Advertisment
Presenting Partner
Desktop GIF

শোভাবাজার রাজবাড়ির জামাই পদ্মনাভ, শোনালেন ও বাড়ির পুজোর গল্প

Sovabazar Rajbari: রাজকৃষ্ণ দেবের বাড়ির পুজোয় সিঁদুরখেলা হয় না, কুমারী পুজোও হয় না। ২২৯ বছরের এই পুজোর নানা কথা জানালেন চিত্রনাট্যকার-অভিনেতা পদ্মনাভ দাশগুপ্ত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Actor screenwriter Padmanabha Dasgupta shares Sovabazar Rajbari Durga Puja story

পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। ডানদিকে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে রাজবাড়ির পুজোয়। ছবি: সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল থেকে

Sovabazar Rajbarir Pujo: কলকাতার যে বনেদী বাড়ির পুজোগুলি বার বার দেখেও সাধ মেটে না, ফিরে ফিরে প্রতি বছর দেখতে ইচ্ছে করে, সেই তালিকার প্রথম সারিতেই রয়েছে শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো। শোভাবাজারের গোপীগগন দেব ও রাজকৃষ্ণ দেব, দুই বাড়ির পুজোই সমান বিখ্যাত তবে প্রথমটি আরও প্রাচীন। রাজকৃষ্ণ দেবের পরিবারের জামাই, বিশিষ্ট চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা পদ্মনাভ দাশগুপ্ত শোনালেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির পুজোর গল্প।

Advertisment

''রাজা নবকৃষ্ণ দেবের দুই সন্তান। প্রথম সন্তান গোপীমোহন ছিলেন দত্তকপুত্র। পরে তাঁর নিজের সন্তান রাজকৃষ্ণ দেবের জন্ম। রাজকৃষ্ণের জন্মের পরে নবকৃষ্ণ দেব গোপীমোহনকে দেন শোভাবাজারের বাঘওলা বাড়িটি। আর রাজকৃষ্ণের জন্য পাশেই আর একটি প্রাসাদ তৈরি করেন'', বলেন পদ্মনাভ, ''বাঘওলা বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু হয় ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের কিছু পরে। আর রাজকৃষ্ণ দেবের প্রাসাদে ১৭৯০ সালে পুজো শুরু হয়। আমি ওই বাড়িরই জামাই। এবছর ওই পুজো ২২৯ বছরে পড়ল।''

Actor screenwriter Padmanabha Dasgupta shares Sovabazar Rajbari Durga Puja story স্ত্রী কৃষ্ণ লোপামুদ্রা, ছেলে প্রাচ্যদীপ ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাজবাড়ির পুজোতে। ছবি: পদ্মনাভ দাশগুপ্তের ফেসবুক পেজ থেকে

আরও পড়ুন: শোভাবাজারের মিত্র বাড়ির বউ সঙঘশ্রী! শোনালেন ৩৭২ বছরের পুজোর গল্প

শোভাবাজার রাজকৃষ্ণ দেবের বাড়িতে প্রতিমাকে কন্যা রূপে পুজো করা হয়। তাই এই বাড়িতে কুমারী পুজো হয় না। আর ঠাকুর বিসর্জনের আগে প্রতিমার কনকাঞ্জলির প্রথা রয়েছে। পদ্মনাভ জানালেন, ''ঠাকুরবরণের সময় বাড়ির কোনও বয়োজ্যেষ্ঠা মহিলা প্রতিমার পিছনে দাঁড়ান। আর প্রতিমার হয়ে পুরোহিত কনকাঞ্জলি দেন তাঁর ঝুলিতে। এই বাড়িতে সিঁদুরখেলারও পাট নেই।''

এই বাড়ির প্রতিমা বংশপরম্পরায় বানানো হয় এবং পুরোহিতও বংশপরম্পরাতেই পুজো করেন। বেশিরভাগ বনেদী বাড়ির মতোই এবাড়িতেও রথের দিনে কাঠামোতে মাটি পড়ে। সপ্তমীতে সোনার ছাতা করে কলাবউকে স্নান করাতে নিয়ে যাওয়া হতো একটা সময়। এখনও এই বাড়ির কলাবউ স্নান কলকাতার বাঙালির কাছে একটি বিশেষ দ্রষ্টব্য।

Actor screenwriter Padmanabha Dasgupta shares Sovabazar Rajbari Durga Puja story বাঁদিকে রাজবাড়ির ঠাকুরদালান ও ডানদিকে প্রতিমা। ছবি সৌজন্য: পদ্মনাভ দাশগুপ্ত

আরও পড়ুন: টাটকা মাছের ঝালই মা দুর্গার ভোগ! অভিনেত্রী ত্বরিতার বাড়ির পুজোর গল্প

''আগে রূপোর রাংতা দিয়ে তৈরি হতো দেবীর পোশাক। আর সিংহকে পুরোপুরি রূপোর পাতে মুড়ে দেওয়া হতো। প্রতিমার এই সাজ আসত জার্মানি থেকে, আর যেহেতু ডাক মারফত আসত, সেই কারণেই ডাকের সাজ নামকরণ। এই প্রতিমার চালচিত্রের সামনে চিকের মতো একটি পর্দার মতো ঝোলানো হয়, যাকে বলা হয় জগজগা। যে সময়ে এই পুজো শুরু, সেই সময়ের রক্ষণশীল পরিবারগুলিতে বাড়ির মেয়েরা বাইরের লোকের সামনে আসতেন না। কোনও অনুষ্ঠানে তাঁরা অংশ নিলেও, তাঁদের একটি বিশেষ অংশে রেখে, চিক ঝুলিয়ে দেওয়া হতো, যাতে আড়াল হয়। এই বাড়িতে যেহেতু প্রতিমাকে কন্যা রূপে পুজো করা হয়, তাই তাঁর সামনেও একটি আড়ালের ব্যবস্থা। চকচকে একটি পর্দার মতো জিনিস, সেখান থেকেই জগজগা নামটি এসেছে'', বলেন পদ্মনাভ।

পুজোয় বাঈনাচ হতো। ১৯৪০-এ শেষ বাইনাচ হয় বলে জানালেন লেখক-অভিনেতা। সম্ভবত সেবার পারফর্ম করেছিলেন গহরজান। পদ্মনাভ জানান, ''১৭৫৭ সালে যে প্রথম পুজো হয়, সেই পুজোর অতিথি ছিলেন ক্লাইভ ও ওয়ারেন হেস্টিংস। সেই সময় নাচিয়েদের বলা হতো nautch girl। বানানটা এরকমই অদ্ভুত। প্রথম পুজোতে নিকি নামের এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বাঈজি এসেছিলেন বলে শোনা যায়। ''

Actor screenwriter Padmanabha Dasgupta shares Sovabazar Rajbari Durga Puja story ভাসানের পথে রাজবাড়ির এই প্রজন্মের মহিলা সদস্যরা।

পুজো হয় শাক্তমতে। তিন দিন পাঁঠাবলি আর নবমীতে চালকুমড়ো-জাতীয় আনাজ বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে। তবে এবাড়িতে অতিথিদের অন্নভোগ দেওয়া হয় না। তার পরিবর্তে বাড়িতে ভিয়েন বসিয়ে বানানো লাড্ডু, গজা, সিঙাড়া বানানো হয়, সেটাই মায়ের ভোগ। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের উদ্যোগে যে বনেদী বাড়ির ট্যুরটি হয় প্রত্যেক বছর, সেই ট্যুরের অতিথিরা অনেকেই পুজোর দিনে এই বাড়িতে লাঞ্চ করেন। সেই ব্যবস্থাপনা সবটাই সরকারী দফতরের কিন্তু সেখানে বাড়ির সদস্যরাই পরিবেশন করেন।

Actor screenwriter Padmanabha Dasgupta shares Sovabazar Rajbari Durga Puja story মাঝগঙ্গায় নৌকা করে ঠাকুর বিসর্জন। ছবি সৌজন্য: পদ্মনাভ দাশগুপ্ত

এবাড়ির সন্ধিপুজোতে আগে কামান দাগা হতো। এখন দুটি ব্ল্যাংক ফায়ার করা হয় প্রথমে ও শেষে। আরও একটি প্রথা রয়েছে এই বাড়িতে, যা অন্যান্য বেশ কিছু বনেদী বাড়িতেও দেখা যায়। ''বিসর্জনের সময় দুটি নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হতো আগে। মনে করা হয় যে নীলকণ্ঠ পাখিগুলি কৈলাসে গিয়ে মহাদেবকে জানাবে যে দেবী ফিরছেন। কিন্তু বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত আইনের কারণে এখন আর আসল পাখি ওড়ানো হয় না। তার বদলে মাটি দিয়ে পাখি গড়ে, বিসর্জনের ঠিক আগে সে দুটিকে গঙ্গায় ফেলে দেওয়া হয়'', বলেন পদ্মনাভ। পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পুজোর অনেক রীতিতেই পরিবর্তন এসেছে তবে আগের মতোই এখনও নৌকো করে মাঝগঙ্গায় হয় প্রতিমা বিসর্জন।

Durga Puja 2019 Bengali Actor
Advertisment