সময় তাঁর আইনের প্রশিক্ষণ কিছুটা হলেও কাজে লেগেছে। এই চরিত্রটি এই ক্রাইম থ্রিলারকে সমাধানের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। দেখে নিতে পারেন এই চরিত্রের গ্রাফ নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে--
'জাজমেন্ট ডে'-তে অভিষেকের অভিনয় ইতিমধ্যেই অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে বাংলা বিনোদন জগতে। এই চরিত্রের জন্য বিশেষ ফিটনেস ট্রেনিং করেছিলেন অভিনেতা। অভিষেক জানালেন, তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ওয়ার্কআউট রেজিম অনুসরণ করেছিলেন। প্রত্যেকটা চরিত্রের জন্য এভাবেই নিজেকে নিখুঁতভাবে তৈরি করেন অভিষেক।
সামনেই রয়েছে আরও দুটি ছবি-- রাজা চন্দের 'ভয়' এবং ধ্রব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিরিয়ড ছবি 'গোলন্দাজ'। এছাড়া হইচই-এর 'রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ'-এর দ্বিতীয় সিজনেও রয়েছেন অভিষেক। পাশাপাশি চলছে মঞ্চের অভিনয় এবং সিনেমার মাধ্যমকে আরও ভাল করে শেখা। ''আমাকে আপনি মেকআপ ভ্যান বা মেকআপ রুমে কখনও পাবেন না। আমি সারাক্ষণ ফ্লোরে থাকি, যতটা পারা যায় শিখে নিতে চাই'', বলেন অভিষেক।