Joyjit Banerjee, Ghost, Haunted House: ভূত আছে কি নেই, সেই বিতর্ক অন্তহীন। একদল বলেন তেনারা আছেন, আর একদল বলেন ভূত বলে কিছু হয়ই না। এই দ্বিতীয় দলেই পড়েন অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মাস কয়েক আগে এমন একটি হাড় হিম করা অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর যে মাঝপথে শুটিং বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। ঘটনাটি ঘটে গত বছর নভেম্বরে, মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে। হাজারদুয়ারির কাছেই, গঙ্গার পাড়-ঘেঁষা এই ছোট শহরের একটি পরিত্যক্ত জমিদারবাড়িতে ছিল মানস বসুর স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি 'অদ্ভুতুড়ে ভূত'-এর শুটিং। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে একটি একান্ত আলাপচারিতায় জয়জিৎ জানালেন, ওই ভূতের ছবির শুটিং করতে গিয়েই রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা হয় তাঁর।
''আমার সহ-অভিনেতা সৌমেন হাজারির বাড়ি জিয়াগঞ্জে। লোকেশন ঠিক করেছিল সৌমেনই। জমিদারবাড়িটা পাঁচশো বছরেরও পুরনো হবে বোধহয়। বাড়ির বেশ কিছু ঘর রয়েছে যেখানে দিনের বেলাতেও সূর্যের আলো ঢোকে না। আমি ভূতে এমনিতে বিশ্বাস করি না। কিন্তু প্রথম যখন ওই বাড়িতে যাই, দিনের বেলাতেও গা ছমছম করে উঠেছিল। কিন্তু গল্প অনুযায়ী শুটিংয়ের জন্য আদর্শ ছিল বাড়িটা। তাই আমরা আর অন্য কিছু নিয়ে ভাবিনি,'' জানালেন জয়জিৎ।
আরও পড়ুন: চোখে কাজল দিলেন অক্ষয়কুমার
ছবির শুটিংয়ের অনেকটা অংশ ছিল রাতে। ইউনিট খুবই ছোট। সবাই ওই বাড়িতেই সন্ধ্যা থেকে শুটিংয়ের তোড়জোড় শুরু করে দেন। জয়জিতের ভূতের অভিজ্ঞতাটা ঘটল সেদিন রাতেই। বাড়ির একটি বেশ বড় ঘরে চলছে শুটিংয়ের আয়োজন। পরিচালক, ডিওপি শট নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন একটি কোনায়। বাকিরা একটু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে রয়েছেন ঘরের বিভিন্ন প্রান্তে। জয়জিৎ বসেছিলেন একদিকে, একা। তাঁর কয়েক হাত দূরে বসেছিলেন ইউনিটের দু'জন। অভিনেতা জানালেন, ভূতের আক্রমণ নাকি প্রথম তখনই ঘটে!
''আমার হঠাৎ মনে হলো, পিঠে দু'বার টোকা দিয়ে কেউ ডাকল। আমি নিজের মনেই বললাম একবার, 'কে রে'। ভাবলাম ইউনিটেরই কেউ মজা করছে। তার পরে আরও একবার। দ্বিতীয়বারের পরে সন্দেহ হল, তাও বসে ছিলাম। তৃতীয়বার টোকা পড়তেই পিছন ফিরে তাকে এক ঘা দেব বলে তাকাতেই... আমার পিছনে কেউ নেই, জেট ব্ল্যাক অন্ধকার...'', বলে চলেন জয়জিৎ, ''ইউনিটের সবাই মজা করতে শুরু করল, আমি কী করব বুঝতে পারছি না। ভাবলাম এটা নিশ্চয়ই আমার মনের ভুল। ভয় থেকে হচ্ছে। তার কিছুক্ষণ পরে আবার টের পেলাম। একটা সিঁড়ি দিয়ে উঠে অন্য একটি ঘরে যাচ্ছি। আমার আগে একজন, আমার পিছনেও একজন। আমার মনে হচ্ছে কেউ ঠিক আমার গা ঘেঁষে উঠছে আমার সঙ্গে, আমাকে যেন ফলো করছে।''
আরও পড়ুন: বাংলায় প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার
এর পরেই পরিচালক মানস বসুকে জয়জিৎ বলেন, অবিলম্বে শুটিং বন্ধ করে হোটেলে ফিরে যেতে। কিন্তু পরিচালক রাজি হন নি। জয়জিৎ জানালেন, ওই ভূতের টোকা তার পরেও তিনি অনুভব করেন। একবার তো মনে হয় কেউ যেন তাঁর হাত ধরে টানছে। অদ্ভুতভাবে ইউনিটের অন্য কারও এমন কোনও অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি হয় নি। ''আমাদের ডিরেক্টর বলল, 'নিশ্চয়ই এখানে কোনও জমিদারের মেয়ের অপঘাতে মৃত্যু হয়েছিল। তোকে তার পছন্দ হয়েছে।' সবাই হাসাহাসি করেছে কিন্তু এরকম হাড় হিম করা ব্যাপার কখনও হয় নি আগে আমার সঙ্গে,'' বলেন জয়জিৎ।
ওই রাতে তার পরে তিনি প্রায় ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলেন পরিচালকের। ভোরবেলা শুটিং শেষ করে হোটেলে ফিরে শান্তি। যে শর্ট ফিল্মটির জন্য জিয়াগঞ্জের ওই পোড়ো বাড়িতে যাওয়া, সম্প্রতি ওই ছবির ট্রেলারটি মুক্তি পেয়েছে 'একটু ফোড়ন' ইউটিউব চ্যানেলে। আগামী সপ্তাহেই মুক্তি পাবে ওই ভূতের ছোট ছবি। 'একটু ফোড়ন' ইউটিউব চ্যানেলটি আত্মপ্রকাশ করেছে এবছর পয়লা বৈশাখে। ওয়েব-দর্শকের জন্য নানা ধরনের ভিডিও সিরিজ রয়েছে এই চ্যানেলে। তার মধ্যে কোনওটি ম্যাজিক শো, কোনওটি প্র্যাঙ্ক ভিডিও, আবার ছোট ছবিও রয়েছে। এই ভূতের ছবিতে জয়জিৎ ছাড়াও অভিনয় করেছেন উত্তম কুমার দাস, দেবব্রত সামন্ত ও সৌমেন হাজারি।
ছবিটির প্রযোজক জয়জিৎ নিজেই। অভিনেতা-প্রযোজক জানালেন, এই অভিজ্ঞতার পরেই একটি বিশেষ প্রকল্প নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন তিনি - বাংলার প্রতিটি প্রান্তে থাকা ভূতের বাড়ি নিয়ে একটি সিরিজ। তবে সেটি তথ্যচিত্র আকারে হবে নাকি 'অদ্ভুতুড়ে ভূত'-এর মতোই ভূতের ছোট ছবি হবে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি।