Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

সত্যজিতের সেট দেখে কখনও সেট বলে মনে হতো না: বরুণ চন্দ

এখন আর্ট ডিরেক্টররা বাড়াবাড়ি রকমের সাজসজ্জা করে ফেলেন। সত্যজিৎ রায় কখনও তা করেন নি। সত্যজিৎ রায় কখনও আতিশয্য ঘটাতেন না। তাঁর মহত্ত্ব ছিল, যে তাঁর শিল্প লুক্কায়িত শিল্প।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
barun chanda satyajit ray

বরুণ চন্দ। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে তাঁর পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। আজ এই সিরিজের তৃতীয় কিস্তিতে রইল 'সীমাবদ্ধ' ছবির মুখ্য অভিনেতা বরুণ চন্দের সঙ্গে কথোপকথনের শ্রেষ্ঠাংশ। তিনি কথা বলেছেন আমাদের প্রতিনিধি অলকা সাহনির সঙ্গে।

Advertisment

"আমি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে প্রথমবার দেখা করি ছয়ের দশকের শেষের দিকে। সে জন্য একটু কৌশল করতে হয়েছিল। আমি তখন বিজ্ঞাপনে কাজ করি, কিন্তু চাইছিলাম অভিনয় করতে। তা 'স্টেটসম্যান' পত্রিকায় ছোটদের বিভাগের জন্য ওঁর একটা সাক্ষাৎকারের প্রস্তাব দিই। ওরা রাজি হয়। আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইলাম। ভেবেছিলাম আধঘণ্টা যথেষ্ট হবে। যদি আমি ওঁকে ইমপ্রেস না করতে পারি, তাহলেও ভাবব, চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। আমার সৌভাগ্য যে উনি আমাকে পছন্দ করেছিলেন, আমাদের যোগাযোগ থেকে গিয়েছিল।

আমি মাঝে মাঝেই রবিবারে ওঁর বাড়ির আড্ডায় যেতাম। এর মধ্যে উনি সীমাবদ্ধ (১৯৭১) ছবির জন্য আমাকে পছন্দ করে ফেলেছেন। উনি নিশ্চিত জানতেন যে সেলস ম্যানেজার শ্যামলের চরিত্রে আমি মানিয়ে যাব। যেহেতু শ্যামলও কর্পোরেট জগতের লোক, সে কারণেই ওঁর মনে হয়েছিল ব্যাপারটা ন্যাচারাল হবে।

আরও পড়ুন: ‘আমি বলেছিলাম, গুপী গাইনের চরিত্রে আমাকে নিন…’ 

অনেকেই মনে করেন, সীমাবদ্ধ আমার প্রথম ছবি, এ কথা কিন্তু ঠিক নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০) ছবিতে মুখ্য চরিত্র সিদ্ধার্থ (ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়)-র রাজনৈতিক গুরু নরেশের চরিত্রটি উনি আমাকে করতে বলেছিলেন।

তবে সে ছবিতে আমার মুখ দেখা যায়নি। যখন নরেশের ডাবিংয়ের সময় হলো, তখন আমি শহরে নেই। স্বয়ং সত্যজিৎ রায় আমার গলা ডাব করেছিলেন। পরে আমি বুঝেছিলাম, ইচ্ছে করেই ওই ছবিতে উনি আমার মুখ দেখাননি, কারণ পরের বড় চরিত্রের জন্য আমার কথা ভেবে রেখেছিলেন।

সত্যজিতের সেটের বৈশিষ্ট্য ছিল যে সেটাকে সেট বলে মনেই হতো না। এখন আর্ট ডিরেক্টররা বাড়াবাড়ি রকমের সাজসজ্জা করে ফেলেন। সত্যজিৎ রায় কখনও তা করেন নি। সত্যজিৎ রায় কখনও আতিশয্য ঘটাতেন না। তাঁর মহত্ত্ব ছিল, যে তাঁর শিল্প লুক্কায়িত শিল্প।

আরও পড়ুন: ‘সত্যজিৎ রায়ের মধ্যে একটা শিশুর সারল্য ছিল’

সত্যজিৎ রায় তাঁর নিজের ছবিতে ক্যামেরা অপারেট করতেন। ক্যামেরাম্যান হিসেবে তিনি ছিলেন পিওরিস্ট ও গোঁড়া। খুব জরুরি না হলে কখনও জুম লেন্স ও ট্র্যাকিং শট ব্যবহার করতেন না। ফিক্সড লেন্স ও ফ্রেম ব্যবহার করতেন। মনে করতেন, দর্শক যেন ক্যামেরা না বুঝতে পারেন। তার বদলে তাঁদের যেন দু'ঘণ্টা ধরে মনে হয় পর্দায় তাঁরা জীবন দেখছেন।

এডিটিংয়ের সময়ও তিনি নিখুঁতভাবে জানতেন, কোথায় একটা ফ্রেম কাটতে হবে। নিজের ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করতেন নিজেই। পৃথিবীতে এরকম হাতে গোনা কয়েকজন পরিচালকই পাওয়া যাবে, যাঁরা সত্যজিৎ রায়ের মত কার্যত ছবি তৈরির সমস্ত ক্ষেত্রে পারদর্শী।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Advertisment